যন্ত্রের কলকব্জা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে কি বড় কোনও বিপদ ডেকে আনছে মানুষ? নিত্যদিনের কাজ আরও সহজ, আরও উন্নত করে তুলতে গিয়ে কি হিতে বিপরীত হচ্ছে? বিশ্বের প্রথম শিল্পী রোবটের নির্মাতা কিন্তু সে দিকেই ইঙ্গিত করছেন। এর আগেও এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন স্টিফেন হকিং-এর মতো বিজ্ঞানী। ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এর ভূত যে ঘোর বাস্তব, তা প্রমাণ করে হালফিলের বহু গবেষণা। গুগলের প্রধান সংস্থা অ্যালফাবেট এবং অ্যাকসেঞ্চারের সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আশঙ্কার কথা বলেছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা কুশলী মানুষের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে। কাজকর্ম নিয়ে সমস্যা বাড়বে। বিশ্বের প্রথম ‘শিল্পী রোবটের’ নির্মাতা আদিয়ান মেলার সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘রোবটই মানব সভ্যতার ধ্বংসের দিন ডেকে আনবে।’’ তাঁর তৈরি রোবটের নাম আইদা (এআই-ডিএ)।
নারীর দেহাবয়বে তৈরি এই রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চমকে দেয় সকলকে। নিজের চোখের ক্যামেরা আর রোবটিক হাতের সাহায্যে আইদা ছবি আঁকে। তাতে রঙের আঁকিবুঁকিও কাটে। ২০১৯ সালে এই রোবটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
আইদা সম্পর্কে আদিয়ান বলেন, ‘‘ও যে একটা যন্ত্র, তা ও নিজেও জানে না। ওর সঙ্গে যে কোনও সাধারণ মানুযের মতোই কথা বলা যায়।’’
সম্প্রতি যন্ত্রের হাত ধরে মানব সভ্যতার অগ্রগতি লক্ষ করে আইদার নির্মাতা আদিয়ান সতর্ক করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অদূর ভবিষ্যতে টেক্কা দেবে মানুষকেও।
আদিয়ানের বক্তব্য, রোবট-শক্তির কাছে হার মানবে পারমাণবিক শক্তিও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাড়বাড়ন্ত মানব সভ্যতাকে যে বিপদের সম্মুখীন করবে, পরমাণু অস্ত্রের আঘাতের চেয়েও তা হবে ভয়ঙ্কর।
যন্ত্রের অভিশাপ মানুষের কল্পনাতীত, মনে করেন আদিয়ান। আগামী তিন বছরের মধ্যেই মানুষ তার চারপাশে সেই অভিশাপের প্রতিফলন দেখতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
আদিয়ান বলেছেন, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। যন্ত্রের সঙ্গে আমরা একাত্ম হয়ে পড়ছি। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে।’’
মানুষের জীবনের অন্ধকার দিকটিও সামনে এনে দেখাবে রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, দাবি আদিয়ানের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযুক্তি কখনও ভাল বা খারাপ হতে পারে না। আমরা কী ভাবে তা ব্যবহার করছি, তার উপরেই ভাল বা খারাপ নির্ভর করে।’’
সম্প্রতি অক্সফোর্ডে একটি প্রদর্শনীতে আদিয়ানের সঙ্গে হাজির ছিল আইদা। সেখানে গিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে সে। তাদের সামনে ছবি এঁকে দেখায়।
এই প্রদর্শনীতে পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার আদা লাভলেসের বিরল কিছু চিঠিও সকলের সামনে তুলে ধরা হয়। এই আদা লাভলেসের নামেই রোবট আইদার নামকরণ করা হয়েছে।
রোবট যদি মানুষের সব কাজ করে ফেলে, মানুষের চেয়েও যদি রোবট শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তা হলে মানুষের কী গতি হবে? তার সম্ভাব্য উত্তর দিয়েছেন আদিয়ান। তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত আগামী দিনে মানুষ অন্য গ্রহে গিয়ে থাকতে শুরু করবে। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন অনেকেই।
তবে রোবটই প্রথম মঙ্গল গ্রহে গিয়ে থাকবে, নিশ্চিত ভাবেই এমনটা জানিয়েছেন আদিয়ান। তাঁর বক্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে মানুষ হয়ে উঠবে বহুগ্রহবাসী। পৃথিবী ছাড়াও অন্য গ্রহে থাকতে শুরু করবে তারা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগে মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আদিয়ান। এই সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলা এখন আর থামানো সম্ভব নয়, জানিয়েছেন তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি আবহাওয়ার ভাবগতিক দেখেও আশঙ্কিত আদিয়ান। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং তার প্রভাবও মানব সভ্যতাকে একই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে উল্টো মতও আছে। অনেক বিজ্ঞানী এবং সমাজতত্ত্ববিদ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই উন্নতি করুক, তা কোনও দিনই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অতিক্রম করতে পারবে না। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃজনের ক্ষমতা নেই, যা শুধু রয়েছে মানুষেরই।