পরমাণু বোমার হামলাও টলাতে পারবে না, এমন এক বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেছেন রুশ প্রযুক্তিবিদরা। সেই বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবারহাউজ়’।
টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্ক বছর তিনেক আগে ‘সাইবারট্রাক’ নামে অত্যাধুনিক একটি গাড়ি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই গাড়ির নকশা দেখেই ‘সাইবারহাউজ়’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রাশিয়ার ‘মডার্ন হাউজ় আর্কিটেকচার অ্যান্ড ডিজ়াইন’ সাইবারহাউজ় তৈরির পরিকল্পনা করেছে। তাদের দাবি, মহাপ্রলয়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও এই বাড়িটির কোনও ক্ষতি হবে না।
টেসলা কর্ণধার নিজে এসে এই সাইবারহাউজ়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হলে তা ইলন মাস্ক কিনেও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাইবারট্রাকের সঙ্গে সাইবারবহাউজ়ের মালিকও হবেন মাস্ক।
মূলত, বহিরাগত কোনও হামলার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশে সাইবারহাউজ় গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। রুশ সংস্থার প্রধান স্থপতি অ্যালেক্স উইজ়েভস্কি জানান, তাঁদের মনে হয়েছিল একটি সুসংগঠিত, সুরক্ষিত আশ্রয় তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে যে কোনও রকমের বহিরাগত হামলাকে প্রতিহত করা যাবে। সেই ভাবনা থেকেই সাইবারহাউজ়ের পরিকল্পনা।
সাইবারহাউজ়ের দেওয়াল মজবুত কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হবে। সঙ্গে থাকবে ইস্পাতের পুরু আস্তরণ। বাড়ির জানলা ও দরজার বাইরে যথেষ্ট ঢাল রাখা হবে। জানলায় বসবে ধাতব পাত।
নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সাইবারহাউজ়ে এয়ারলক ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সাইবারহাউজ় হবে তিনতলা একটি বাড়ি। এতে সাইবারট্রাক রাখার জন্য আলাদা গ্যারাজের ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ির একটি তলায় থাকবে বসবাসের ব্যবস্থা। এ ছাড়া, উপরের তলায় শস্য উৎপাদন এবং নীচের তলায় গুদামের বন্দোবস্ত করা হবে।
সাইবারহাউজ়ে মোট পাঁচটি শোওয়ার ঘর থাকবে। থাকবে একটি রান্নাঘর এবং একটি বড় বসার ঘর।
গ্যারাজ দিয়ে ঢুকে লিফ্টের ব্যবস্থাও থাকবে। সেই লিফ্টের মাধ্যমে সাইবারট্রাক দোতলায় তোলা যাবে।
মোট ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে সাইবারহাউজ় তৈরি করা হবে। আকারে তা হবে আমেরিকার এক-একটি বাড়ির পাঁচ গুণ।
পৃথিবীতে বড় কোনও যুদ্ধ শুরু হলে এই বাড়ি হবে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। পরমাণু বোমার আঘাতেও সাইবারহাউজ়ের কোনও ক্ষতি হবে না বলে দাবি করা হয়েছে।
বাড়িটি তৈরি করতে খরচ হবে আনুমানিক ৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৭ কোটি ১২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। খরচের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ি তৈরির পর তার রক্ষণাবেক্ষণেও প্রচুর টাকা খরচ হবে।
তবে আপাতত সাইবারহাউজ় শুধু পরিকল্পনাতেই রয়েছে। যে নকশা উদ্যোক্তারা প্রকাশ করেছেন, সেই অনুযায়ী বাড়িটি বানানো যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
টেসলার তৈরি বুলেটপ্রুফ সাইবারট্রাক বাজারে আনা হবে ২০২৩ সালে। ইতিমধ্যে সেই গাড়ি কেউ কেউ বুকও করে রেখেছেন বলে খবর। সাইবারট্রাকের কথা মাথায় রেখেই সাইবারহাউজ়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইবারহাউজ় তৈরি করা যায়, তবে তা হয়ে উঠবে প্রযুক্তির এক অন্যতম বিস্ময়।