শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাঙের আতঙ্কে থরহরি কম্প বাংলাদেশে। শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোচ্ছে এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশের বরিশালের কাছে তিনকোনা দ্বীপ ও সন্দ্বীপের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে এই সাইক্লোন।
হাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের বরিশাল থেকে ৩৯০ কিমি দূরে রয়েছে সিত্রাং।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। যার জেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী।
বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ‘প্রথম আলো’ সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দেশের ১৩টি জেলায় সবচেয়ে বেশি আঘাত হানতে পারে সিত্রাং।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, এই ১৩ জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, ফেনি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং বরিশাল।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার বহু বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রায় ৭৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিমি।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ওপার বাংলার তিন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ওই তিন বিমানবন্দরে সোমবার দুপুর ৩টে থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিমান পরিষেবা বন্ধ থাকবে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে মঙ্গলবার দুপুরের পর বিমান পরিষেবা চালু করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সন্ধ্যার পর জলোচ্ছ্বাস শুরু হতে পারে। চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালি, ফেনির নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরে পাঁচ থেকে আট ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার সকাল থেকেই খুলনায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার।
খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা এলাকার প্রায় ১৫ কিমি নদীর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি কয়রা উপজেলার প্রায় ১০ কিমি বাঁধেও ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে পটুয়াখালি নদীবন্দর। ওই নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতিতে সব নৌপথে ৬৫ ফুটের ছোট লঞ্চ-সহ সব ধরনের নৌ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলার ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যার পরই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের দাপট দেখা যেতে পারে উপকূলবর্তী এলাকায়। এই প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সিত্রাঙের অগ্রভাগ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে উপকূলের দিকে আঘাত হানবে।’’
মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ ওই বন্দরে ঢুকতে পারেনি।
সিত্রাং আসার আগে সব রকম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্রবল ঘূর্ণিঝড় কতটা তাণ্ডব চালাবে সেই আতঙ্কে কাঁপছেন পদ্মাপারের বাসিন্দারা।