এক এক করে হরিদেবপুর-হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। নিহত অয়ন মণ্ডলকে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই এক এক করে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, অয়ন, অয়নের বান্ধবী এবং বান্ধবীর মায়ের মধ্যে ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেই খুন হতে হয়েছে অয়নকে। তবে এই প্রথম নয়। ত্রিকোণ সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আরও একাধিক নৃশংস অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। সে রকমই একটি ঘটনা বিহারের মধুবনী জেলার সাংবাদিক বুদ্ধিনাথ ঝা ওরফে অবিনাশ ঝা হত্যাকাণ্ড।
বুদ্ধিনাথ (২২) বিহারের মধুবনী জেলার এক জন স্থানীয় সাংবাদিক ছিলেন। খুন হওয়ার আগের দু’বছর ধরে বেনিপট্টিতে তিনি একটি খবরের ওয়েবসাইট চালাতেন। পাশাপাশি এক জন ‘রাইট টু ইনফরমেশন (আরটিআই)’ কর্মী ছিলেন।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান বুদ্ধিনাথ। বুদ্ধিনাথের পরিবারের সদস্যদের দাবি ছিল, ৯ নভেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ হন বুদ্ধিনাথ। পুলিশের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে নিখোঁজ হওয়ার দিন রাত ১০টা নাগাদ কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।
পর দিন সকাল ৯টার পর বুদ্ধিনাথের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই তাঁর পরিবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।
নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর মধুবনীর একটি গ্রাম থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ১২ নভেম্বর মধুবনী জেলার উদান গ্রামে বুদ্ধিনাথের অর্ধদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতের হাতের আংটি, গলার চেন এবং পায়ের আঁচিল দেখে পরিবারের সদস্যরা তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
পুলিশ এই হত্যারহস্যের তদন্তে নেমে বুঝতে পারে ত্রিকোণ সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই খুন হতে হয়েছিল বুদ্ধিনাথকে।
তদন্তে নেমে রোশন কুমার, বিট্টু কুমার, দীপক কুমার, পবন কুমার, মণীশ কুমার এবং পূর্ণকলা দেবী নামে মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ণা স্বীকার করেন যে তিনি বুদ্ধিনাথের প্রেমে পড়েছিলেন। অন্য দিকে পবন মনেপ্রাণে ভালবাসতেন পূর্ণাকে।
পূর্ণা পুলিশকে জানান, পবন চাননি বুদ্ধিনাথ এবং পূর্ণা একে অপরের সঙ্গে কোনও রকম কথা বলুন বা কোনও রকম যোগাযোগ রাখুন। বুদ্ধিনাথের সঙ্গে মেলামেশা না করা নিয়ে পবন চাপ দিতেন বলেও পূর্ণা পুলিশকে জানান।
কিন্তু শুধু কি ত্রিকোণ প্রেমের জন্যই খুন হতে হয়েছিল বুদ্ধিনাথকে? তদন্তে সামনে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বুদ্ধিনাথ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া রোশনের খুন করার কারণ ছিল সম্পূর্ণ অন্য। পুলিশের দাবি, বিহারের বেনিপট্টিতে একটি পরীক্ষাগার চালাতেন রোশন। রোশনকে নাকি এই পরীক্ষাগার বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন বুদ্ধিনাথ। আর সেই কারণেই বুদ্ধিনাথকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন রোশন।
এর মাঝে বুদ্ধিনাথের পরিবারের আবার অভিযোগ আনে যে, এলাকার নার্সিংহোম মাফিয়ারা চক্রান্ত করে বুদ্ধিনাথকে খুন করেছেন।
বুদ্ধিনাথের পরিবারের দাবি ছিল, বুদ্ধিনাথ তাঁর ওয়েবসাইটে এলাকার বেশ কয়েকটি ভুয়ো নার্সিংহোমের তথ্য প্রকাশ্যে আনেন। এর পর থেকেই তিনি এই সব নার্সিংহোমের মালিকের কুনজরে পড়েন।
একই সঙ্গে তথ্যের অধিকার আইন ব্যবহার করে বুদ্ধিনাথ ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে বেনিপট্টি এবং ঢাকজারিতে অবৈধ ভাবে চলা ১৯টি প্যাথোলজি ল্যাব বন্ধ করিয়ে দেন।
অগস্ট মাসেও বুদ্ধিনাথের খবরের জন্য চারটি ব্যক্তিগত নার্সিংহোমকে প্রশাসনের তরফে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ২০২০-এর ডিসেম্বরেও বুদ্ধিনাথের জন্য ন’টি নার্সিংহোম এবং প্যাথ ল্যাবে তালা ঝোলানো হয়।
অগস্ট মাসেও বুদ্ধিনাথের খবরের জন্য চারটি ব্যক্তিগত নার্সিংহোমকে প্রশাসনের তরফে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ২০২০-এর ডিসেম্বরেও বুদ্ধিনাথের জন্য ন’টি নার্সিংহোম এবং প্যাথ ল্যাবে তালা ঝোলানো হয়।
এই সব কারণেই বুদ্ধিনাথকে খুন করা হয় বলে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে বার করে যে, মূলত ত্রিকোণ সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই খুন হন বুদ্ধিনাথ। খুন করে পুড়িয়ে মারা হয় তাঁকে।