হার্দিক পাণ্ড্যদের তোলা ২০০-র বেশি রানের লক্ষ্য তো ছিলই। সেই সঙ্গে ছিল বৃষ্টি। তবে সে সব বাধা টপকে আইপিএল ফাইনালের রাতে শেষ হাসি হেসেছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের হলুদবাহিনী। সোমবার রাতে আমদাবাদে আইপিএলের পঞ্চম ট্রফিটি তুলে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। সে জয়ের উৎসবে শামিল হয়েছিলেন মাহির দলের সদস্যদের সঙ্গিনীরাও। সিএসকে-র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ট্রফি হাতে তুলেছে মাহি-কন্যা জিভাও। তাকে সঙ্গ দিয়েছে রবীন্দ্র জাডেজার কন্যা নিধ্যানা।
বৃষ্টির জন্য আইপিএল ফাইনালের ওভারসংখ্যা ছেঁটে ১৫ ওভারের করা হয়েছিল। ২১৫-র বদলে ডাকওয়র্থ অ্যান্ড লুইস পদ্ধতিতে জয়ের ১৭১ রানের লক্ষ্যও এক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিএসকে-র। মোক্ষম সময়ে ৮ বলে ১৭ রানের অমূল্য ইনিংস খেলে দেন আইপিএলের আসরে নিজের শেষ ম্যাচ খেলা অম্বাতি রায়ডু। তবে শেষ দু’বলে জাড্ডুর ব্যাট থেকে ৬, ৪ না বেরোলে যে জয়ের স্বাদ অধরাই থাকত! রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে মাহির পাশে এক ফ্রেমে বন্দি হলেন চেন্নাইকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম দুই কারিগর।
বছর দুয়েক আগে আইপিএলে পঞ্জাব কিংসদের সঙ্গে দ্বৈরথ শেষে সটান গ্যালারিতে উঠে পড়েছিলেন চেন্নাইয়ের পেসার দীপক চহার। রোদচশমা পরা বান্ধবীর তখনও ধারণা ছিল না সেখানেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গ্যালারিতে উঠেছেন সুদর্শন পেসার। তৎক্ষণাৎ চহারের প্রস্তাবের সম্মতিও দিয়েছিলেন জয়া ভরদ্বাজ। সোমবার আমদাবাদে দশর্কদের মধ্যে হাজির ছিলেন জয়া। এখন যিনি চহারের সঙ্গিনী। তাঁর পাশে ট্রফি হাতে পোজ়ও দিয়েছেন জয়া।
জামনগর উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক রিভাবা জাডেজার অন্য এক পরিচিয়ও রয়েছে। তিনি জাড্ডুর জীবনসঙ্গী। সকন্যা রিভাবাকেও দেখা দিয়েছে আইপিএল ফাইনালের রাতে। তবে ট্রফি জয়ের উচ্ছ্বাসে দর্শকাসন ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। চিত্রগ্রাহকদের অনুরোধ উপেক্ষা করেননি। একসঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন জাড্ডু দম্পতি। সঙ্গে ছোট্ট নিধ্যানা।
আইপিএলের দায়িত্ব সেরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। আগামী ৩ জুন তাঁর বিয়ে ঊকর্ষা পওয়ারের সঙ্গে। সে জন্য টেস্ট বিশ্বকাপ দলের স্ট্যান্ড বাই রুতুরাজের আর্জি ছিল, তাঁকে দেরিতে ইংল্যান্ডে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। তবে সে আর্জি মঞ্জুর হয়নি। তবে আইপিএলের ট্রফি বোধ হয় রুতুরাজের সে দুঃখ খানিকটা উপশম করতে পারবে। সোমবার হবু জীবনসঙ্গীর পাশে দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়নদের ট্রফির ছোঁয়া পেয়েছেন ঊকর্ষাও।
প্রতি বারই কোনও না কোনও তারকার জন্ম দেয় আইপিএল। তবে ভারতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়া অজিঙ্কে রাহানের যেন নবজন্মের সাক্ষী থাকল সদ্যসমাপ্ত আইপিএল। পাঁচ দিনের ম্যাচে ধীরলয়ে ধ্রুপদী ব্যাটিং করা রাহানে যে ২২ গজে এমন মারকুটে, তা ধরা পড়েছে এই টুর্নামেন্টেই। ক্রিকেট বইয়ের শেখানো নিয়ম মেনেই চার-ছয়ের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তিনি। সোমবারের রাতে সপরিবার রাহানেও বন্দি হলেন ক্যামেরায়। ব্যাটিং করেছেন। স্ত্রী রাধিকা ধোপাবকরের সঙ্গে আর্যাকে নিয়ে ট্রফি তুলে ধরলেন দৃশ্যত তৃপ্ত রাহানে।
দেশীয় ক্রিকেট তারকাদের পাশে আমবাদের স্টেডিয়ামে ছিলেন চেন্নাইয়ের ওপেনার ডেভন কনওয়ের স্ত্রী কিম ওয়াটসনও। নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেটারের সঙ্গে গত বছরের এপ্রিলে গাঁটছড়া বেঁধেছেন কিম। ফাইনালের শেষে মাঠে নেমে ডেভনের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রফি তুলে ধরেন তিনি।
শেষ দু’বলে প্রয়োজন ১০ রান। বোলার মোহিত শর্মার দৌড় শুরুর আগে ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন গুজরাত টাইটনের অধিনায়ক হার্দিক। যেন ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলেছেন। তবে তখনও ট্রফির আশা ছাড়েননি ব্যাটার জাড্ডু। মোহিতের ওভারের পঞ্চম বলটি তুলে খেলতেই ছয় এল। শেষ বলে প্রয়োজন ৪। জাড্ডুর পায়ের দিকে ঠেলে দেওয়া বলটি স্টাম্পের বাইরে পড়তেই বাঁহাতি ব্যাটারের খোঁচায় ফাইন লেগের দিকে সজোরে ছুটল। জাড্ডুরও তখন চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলতে দৌড় শুরু। ম্যাচের শেষে সতীর্থদের কাঁধে চেপেই যিনি মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন।
সাই সুদর্শনের নজরকাড়া ৯৬। শুভমন গিলের প্রায় অপ্রতিরোধ্য দেওয়াল। ঋদ্ধিমান সাহার দাঁত চেপে লড়াই। এ সবের পর হার্দিকবাহিনীর বোলারদের একের পর একে উইকেট তুলে নেওয়া— ট্রফি জয়ের স্বপ্ন অধরা হতে শুরু করলেও পাঁচ বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই। ট্রফি হাতে তাই স্বাভাবিক ভাবে চাপা থাকেনি সিএসকে-র উল্লাস।
ব্যাট হাতে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেননি গোটা টুর্নামেন্টে। তবে গোটা টুর্নামেন্টে বার বারই মাহির মগজাস্ত্রের ঘায়ে কুপোকাত হয়েছে প্রতিপক্ষ। কখনও দেখা গিয়েছে, চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন দলে শ্রীলঙ্কার কমবয়সি পেসার মাথিশা পতিরানাকে। কখনও উত্তেজনার ম্যাচে তাঁর আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছেন রায়ডুকে। বার বারই বাজি জিতেছেন মাহি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও সতীর্থদের মতো প্রকাশ্যে উল্লাস না করলেও তাঁদের মধ্যমণি হয়ে সমবেত ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন চেন্নাইয়ের ‘থালা’।
মাঠে নেমে পড়েছেন সতীর্থদের স্ত্রী-বান্ধবীরা। মিচেল স্যান্টনারের স্ত্রী কেইটলিন ডোডুনস্কি কেন পিছিয়ে থাকবেন? দুধের শিশুকন্যা ইজ়িকে নিয়ে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন নিউ জ়িল্যান্ড ক্রিকেটারের সঙ্গে জয় উদ্যাপনে।
আইপিএল ফাইনালে ব্যাটে-বলে কেরামতির সুযোগই পাননি মইন আলি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে চুপচাপ বসে থাকেননি মাহির দলের এই অন্যতম সদস্য। বাংলাদেশি স্ত্রী ফিরোজ়া হোসেনের এবং দু’সন্তানের সঙ্গে তিনিও ট্রফি হাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন।
বছর দুয়েক আগে অঞ্জুম খানের সঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন সিএসকে-র ২৯ বছরের মিডল অর্ডার ব্যাটার শিবম দুবে। সদ্যসমাপ্ত আইপিএলে এই বাঁহাতি ব্যাটারের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে। ১৫ ম্যাচে ৩৮৬ রান বেরিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে। শিশুপুত্র আয়ানকে কোলে তুলে অঞ্জুমকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলেছেন তিনিও।