রেকর্ড পতন অপরিশোধিত তেলের দামে! ২০২১ সালের পর চলতি সেপ্টেম্বরে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারের নীচে নেমে গিয়েছে।
ডব্লিউটিআই ক্রুড ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারের নীচে নেমে ৬৯.৪৬ ডলারে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম কমে ব্যারেল প্রতি ৭৩ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
গত এপ্রিলেও অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৯০ ডলার। ইজ়রায়েল, ইরানের ভূ-রাজনৈতিক দোলাচলে পড়ে তেলের দাম ঊর্ধ্বগামী হয়ে পড়ে।
বিগত নয় মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে এই ধরনের পতন দেখা গিয়েছে। হঠাৎ করে কেন এই বড়সড় পতন? তেলের দাম কমলে কতটা প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন জীবনে?
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমলে তার সুপ্রভাব পড়বে ভারতেও। কারণ ভারতকে জ্বালানির বিষয়ে প্রায় পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় আমদানির উপরেই।
ভারত তার প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেলের ৮০ শতাংশ চাহিদাই মেটায় আমদানি করে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমার ফলে ভারতে কমতে পারে পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম। তেলের আমদানি খরচ কমার এই সুবিধা আমজনতার ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে কি না, সেই চর্চা তাই তুঙ্গে।
লোকসভা ভোটের আগে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম লিটারে মাত্র ২ টাকা কমিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার জন্য তেলের দাম আরও কমানোর কথা বলছেন অনেকেই।
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমার কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, অপরিশোধিত তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলেই দামের এই পতন। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা রয়েছে যে সব দেশের, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চিন।
চিনের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তেলের চাহিদা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা কম থাকায় চিন তেল মজুতের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
কোভিড অতিমারির পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের চাহিদা একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম নেমে এসেছিল ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারে।
পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত সংস্থা ওপেকের আশঙ্কা, ২০২৪-’২৫ সালে তেলের চাহিদা আরও কমতে পারে। ওপেকের দেওয়া তথ্য বলছে, দিনপ্রতি ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার ব্যারেলের চাহিদা কমে ১৭ লক্ষ ৪০ হাজারে নেমে আসতে পারে।
অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, সৌদি আরব, গ্যাবন, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি— এই ১২ দেশ নিয়ে গঠিত ওপেকের সব সময়ে নজর থাকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যের ওপরে।
চাহিদা কমলেই ওপেক দেশগুলি অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ও সরবরাহের পরিমাণ কমিয়ে দেয় বলে বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি। সেই অনুযায়ী আগামী অক্টোবরে সরবরাহের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেক, এমনটাই দাবি এক সংবাদ সংস্থার।
বিশ্ববাজারে দীর্ঘ দিন অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ৭০-৭৫ ডলারে ঘুরে বেড়ালেও, দেশবাসীর কাছে লাভের ফসল পৌঁছয়নি। এ বার কি সুদিন আসতে চলেছে?
বিশেষত সামনেই হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের ভোট। বছরের শেষে ভোট হবে মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং তার পরে ঝাড়খণ্ডে। মার্চ মাসে লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল-ডিজ়েলর দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা কমিয়েছিল।
বিরোধী শিবির-সহ সব পক্ষেরই অভিযোগ, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশে দ্রুত তা চড়ে। কিন্তু উল্টোটা হলে তার প্রতিফলন সে ভাবে পড়ে না।
সূত্র জানাচ্ছে, এ বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, কী ভাবে অশোধিত তেলের কম দামের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের ক্রেতাদের সুবিধা দেওয়া যায়। একই সঙ্গে কোন পথে ঠিক রাখা যায় রাজস্ব আয় এবং তেল সংস্থাগুলির মুনাফাও।
তবে কয়েক বছরে যে ভাবে তেলের দাম লাফিয়ে বেড়েছে, তাতে আরও স্বস্তির প্রত্যাশায় রয়েছে সাধারণ মানুষ।