১৯৮৩ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দুই বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য সন্দীপ পাতিল ও সৈয়দ কিরমানি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তার পর একসঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা। নায়িকা ছিলেন আশির দশকের শীর্ষস্থানীয় নায়িকা পুনম ধিল্লোঁ। ১৯৮৫ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবিটির নাম ছিল ‘কভি অজনবি থে’। বক্স অফিসে ছবিটি চূড়ান্ত ভাবে ফ্লপ করে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন দেবশ্রী রায়ও।
১৯৯০ সালে ‘অব্বল নম্বর’ নামে একটি ছবি তৈরি করেন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক দেব আনন্দ। ছবিটি তৈরি হয়েছিল ক্রিকেটের পটভুমিকায়। অভিনয় করেছিলেন আদিত্য পাঞ্চোলি, আমির খান এবং একতা বহল। আমির তখন ভারতীয় সিনেমার উঠতি নক্ষত্র। তাঁর প্রথম ছবি ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবিটি হিট হওয়ার পর আমিরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল বলিউড। কিন্তু, ক্রিকেট বিষয়ক এই ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।
১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অব্বল নম্বর’ সুপার ফ্লপ। তা সত্ত্বেও ২০০১ সালে ক্রিকেট বিষয়ক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আমির খান। ‘লগান’-এ শুধু অভিনয় নয়, ছবিটি প্রযোজনাও করেছিলেন তিনি। যদিও, ছবিতে ক্রিকেটকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ১৮৯৩ সালের পরাধীন ভারতে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় কৃষকদের এককাট্টা হয়ে অসম লড়াই দর্শকদের মন কেড়ে ছিল। ক্যাপ্টেন রাসেলের বিরুদ্ধে ভুবন রূপী আমির খানের নেতৃত্বে কৃষকদের ক্রিকেট মাঠের লড়াই দেখতে বারবার দর্শকরা ভিড় জমিয়েছিলেন সিনেমা হলে। ছবিটি সুপারহিট হওয়ার পাশাপাশি, ভারতীয় সিনেমার তরফে অস্কারেও পাঠানো হয়েছিল। পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ‘লগান’ শুধু ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সফল ছবিই নয়, এক মাইলফলকও বটে। ক্রিকেটকে বিষয় করে তৈরি হয়েও ব্যতিক্রমী একটি ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সফল ছবিও।
২০০২ সালে সুনীল শেট্টির অনুরোধে সিনেমায় অভিনয় করেছেন ক্রিকেটার বিনোদ কাম্বলী। ‘অনর্থ’ নামে ছবিটিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন বিনোদ। যদিও সেই সময় তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। সঞ্জয় দত্তকে মুখ্য চরিত্রে রেখেও ছবিটি ফ্লপ হয় বক্স অফিসে।
২০০৩ সালের পুজোর সময় মুক্তি পেয়েছিল অভিনেতা সুনীল শেট্টি প্রয়োজিত ছবি ‘খেল’। ছবিতে সুনীল খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। একটি বিশেষ ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন সানি দেওল। ছবির নায়িকা ছিলেন সেলিনা জেটলি। নায়কের ভূমিকায় ছিলেন ক্রিকেটার অজয় জাডেজা। ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।
ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ২০০৯ সালে অজয় জাডেজা ও বিনোদ কাম্বলী একসঙ্গে ‘পল পল দিল কে সাথ’ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়।
২০০৪ সালে সলমন খান, অক্ষয় কুমার ও প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘মুঝসে শাদি করোগি’ ছবির ক্লাইম্যাক্সে দেখা গিয়েছিল কপিল দেব, জভাগাল শ্রীনাথ, হরভজন সিংহ, আশিস নেহরা, পার্থিব পটেল, ইরফান পাঠান-সহ একঝাঁক ক্রিকেটারকে। ছবিটি বক্স অফিসে সুপার হিট হয়। ছবিটির বিষয় অবশ্য ক্রিকেট ছিল না।
সুভাষ ঘাই ২০০৫ সালে তৈরি করেন ‘ইকবাল’। ছবির প্রযোজনা করলেও, ছবির পরিচালক ছিলেন নাগেশ কুক্কুনুর। মূক ও বধির একটি ছেলের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প গ্রহণ করেছিল ভারতীয় দর্শক। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নাসিরুদ্দিন শাহ, গিরিশ কারনাড, শ্বেতা প্রসাদ বসুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইকবালের চরিত্রে অভিনয় করেন শ্রেয়স তলপড়ে। প্রান্তিক পরিবারের সন্তান হয়েও, ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে ‘ইকবাল’ যেন পাশের বাড়ির ছেলে হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের কাছে। এটি একটি ব্যতিক্রমী ছবি, যা ক্রিকেট ও ক্রিকেটারকে ঘিরে তৈরি হয়েও সফল হয়। কপিল দেব নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে।
২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবি ‘ভিকট্রি’। ছবিটিতে নায়কের চরিত্রে হরমন বাওয়েজা এবং নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমৃতা রাও। এছাড়াও অভিনয় করেছিলেন অনুপম খের ও গুলশন গ্রোভার। ভারতীয় ক্রিকেটে বেটিং চক্রের কালো ছায়া নিয়ে তৈরি হয়েছিল ছবিটি। কিন্তু, ছবিতে চমক হিসেবে দেখা গিয়েছিল একঝাঁক ক্রিকেটারকে। ব্রেট লি, বিরাট কোহলি, সনৎ জয়সূর্য, চামিন্ডা ব্যাস, মাইক হাসি, রোহিত শর্মা, দীনেশ কার্তিক, অজন্তা মেন্ডিস, মুথইয়া মুরলীধরন, এবি ডিভিলিয়ার্স ছাড়াও আরও অনেকে। এতকিছুর পরও ছবিটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের এক নামজাদা ক্রিকেটারের অপহরণকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল ‘ঢিসুম’ ছবিটি। অভিনয় করেছিলেন জন আব্রাহাম, বরুণ ধাওয়ান, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ এবং অক্ষয় খন্না। ক্রিকেটারের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন শাকিব সেলিম। হিন্দি মশালা ছবির আদলে তৈরি ‘ঢিসুম’ বক্স অফিসে ফ্লপ করে। ২০১৬ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবিটিতে বিনোদনের রসদ থাকলেও সাফল্য ধরা দেয়নি।
২০১৬ সালে নীরজ পাণ্ডে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক তৈরি করেন। ধোনির চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করেন প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত। ক্রিকেটারের ওপর তৈরি এই ছবিটি ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতীয় বক্স অফিসে সুপারহিট হয় ছবিটি। এটি একটি ব্যতিক্রমী ছবি, যা ক্রিকেট ও ক্রিকেটারকে ঘিরে তৈরি হয়েও সফল হয়। ছবিটিতে সুশান্তের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন দিশা পটানি, কিয়ারা আডবাণী, অনুপম খের ও ভূমিকা চাওলা প্রমুখ।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় ‘সচিন দ্য বিলিয়নস ড্রিম’ ছবিটি। সচিন তেন্ডুলকরের জীবনের ওপর ভিত্তি করে ছবিটি তৈরি হয়েছিল একটু অন্য ভাবে। অন্য কোনও অভিনেতা নয়, নামভূমিকায় সচিনকে রেখেই ছবিটি তৈরি হয়েছিল তথ্যচিত্রের আদলে। সচিন ভক্তরাও টিকিট কেটে সিনেমা হল কিংবা মাল্টিপ্লেক্সে ছবিটি দেখতে যাননি। বক্স অফিসে ফ্লপ তকমা পেয়েছিল ছবিটি।
‘আজহার’! ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের বায়োপিকের নির্মাণ করেন টনি ও অ্যান্টনি ডি’সুজা। শোভা এবং একতা কপূরের প্রযোজনায় তৈরি ছবিটির পটভূমিকায় দেখানো হয়েছিল আজহারউদ্দিনের জীবনের বহু বিতর্কিত অধ্যায়। আজহারউদ্দিনের চরিত্রে অভিনয় করেন ইমরান হাশমি। তাঁর দুই প্রাক্তন স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন নার্গিস ফখরি এবং প্রাচী দেশাই। এ ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন লারা দত্ত, কুণাল কপূররা। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
১৯৮৩ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় পরিচালক কবীর খানের ছবি ‘৮৩’। চিত্র সমালোচকদের বাহবা কুড়োলেও ২০২১ সালের শীতে মুক্তি পাওয়া ছবিটি লাভের মুখ দেখেনি। এই ছবিতে ‘হরিয়ানা হ্যারিকেন’ কপিল দেবের চরিত্রে অভিনয় করে সকলের প্রশংসা পেয়েছিলেন রণবীর সিংহ। কপিলের স্ত্রীর চরিত্র রোমি দেবের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন।
সদ্য তাপসী পন্নু অভিনীত সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত মিতালি রাজের চরিত্রের উপর তৈরি ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে পরে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকের বাহবা কুড়িয়েছে ফিল্মটি।
হাজারো ব্যর্থতা সত্ত্বেও, বলিউড ক্রিকেট বিষয়ক ছবির তৈরির ওপর আস্থা হারায়নি। ফলস্বরূপ, সদ্য আন্তজার্তিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক তৈরি হচ্ছে। রুপোলি পর্দায় ঝুলনের চরিত্রে দেখা যাবে ক্রিকেটার বিরাট কোহলির স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে। ঝুলনের চরিত্রে অনুষ্কার করা নিয়ে ইতিমধ্যেই সিনেমহলে নেতিবাচক গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ নাম দিয়ে ছবি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।