লুট করা হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু তার মধ্যে ২ কোটি টাকা স্রেফ পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে বাধ্য হন ডাকাতের দল। অন্তত এমনটাই দাবি করেছিলেন অভিযুক্তেরা। অভিযুক্তদের দাবি অনুযায়ী, ভাগ্যের পরিহাসেই এই বিশাল অঙ্কের টাকা তাঁদের পুড়িয়ে দিতে হয়েছে।
২০১৬ সালের ঘটনা। সালেম-চেন্নাই এগমোর এক্সপ্রেস থেকে লুট হয়ে যায় নগদ ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা।
২০১৬ সালের ৮ অগস্ট সালেমের ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক থেকে ৩৪২ কোটি টাকা ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল চেন্নাইয়ের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে।
ট্রেনে উঠে ৩৪২ কোটির মধ্যে ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীর দল।
দু’বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিবি-সিআইডি দল মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলার একটি গ্যাংয়ের সাত জনকে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয়েছিল এই গ্যাংয়ের মাথা মোহর সিংহকেও।
গ্রেফতারের পর তদন্তকারী দলের আবেদনে সন্দেহভাজনদের মধ্যে পাঁচ জনকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় জেলা আদালত।
পুলিশের জেরার মুখে পড়ে অভিযুক্তরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেন এবং কী ভাবে তাঁরা এই ডাকাতির ছক কষেছিলেন, তা পুলিশকে জানান।
অভিযুক্তেরা পুলিশকে জানান, লুটের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধাচলম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন।
চিন্না সালেম এবং বৃদ্ধাচলম রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি কোনও জায়গায় তাঁরা চলন্ত ট্রেনের ছাদে ওঠে পার্সেল ভ্যানের মাথায় গর্ত করে ট্রেনে প্রবেশ করেন। এর পর কাঠের বাক্স ভেঙে নগদ টাকা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে চম্পট দেয় ডাকাতের দল।
ডাকাতির পর অভিযুক্তেরা মধ্যপ্রদেশ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে লুটের মাল সমেত নিজেদের গ্রামে চলে যান। গ্রামে পৌঁছে ওই টাকা তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভাগও করে নেন।
অভিযুক্তেরা পুলিশকে জানান, লুটের টাকার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি কেনেন অভিযুক্তেরা। ফূর্তি, আমোদ-প্রমোদ করতেও বেশ কিছু টাকা খরচ করেন তাঁরা।
পুলিশ তাদের বয়ান শুনে দেখে, প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার হিসাব পাওয়া গেলেও বাকি ২ কোটি টাকার হিসাব অভিযুক্তদের কাছে থেকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ এই বিষয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা পুলিশকে জানান, এই টাকা তাঁরা পুড়িয়ে দিয়েছেন। তবে পোড়ানোর কারণ শুনে হাঁ হয়ে যায় পুলিশ।
টাকা পুড়ানোর কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্তেরা পুলিশকে জানান, ২০১৬ সালের ৮ অগস্ট অর্থাৎ ডাকাতির ঠিক তিন মাস পরে কেন্দ্রের তরফে সমস্ত ৫০০ এবং ১০০০-এর নোট বাতিল করা হয়।
এর ফলে ডাকাতের দল মহাফাঁপরে পড়ে। নোটবন্দির কারণে এই টাকা খরচ করার কোনও উপায় ছিল না। বাতিল হয়ে যাওয়ায় ওই টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ালেও হাজতবাস অবশ্যম্ভাবী! অনেক ভেবে তাঁরা ঠিক করেন, এই টাকা তাঁরা পুড়িয়ে দেবেন।
যেমন ভাবা তেমনই কাজ। একটি নিরিবিলি জায়গা বেছে নিয়ে চুরি করা নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা পুড়িয়ে দেন ডাকাতদলের সদস্যেরা।
পুলিশ আধিকারিকরা তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে যান। পুলিশ আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ পেশ করার পর আদালতের তরফে তাঁদের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়।
পুলিশ আদালতে আরও জানিয়েছিল, এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হলেও এই ঘটনায় মোট ১৬ জন জড়িত ছিলেন।