ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে উপার্জন এবং সাফল্যের ভিত্তিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে অম্বানী পরিবার। বাণিজ্যক্ষেত্রের পাশাপাশি তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের দিকেও সকলের নজর থাকে। মুকেশ অম্বানী এবং নীতা অম্বানীর প্রেমকাহিনিও বহুল চর্চিত। তবে, মুকেশের জীবনসঙ্গিনী হওয়ার সুযোগ যে নীতা প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন, তা অনেকের অজানা।
নীতাকে প্রথম পছন্দ করেছিলেন মুকেশের বাবা ধীরুভাই অম্বানী এবং মা কোকিলাবেন অম্বানী। একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নীতাকে প্রথম দেখেছিলেন তাঁরা। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চে নেচেছিলেন নীতা।
নীতার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ধীরুভাই এবং কোকিলাবেন। পুত্র মুকেশের জন্য নীতার চেয়ে যোগ্য জীবনসঙ্গিনী যে আর কেউ হতে পারে না, তা প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলেন তাঁরা।
ধীরুভাই সিদ্ধান্ত নেন, নীতার সঙ্গেই মুকেশের বিয়ে দেবেন। নীতার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়াও শুরু করেন ধীরুভাই। তিনি জানতে পারেন, দলাল পরিবারের কন্যা নীতা।
নীতার বাড়ির ফোন নম্বর জোগাড় করে নীতার বাবা রবীন্দ্রভাই দলালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন ধীরুভাই। ফোন করার পর রিংয়ের আওয়াজও শুনতে পান ধীরুভাই। ও পার থেকে রবীন্দ্রভাইয়ের কণ্ঠ শোনার আশায় ছিলেন মুকেশের বাবা।
কিন্তু পুরুষকণ্ঠের পরিবর্তে ও পার থেকে ভেসে আসে এক মহিলার কণ্ঠ। মহিলাকে নিজের পরিচয় দেন তিনি। কিন্তু পরিচয় দেওয়ার পর মহিলা সরাসরি বলে দেন যে এমন পরিচয় দিয়ে যেন আর ফোন না করেন তিনি। তার পর ধীরুভাইয়ের ফোন কেটে দেন ওই মহিলা।
ফোন কেটে দেওয়ার ঘটনায় অবাক হয়ে যান ধীরুভাই। আসলে তাঁর ফোন ধরেছিলেন নীতা। ধীরুভাই ফোন করেছেন শুনে বিশ্বাসই করতে পারেননি নীতা।
নীতা ভেবেছিলেন, ধীরুভাইয়ের মতো এত বড় মাপের শিল্পপতি হঠাৎ নীতার বাড়িতে ফোন করতে যাবেন কেন? নীতা নিশ্চিত ছিলেন যে, অন্য কেউ মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ফোন করে মশকরা করছেন। তাই কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেন নীতা।
প্রথম ফোনে কথা না হওয়ায় আবার একই নম্বরে যোগাযোগ করেন ধীরুভাই। নীতাই আবার সেই ফোন ধরেন। ধীরুভাই দ্বিতীয় বার নিজের পরিচয় দিলে নীতু কড়া ভাষায় কথা শুনিয়ে দেন তাঁর হবু শ্বশুরকে।
নীতা বলেন, ‘‘যদি আপনি ধীরুভাই অম্বানী হন, তা হলে আমি এলিজাবেথ টেলর।’’ মেজাজের সুরে এই কথা বলে ধীরুভাইয়ের ফোন দ্বিতীয় বারও কেটে দেন নীতা।
নীতা আরও নিশ্চিত হয়ে যান যে, ‘প্র্যাঙ্ক কল’ ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। এলিজাবেথ পঞ্চাশ-ষাট দশকের জনপ্রিয় ব্রিটিশ অভিনেত্রী ছিলেন। ফোনের ও পারে থাকা অচেনা পুরুষকে জব্দ করার জন্য নিজেও মিথ্যা পরিচয়ের আশ্রয় নেন নীতা।
পর পর দু’বার ফোন কেটে যাওয়ার পরেও ধৈর্য হারাননি ধীরুভাই। আবার দলাল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তবে এ বার ফোনের ও পার থেকে মহিলাকণ্ঠের বদলে শোনা যায় এক পুরুষকণ্ঠ। ধীরুভাইয়ের তৃতীয় ফোনটি ধরেছিলেন নীতার বাবা রবীন্দ্রভাই।
ফোনে পরিচয় আদানপ্রদান করেন ধীরুভাই এবং রবীন্দ্রভাই। তার পর ফোন করার আসল উদ্দেশ্যও জানালেন ধীরুভাই। পুত্র মুকেশের জন্য যে তিনি নীতাকে পছন্দ করেছেন তা রবীন্দ্রভাইকে জানান ধীরুভাই।
ধীরুভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান নীতার বাবা। তার পর নীতার বাড়িতে পর পর তিন বার সপরিবারে যান ধীরুভাই। মুকেশের সঙ্গে নীতার প্রেমকাহিনির শুরু সেখান থেকেই।
মুকেশ এবং নীতার পরিচয় হওয়ার পর মাঝেমধ্যেই একান্তে সময় কাটানোর জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়তেন দু’জনে। সেই সময় স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নীতা।
মুকেশের সঙ্গে সময় কাটানোর পর তাঁকে ভালবেসে ফেলেন নীতা। অন্য দিকে মুকেশও তাঁর মন দিয়ে ফেলেছিলেন নীতাকে। এক দিন লং ড্রাইভে যাওয়ার পথে নীতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মুকেশ।
মুকেশের প্রস্তাব আর ফেরাতে পারেননি নীতা। ১৯৮৫ সালে মুকেশের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি।