সারা বাড়ি জুড়ে জামাকাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ঘরের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় সমস্ত আসবাবপত্রও। আবার বেশ পরিপাটি করে গোছানোও বাড়ির বেশ কিছু অংশ। ঘরের মধ্যে সবই আছে, শুধু নেই কোনও মানুষ।
এ ভাবেই পড়ে রয়েছে একটি বাড়ি। এক বা দু’দিন ধরে নয়, বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত এই বাড়ি। তবে ঘরে ঢুকলে মনে হবে অনন্তকাল ধরে এই বাড়ি কারও ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। যেন ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে এলেই জীবন্ত হয়ে উঠবে এই বাড়ি। দেখেই মনে হবে যেন ভুতুড়ে সিনেমার কোনও সেট।
সম্প্রতি ডার্বিশায়ারের চেস্টারফিল্ডে বহু বছর ধরে বন্ধ থাকা এই ঘরে পা রাখেন এক অভিযাত্রী। নাম কাইল উর্বেক্স। বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢুকে ভিডিয়ো তৈরিই তাঁর পেশা এবং নেশা।
তবে চেস্টারফিল্ডের এই ঘরে প্রবেশ করে কাইল জানান, বাড়ির ভিতরে ঢুকে তিনি আপ্লুত হয়ে যান। কাইল জানান, বাড়ির বাইরে এত বেশি গাছগাছড়া জমে গিয়েছিল যে, বাড়ির সামনে থাকা মূল রাস্তা থেকে এই বাড়িটি সহজে দেখা যেত না।
কাইল আরও জানান, ঝোপঝাড় পেরিয়ে পিছনের প্রশস্ত খোলা দরজা দিয়ে তিনি ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকেই তিনি দেখেন একটি টেবিলের উপর পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্টগুলি পড়ে রয়েছে।
কাইল বলেন, ‘‘একটি পাসপোর্টের উপরে ডব্লিউএইচজে বেনহ্যাম নামে এক ব্যক্তির নাম লেখা। তাই আমার অনুমান, এক জন ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রীর দখলে এই বাড়িটি ছিল।’’ কাইল আরও যোগ করেছেন, বাড়ির পরিবেশ দেখে মনে হয় পরিবারের সদস্যরা তাড়াহুড়ো করে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। স্পষ্টতই বহু বছর ধরে এই বাড়িতে কেউ বসবাস করেননি।
এ ছাড়াও ১৯৬০-এর দশকের কয়েক ডজন পুরনো কমিক বই দেখতে পান কাইল। রান্না করার জায়গাও ক্ষয়ে ক্ষয়ে প্রায় ভঙ্গুর।
তবে পরিবারের সদস্যদের দেখা মিলছে ঘরের সর্বত্র। জলজ্যান্ত না, ছবির মাধ্যমে। এ ছাড়াও ঘরের মধ্যে মিলেছে ৫০ বছর পুরনো খেলনা। খেলনাগুলি রহস্যজনক ভাবে এক সারিতে সাজিয়ে রাখা।
কাইল আরও দেখেন, বাথরুমে স্নান করার জায়গায় স্তূপ আকারে কাপড় পড়ে আছে। বেসিনের কাছে পড়ে একটি তোয়ালে এবং সাবানের টুকরো। দেখে বোঝা যায়, সাবান ফুরোনোর আগেই ফাঁকা হয়েছিল বাড়ি।
এ ছাড়াও বাড়ির একটি ড্রয়ারে থরে থরে সাজানো একাধিক পুতুল। ওই টেবিলে একটি অব্যবহৃত হলুদ টেলিফোন এবং এলভিস প্রেসলির ছবি দেওয়া একটি ঘড়িরও দেখা মেলে। ঘরের মধ্যে থাকা সব কিছুই কাইল ক্যামেরাবন্দি করেছেন।
এর মধ্যে একটি ঘরে রঙের পাত্র, ফুলদানি এবং মরচে ধরা একাধিক সরঞ্জাম দেখতে পান কাইল। তবে এই ঘরটি তুলনামূলক ভাবে অবহেলিত। আর তা ঘরের ফাটা দেওয়াল এবং রং হারানো ছবিগুলি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এমনটাই ফুটে উঠেছে কাইলের ভিডিয়োতে।
তবে কাইল এ-ও জানিয়েছেন, পুরো বাড়ি জুড়েই এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা অনুভব করেছিলেন তিনি। বেশ একটা গা ছমছমে ব্যাপার রয়েছে এই বাড়িতে।
তবে কী এমন তাড়াহুড়ো, যে হঠাৎ করেই ভরা সংসার ছেড়ে উধাও হয়ে গেলেন এই পরিবার? উত্তর নেই কাইলের কাছে।