Indian Economy

পদে পদে বিপদ ভারতীয় অর্থনীতির! চিনের থেকে আর্থিক বৃদ্ধি বেশি মনে হলেও সত্য আলাদা

বিশ্বের অর্থনীতি ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। রিপোর্ট প্রকাশ করে তেমনটাই জানাল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তারা জানাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের গড় অর্থনীতি ২.৬ শতাংশ হারে কমেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৬
Share:
০১ ২৬

বিশ্বের অর্থনীতি ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। রিপোর্ট প্রকাশ করে তেমনটাই জানাল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের গড় অর্থনীতি ২.৬ শতাংশ হারে কমেছে। সেই জায়গায় ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.২ শতাংশ হারে। চলতি অর্থবর্ষেও তা লাভের মুখ দেখবে বলেই জানাচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।

০২ ২৬

বিশ্ব ব্যাঙ্ক ছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও (আরবিআই) ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে একই কথা বলছে।

Advertisement
০৩ ২৬

ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট (আইডিইউ)-এর পর্যবেক্ষণ, বর্তমানে ভারত সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া প্রধান অর্থনীতি হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.২ শতাংশ হারে।

০৪ ২৬

আগামী দু’-তিন বছরও ভারতের অর্থনীতি উঠতির দিকে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। রিপোর্ট আরও জানাচ্ছে, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি সাত শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২৫-’২৬ এবং ২০২৬-’২৭ অর্থবর্ষেও তা সাত শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে।

০৫ ২৬

বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি যেখানে আট শতাংশের বেশি হারে, সেখানে চিনের অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩.৪ শতাংশ হারে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট এ-ও বলছে, বিগত কয়েক বছরে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। ফলে ফুলেফেঁপে উঠেছে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার।

০৬ ২৬

বর্তমানে ভারতের হাতে প্রায় ৬৭০১০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ এবং দেশের জিডিপির গড়ও ৮৯ শতাংশ থেকে কমে ৮২ শতাংশ হয়েছে।

০৭ ২৬

কিন্তু কী ভাবে কোভিড পরবর্তী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সক্ষম হয়েছে ভারত?

০৮ ২৬

রিপোর্ট অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে আবাসন ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতীয়দের বিনিয়োগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিডের পর অন্য দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক উন্নতি দেখেছে ভারতীয় রিয়্যাল এস্টেট সংস্থাগুলি।

০৯ ২৬

অন্য দিকে, কোভিড পরবর্তী সময়ে ভারতীয় বাজারে ভারতে তৈরি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ভারতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে । পণ্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো সহজ করেছে ভারতীয় রেল।

১০ ২৬

বিগত দু’বছরে ভারতে বর্ষা ভাল হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে চাষবাসও ভাল হয়েছে। সেই কারণেও ভারতীয় অর্থনীতি লাভের মুখ দেখেছে। আবার লোকসভা নির্বাচনের সময় দিন কয়েকের টালমাটাল অবস্থা দেখলেও ভারতের শেয়ার বাজারের অবস্থা বর্তমানে বেশ ভাল।

১১ ২৬

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় বিভিন্ন ব্যবসায় বর্তমানে বিনিয়োগ শুরু করেছে সরকারই। এই কারণে আখেরে লাভ হয়েছে অর্থনীতির। ভারত সরকারের বিনিয়োগের কারণে অনেকে ব্যবসা করতে এগিয়ে আসছেন । ব্যবসায়ীদের টাকা বাড়লে কর্মীদের বেতনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক দিকে যেমন বিনিয়োগ করা টাকা সরকার ব্যবসায়ীদের থেকে ফেরত পাচ্ছে, তেমনই কর্মীদের কর এবং বিভিন্ন পথে বিনিয়োগের লভ্যাংশও সরকারের হাতে যাচ্ছে।

১২ ২৬

কোভিডের পর থেকে ভারতে মুদ্রাস্ফীতি দফায় দফায় লাগামছাড়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বিভিন্ন সময়ে আকাশ ছুঁয়েছে। কিম্তু আগামী দু’-তিন বছরে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

১৩ ২৬

রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, কর বাবদ যে টাকা ভারত সরকারের হাতে আসে, তার পরিমাণও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। অর্থ আসবে বিনিয়োগ থেকেও। ফলে সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে লাভের মুখই দেখবে ভারতীয় অর্থনীতি।

১৪ ২৬

এ নিয়ে গর্বের অন্ত নেই ভারতীয়দের। ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি চিনের থেকে বেশি হওয়ার কারণেও ছাতি চওড়া হয়েছে অনেকের।

১৫ ২৬

কিন্তু সত্যিই কি ভারতীয় অর্থনীতি খুব সুরক্ষিত? ভারতের অর্থনীতি সাড়ে তিন লক্ষ কোটি ডলারের। সেখানে চিনের অর্থনীতি ১৭.৮ লক্ষ কোটি ডলারের। ফলে শতকরা হিসাবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি চিনের চেয়ে বেশি হলেও ভারতের থেকে অনেক বেশি অর্থ এসেছে চিনের কাছে।

১৬ ২৬

গত কয়েক বছরে বস্ত্রশিল্প, চামড়া এবং জুতো রফতানিতে চিনের রমরমা কিছুটা কমেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কমেছে তিন শতাংশ। এই সব শিল্পক্ষেত্রগুলি অদক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল। অদক্ষ শ্রমিকের দিক থেকে সেই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। আর তাতে লাভ হয়েছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলির।

১৭ ২৬

বস্ত্র রফতানির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান উপরের দিকে। কিন্তু সে দেশের টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগে ভারত যদি সেই ব্যবসা নিজেদের দিকে টানতে পারে, তা হলেও অর্থনৈতিক লাভ দেখবে ভারত। তবে আপাতত ভারত সে রকম কোনও পদক্ষেপ করেনি।

১৮ ২৬

রফতানির ক্ষেত্রেও ভারতের ঝুড়িতে বৈচিত্র আনতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওষুধের মতো কয়েকটি নির্দিষ্ট শিল্পের পণ্য কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে রফতানি করে ভারত। যদি কোনও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে রফতানিতে প্রভাব পড়ে, তা হলে প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতিতে। আর সেই কারণেই ভারতের রফতানি শিল্প আরও প্রসারিত করা উচিত বলে মত বিশেষজ্ঞদের। রফতানির ঝুড়ি বর্ণময় হলে তবেই ২০৩০ সালের মধ্যে ১ লক্ষ কোটি ডলার পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারবে ভারত।

১৯ ২৬

ভারতের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। আবার কৃষি এখনও বর্ষানি‌র্ভর। ফলে যদি বর্ষা ভাল না হয়, তা হলে ভারতের অর্থনীতি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অর্থাৎ, ভারতীয় অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর করছে বর্ষা ভাল বা খারাপ হওয়ার উপর।

২০ ২৬

ভারত সরকার কৃষকদের জন্য জায়গায় জায়গায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প তৈরি করার পরিকল্পনা করলেও তা এখনও সে ভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। এই পরিকল্পনা সফল হলে কৃষিক্ষেত্র থেকেই অনেক দূরে নিজেদের পণ্য পাঠাতে পারতেন কৃষকেরা। কিন্তু আপাতত তা হচ্ছে না। ফলে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ভারত দেখতে পারত, আদতে তার থেকে কম দেখছে।

২১ ২৬

আমেরিকার ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট’ থেকেও উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই রিপোর্ট বলছে, ভারতে তরুণদের সংখ্যা এখন বেশি। তা সবচেয়ে বেশি হবে ২০৪৮ সালে। এর পর তরুণের সংখ্যা কমবে। ২০৬২ সাল থেকে ভারতীয়দের ওই জনসংখ্যা ‘বুড়ো’ হয়ে যাবে। ‘বুড়ো’ হবে অর্থনীতিও।

২২ ২৬

অর্থাৎ, ভারতের কাছে ২৪ বছর রয়েছে। এখনই যদি ভারত বেশি পরিমাণ কাজের সুযোগ তৈরি করে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে না লাগায় তা হলে অর্থনীতির দিক থেকে পিছিয়েই থাকবে দেশ।

২৩ ২৬

গত বছর এবং চলতি বছরে ভারতের অর্থনীতি উন্নতি করলেও লক্ষণীয় যে, বিগত ২০ বছরে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি পেলেও এতে উৎপাদন খাতের পরিমাণ কিন্তু ১৬ শতাংশের বেশি হয়নি।

২৪ ২৬

ভারতের বেকারত্বের সমস্যাও অর্থনীতির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ভারতের শহুরে এলাকায় বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

২৫ ২৬

একটি রিপোর্ট বলছে, রাস্তা বন্ধ এবং টোল প্লাজ়া-সহ অন্যান্য কারণে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলি নিজেদের কর্মক্ষমতার থেকে ৬০ শতাংশ কম কাজ করতে পারছে। ফলে পরিবহণ খরচ দু’-তিন গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাকগুলি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারলে এই খরচ কমবে। পণ্যও সঠিক সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছবে। এর ফলে অর্থনীতি উপকৃত হবে।

২৬ ২৬

ফলে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অর্থনীতি নিয়‌ে গর্ব করার সময় এখনও ভারতের আসেনি। বরং এই সময় খামতি পূরণের দিকে নজর দেওয়ায়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement