ঘড়ির কাঁটা যত ঘুরছে, ততই এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মন্দৌস আছড়ে পরার মুহূর্ত। তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূলে এর প্রভাব পড়তে পারে। তামিলনাড়ুর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
তবে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগেই শক্তিক্ষয় হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। বৃহস্পতিবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল মন্দৌস। শুক্রবার শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
শুক্রবার মধ্যরাত ও শনিবার ভোররাতের মধ্যে পুদুচেরি ও শ্রীহরিকোটার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে মহাবলীপুরমের কাছে আছড়ে পড়বে মন্দৌস। ঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ থেকে ৭৫ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮৫ কিমি।
তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূলে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। তৎপর থাকতে বলা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, করাইকাল, অন্ধ্রপ্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর একাধিক এলাকায় স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বৃষ্টির জেরে পুদুচেরিতেও শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুদুচেরি সরকার। শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তাল সমুদ্র। চেন্নাইয়ে মেরিনা বিচ এলাকাতেও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামিলনাড়ুর ১০টি জেলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ১২টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্দৌসের প্রভাবে চেন্নাইয়ে বিমান পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে চেন্নাই বিমানবন্দরে ৪টি বিমান বাতিল করা হয়েছে। সকালের বহু বিমান দেরিতে উড়েছে।
চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য কাঠের র্যাম্প বানানো হয়েছিল। সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের জেরে তার একাংশ ভেঙে গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে চেন্নাই ও সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। যার জেরে চেম্বারমবক্কম ও পুন্দি জলাধারে জল বাড়ছে। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ওই দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
মন্দৌসের প্রভাব পড়তে পারে বেঙ্গালুরুতেও। সেখানে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে হাওয়া অফিস। কর্নাটকের উপকূলবর্তী এলাকায় ১১ ও ১২ তারিখ ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর অন্ধ্র সরকারও। সে রাজ্যে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। একাধিক জেলায় মন্দৌস নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। নেল্লোর, তিরুপতি, চিত্তোর জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
চেন্নাইয়ে ১৬৯টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবস্থা করা হয়েছে মোট ৮০৫টি পাম্পের। নিচু এলাকায় জল জমার আশঙ্কা রয়েছে। জমা জল সরাতে কাজে লাগানো হবে ওই পাম্পগুলি।
চলতি বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়টি হল মন্দৌস। এর আগে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রং।
তবে সিত্রঙের অভিমুখ বাংলাদেশের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। তাই কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে সে ভাবে ঝড়ের দাপট দেখা যায়নি। মন্দৌসেরও তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না বাংলায়।
ঘূর্ণিঝড় মন্দৌসের নাম রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। আরবি ভাষায় ‘মন্দৌস’ শব্দের অর্থ গয়না কিংবা অর্থ রাখার বাক্স। মাঝরাতে স্থলভাগে এলে ঘূর্ণিঝড় কী তাণ্ডব চালায়, সে নিয়েই আতঙ্কে ৩ রাজ্যের বাসিন্দারা।