১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল তারিখটি ইতিহাসের পাতায় একটি মর্মান্তিক অধ্যায় হয়ে রয়েছে। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে তলিয়ে গিয়েছিল টাইটানিক। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৫০০ জন যাত্রী। হিমবাহের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটলেও অনেকে মনে করেন টাইটানিক ডুবে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এক মমির অভিশাপ।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, উইলিয়াম টি স্টিড নামে এক যাত্রী টাইটানিকে পাড়ি দিয়েছিলেন। যাত্রার সময় জাহাজের অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে ভাব জমাতে তাঁদের নাকি একটি গল্প শুনিয়েছিলেন উইলিয়াম।
উইলিয়াম নাকি যাত্রীদের জানিয়েছিলেন যে টাইটানিকে একটি মমি রয়েছে। জাহাজের এক যাত্রীই নাকি মমিটি কিনে নিয়েছেন। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর এই কথা লোকমুখে ছড়িয়ে যায়। অনেকে মনে করেছিলেন যে, জাহাজের ভিতর মমি ছিল বলেই তার অভিশাপে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আবার অনেকের দাবি, জাহাজের এক যাত্রীর সংগ্রহে প্রচুর প্রাচীন জিনিসপত্র ছিল। তাঁর সংগ্রহে ছিল একটি মমিও। আমেরিকার একটি যাদুঘরে সেই মমিটি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।
টাইটানিকে থাকা মমিটি নাকি ইজিপ্টের প্রাচীন দেবতা আমুনের মন্দিরের এক ভক্তের। এই মমির অভিশাপেই নাকি টাইটানিক ডুবে গিয়েছিল বলে কানাঘুষো শোনা যায়।
টাইটানিকের দুর্ঘটনার নেপথ্যে যে মমির অভিশাপ রয়েছে সেই মমিটির আসল কাহিনি একেবারে ভিন্ন। মমিটি মিশরের প্রাচীন দেবতা আমুনের এক ভক্তেরই বটে। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই মমিটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।
১৬২ সেন্টিমিটার লম্বা মমির বাক্সটি ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দান করেছিলেন লন্ডনের হল্যান্ড পার্কের বাসিন্দা ওয়ারউইক হান্ট। উচ্চমানের কাঠ এবং প্লাস্টার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মমির বাক্সটি।
মমির মুখটি ছিল এক মহিলার। বাক্সের উপর হাতের আঙুলগুলি এমন ভাবে খোদাই করা হয়েছিল, যাতে মমির দেহটি সুরক্ষিত থাকে।
মমির বাক্সের গায়ে মহিলার নামোল্লেখ করা না থাকলেও মমির কাঠামোটি যে ধাঁচে তৈরি করা হয়েছিল, তা দেখে অনুমান করা যায় যে, ওই মহিলা ছিলেন উচ্চবংশীয়।
মিশরের প্রাচীন দেবতা আমুনের মন্দিরে মাঝেমধ্যেই সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হত। সে সব অনুষ্ঠানে যে মহিলারা অংশগ্রহণ করতেন তাঁদের জীবনাবসান হলে যে ভাবে মমির বাক্স তৈরি করা হত, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা মমির বাক্সের গঠনও ঠিক তেমন ছিল।
৯৫০ থেকে ৯০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে তৈরি করা হয়েছিল ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মমিটি। ১৯৯০ সাল থেকে মমিটিকে মিউজিয়ামের ‘ফার্স্ট ইজিপশিয়ান রুম’-এ রাখা হয়েছিল যাতে পর্যটকেরা তা দেখতে পান।
একাংশের দাবি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে মমি অন্যত্র সরানো হয়েছিল বলে জানা যায়। তার পর আবার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে তা ফিরিয়ে আনা হয়।
১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রদর্শনী উপলক্ষে এবং ২০০৭ সালে তাইওয়ানের একটি সাংবাদিক বৈঠক উপলক্ষে মমিটিকে মিউজিয়াম থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বার্টরাম ফ্লেচার রবিনসন নামে এক সাংবাদিক মমির ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কানাঘুষো শোনা যায় যে, এই মমি যে অভিশপ্ত, তা নাকি বুঝতে পেরেছিলেন বার্টরাম। কিন্তু তাঁর গবেষণা সংক্রান্ত কাজ প্রকাশ পাওয়ার আগেই মারা যান বার্টরাম।
বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ৬২ নম্বর ঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মমিটি। তবে এই মমি আদৌ অভিশপ্ত কি না, সেই রহস্যের উদ্ঘাটন এখনও হয়নি।