২২ মিলিয়ন ডলারের লটারি! ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা হাতে পেয়ে কত কিছুই না করা যায়। কত শখই না পূরণ হয়। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ অর্থই কাল হল নিউজিল্যান্ডের যুবক জোশুহাজন উইন্সলেটের। এত টাকা জেতার পরও অপরাধ এবং অন্ধকারের জগতে ডুবে গিয়ে তাঁর ঠাঁই এখন কারাগারের চার দেওয়ালের ভিতরে।
মাদক নেওয়া-সহ আরও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন জোশুহা।
২০১৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লটারিতে জিতেছিলেন জোশুহা। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বদলে যায় তাঁর জীবন।
২০২০ সালের অগস্ট মাসে অ্যাডিলেডের নিউ পোর্টপুলিশ জোশুহার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৭.৩ গ্রাম নিষিদ্ধ এমডিএমএ মাদক উদ্ধার করে। উদ্ধার করা হয় কোকেন-সহ বিভিন্ন মাদক। মাদকের পরিমাণ দেখে পুলিশের চোখ কপালে ওঠে।
মাদক ছাড়াও জোশুহার ঘরের বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় একটি মাউজার বন্দুক এবং গুলি।
কিন্তু কেন এই অবস্থা হল জোশুহার? কেনই বা লটারিতে এত টাকা জিতে অপরাধের পথ বেছে নিতে হল তাঁকে?
ভারী চেহারার কারণে ছোট থেকেই স্কুলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল জোশুহাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মানসিক অবসাদ চেপে বসে তাঁর জীবনে।
আসলে জন্ম থেকেই ‘ডুয়ান সিনড্রোম’ এবং ‘গোল্ডেনহার সিনড্রোম’ নামে দু’টি বিরল রোগের শিকার ছিলেন জোশুহা। ছোটবেলায় এই কারণে তাঁর শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচারও হয়।
ডুয়ান সিনড্রোমের কারণে জোশুহার চোখের পেশিগুলি সঠিক ভাবে বিকশিত হয়নি। এই রোগের কারণে চোখের মণি ঘোরাতেও অসুবিধা হত তাঁর।
গোল্ডেনহার সিন্ড্রোমের কারণে জোশুহার মুখ ও মাথার হাড়ের গঠনও স্বাভাবিক ছিল না। মেরুদণ্ড-সহ আরও বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যাও ছিল তাঁর।
জোশুহার কিডনিতেও সমস্যা ছিল। ঘোড়ার খুরের আকৃতির কিডনি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণে তাঁকে খেলাধূলা থেকেও দূরে থাকতে হত।
এত শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে জোশুহাকে স্কুলে পড়ার সময়ে প্রায় প্রতি দিনই কুমন্তব্যের শিকার হতে হত। আর এই কারণেই তিনি অবসাদে ভুগতেন। নির্যাতনের ভয়ে মাঝপথে স্কুলও ছাড়েন। মানসিক অবসাদ থেকে রেহাই পেতে তখন থেকেই ধীরে ধারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন জোশুহা।
লটারি জেতার আগে টাকা রোজগার করতে সারাইকর্মী হিসাবে কাজ করতেন জোশুহা। কিন্তু লটারি জেতার পর পরই সেই কাজ তিনি ছেড়ে দেন। জেতা টাকা দিয়ে শুরু করেন মাদক কেনা।
লটারিতে জেতা টাকা থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বহু সম্পত্তিও কেনেন জোশুহা। বাকি টাকা খরচ করেন মাদকের পিছনে।
মাদকের নেশা শুরুর পর জোশুহার জীবনে আগমন হয় একগাদা বখাটে বন্ধুর। এই বন্ধুরাই তাঁকে মাদক সরবরাহ করতেন। হাতে টাকা থাকার কারণে জোশুহা হয়ে উঠেছিলেন ‘বন্ধু’মহলের মধ্যমণি।
মাত্রাতিরিক্ত নেশা করার কারণে বাড়ি থেকে দূরে অন্য একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন জোশুহা। আরও অবাধে চলতে থাকে নেশা। মাঝেমাঝে সেই বাড়িতে আসতেন যৌনকর্মীরাও।
বন্ধুদেরও নেশা করার টাকা জোগাতেন জোশুহা। আর তার বদলে এক বন্ধুর কাছে থেকে মাউজার বন্দুকটি তিনি নিয়েছিলেন। জোগাড় করেছিলেন গুলিও।
কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই জোশুহার এই বেপোরয়া জীবনযাপনে লাগাম পড়ে। বমাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
গ্রেফতারের পর দীর্ঘ দিন মামলা চলার পর চলতি বছরের অগস্টে জোশুহাকে তিন বছর ন’মাসের জন্য জেলে বন্দি রাখার সাজা শোনানো হয়।