মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার— ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশে। সহাবস্থান করে চলেছে বছরের পর বছর। কোনও বিরোধ নেই। তেমনই এ দেশের বহু মন্দিরে শুধু ঈশ্বর নন, পূজিত হয় প্রাণী থেকে উদ্ভিদ। তেমনই এক মন্দির রয়েছে কর্নাটকে, যেখানে পূজিত হয় সারমেয়ের বিগ্রহ।
কর্নাটকের রামনগর জেলায় চান্নাপাটনার অগ্রহারা ভালাগেরেহাল্লি গ্রামে রয়েছে ওই মন্দির। বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। সেই মন্দিরে রয়েছে দুই সারমেয়ের বিগ্রহ। মন্দিরে নিয়মিত পুজো পায় তারা। কী ভাবে এই পুজো চালু হল, তার নেপথ্যে রয়েছে এক গল্প।
মনে করা হয় দেবী বীরামাস্তি কেম্পাম্মার রক্ষক হল এই দুই সারমেয়। অগ্রহারা ভালাগেরেহাল্লি গ্রামের মানুষেরা মনে করেন, এই দুই সারমেয়ের পুজো করলে ভক্তদের সমস্যার সমাধান হয়।
স্থানীয়েরা বলেন, এই মন্দিরে পুজো করে গিয়ে নিজের কাজের সময় ভক্তেরা যদি সারমেয়দের কথা মনে করেন, তা হলে তাঁদের কার্যসিদ্ধি হয়।
এই গ্রামে কারও বাড়িতে চুরি হলে এই মন্দিরে এসে পুজো দেন তাঁরা। মনে করেন, চোরকে শাস্তি দেবে এই সারমেয়রা।
প্রতি সপ্তাহে দু’দিন ধুমধাম করে মন্দিরে পুজো হয় এই সারমেয়ের বিগ্রহের। বৃহস্পতি এবং রবিবার পুজো করা হয় তাদের। নিবেদন করা হয় ফল এবং ফুল।
এই সারমেয়কে পুজোর আগে প্রথা মেনে দেবী বীরামাস্তি কেম্পাম্মার পুজো করা হয়। ভোগ নিবেদন করা হয়। তার পরেই তাঁর রক্ষকদের পুজো করা হয়।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, কার্যসিদ্ধির পর এই সারমেয়দের মনে না রাখলে তারা নাকি প্রতিশোধ নেয়। উপদ্রব করে ভক্তদের উপর। রাস্তাঘাটে নাকি বিরক্ত করে।
এমনিতে এই গ্রামের মানুষ সারমেয়দের বিশেষ শ্রদ্ধা করেন। তাদের কখনও উচ্ছিষ্ট খেতে দেন না। যদি কেউ কখনও সে রকম করেন, তা হলে তিনি নাকি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন।
কখনও গ্রামের কোনও বাসিন্দা নিজের পোষ্য সারমেয়ের যত্নআত্তি করতে না পারলে তাকে মন্দিরের কাছে ছেড়ে দিয়ে যান। অন্য কেউ সেই সারমেয়ের দেখভালের দায়িত্ব নেন। পারলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখেন।
২০১০ সালে সারমেয়ের বিগ্রহ রাখা এই মন্দির তৈরি করেছিলেন রমেশ নামে এক ব্যবসায়ী। তার পর থেকে বছরে বছরে এর ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল, তার নেপথ্যে রয়েছে এক গল্প। কথিত, হঠাৎই এক দিন গ্রাম থেকে হারিয়ে যায় দু’টি কুকুর। দিন কয়েক পর গ্রামের এক বাসিন্দাকে স্বপ্ন দেখান দেবী বীরামাস্তি কেম্পাম্মা। স্বপ্নে তিনি হারানো দুই কুকুরের জন্য একটি মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন।
দেবী জানিয়েছিলেন, ওই দুই সারমেয় তাঁর খুব প্রিয় ছিল। তাই গ্রামরক্ষার জন্য তাদের নিযুক্ত করতে চান তিনি।
দেবীর ইচ্ছা মেনে নির্মাণ করা হয় মন্দির। আজও সেখানে পুজো হয়ে চলেছে দুই হারানো সারমেয়ের। শুধু এ গ্রামেরই নন, দূর-দূর থেকে এখানে পুজো দিতে আসেন বহু ভক্ত।
এমনিতে চান্নাপাটনা কাঠের খেলনার জন্য বিখ্যাত। সেখানকার অগ্রহারা ভালাগেরেহাল্লি গ্রামে কাঠের খেলনা কেনার পাশাপাশি পর্যটকেরা অন্তত এক বার এই সারমেয়ের মন্দিরে ঢুঁ দেনই। অনেকেই বিগ্রহের কাছে মানত করে যান নিজেদের নিরাপত্তা। ছবি: সংগৃহীত