কর্ণ জোহরের প্রযোজনা সংস্থার ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছেন ‘সেরাম ইনস্টিটিউট’-কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা। সম্প্রতি এই খবর নিয়েই তোলপাড় হয়েছে বলিপাড়া। সেই উপলক্ষে আদারের সংস্থা এক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তবে শেয়ার হস্তান্তরকরণের মাঝে সম্পত্তির নিরিখে পুনাওয়ালা এবং কর্ণের মধ্যে কে কতটা এগিয়ে গেল তা জানেন কি?
১৯৭৬ সালে কর্ণের পিতা যশ জোহর ধর্মা প্রযোজনা সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কাল হো না হো’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র মতো বহু হিন্দি ছবি থেকে লক্ষ্মীলাভ করেছে সংস্থা। যশের মৃত্যুর পর সংস্থার দায়িত্বভার তুলে নেন কর্ণ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, পুনাওয়ালার কাছে শেয়ার বিক্রি করার আগে কর্ণের সংস্থার বাজারমূল্য ছিল দু’হাজার কোটি টাকা।
প্রযোজনা সংস্থার ৯০.৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন কর্ণ। বাকি ৯.২৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ছিল তাঁর মা হিরু জোহরের।
বর্তমানে প্রযোজনা সংস্থার ৫০ শতাংশের মালিকানা রয়েছে কর্ণের। বলিপাড়া সূত্রে জানা যায়, কর্ণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৪০০ কোটি টাকা।
ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি হসপিটালিটি এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছেন কর্ণ।
২০১৬ সালে বিজ্ঞাপন প্রযোজনার জন্য ‘ধর্মা ২.০’ গড়ে তোলেন কর্ণ।
দু’বছর পর ২০১৮ সালে ‘ধর্মাটিক এন্টারটেনমেন্ট’ নামে একটি বিভাগ তৈরি করেন কর্ণ। নানা ধরনের অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য এই নতুন বিভাগের তরফে কন্টেন্ট তৈরি করা হয়।
২০২০ সালে অভিনয়ে পারদর্শী নতুন মুখ খোঁজার জন্য ‘ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ সংস্থা তৈরি করেন কর্ণ। এই সংস্থার হাত ধরে তৃপ্তি দিমরি, সারা আলি খান, জাহ্নবী কপূর, অনন্যা পাণ্ডের মতো তারকারা বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন।
২০২১ সালে নিজস্ব গয়নার সংস্থা চালু করেন কর্ণ। ২২ ক্যারাট সোনার গয়নার জন্য তাঁর সংস্থা রাতারাতি নাম করে। বর্তমানে মুম্বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় সেই সংস্থার দোকান রয়েছে।
২০২২ সালে মুম্বইয়ের কোলাবায় একটি বিলাসবহুল রেস্তরাঁ খোলেন কর্ণ। সেই রেস্তরাঁয় ইউরোপীয় ঘরানার বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।
২০২১ সালে লন্ডনের একটি প্রযুক্তি সংস্থায় অর্থ বিনিয়োগ করেছেন কর্ণ। কানাঘুষো শোনা যায়, ফ্যাশনশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় এবং ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহও সেই সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, নেটপ্রভাবীদের জন্য একটি মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে ২০২২ সালে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন কর্ণ।
অন্য দিকে, ভারতের ‘ভ্যাক্সিন ম্যান’ নামে পরিচিত পুনাওয়ালা সম্পত্তির দিক থেকে কর্ণের চেয়ে বহু বহু ধাপ এগিয়ে।
আদার পুনাওয়ালার পিতা সাইরাস পুনাওয়ালার নাম ভারতের প্রথম দশ ধনী শিল্পপতির তালিকায় রয়েছে।
জানা গিয়েছে, আদারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ লক্ষ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
মুকেশ অম্বানী না কি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, গত কয়েক সপ্তাহ কর্ণ জোহরের ধর্মা প্রডাকশন্সের অংশীদার হিসেবে উঠে এসেছিল দুই উদ্যোগপতির নাম। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁদের হারিয়ে দিয়েছেন পুনাওয়ালা।
আদারের প্রযোজনা সংস্থা ‘সেরিন প্রোডাকশন’ এবং কর্ণের প্রযোজনা সংস্থার তরফে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়, ভবিষ্যতে ধর্মাকে আরও বড় আকারে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কর্ণ বলেছেন, “শুরুর দিন থেকেই আমরা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে বিষয়বস্তু তৈরি করতে চেয়েছি। আমরা বাবা যে ইচ্ছা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, আমি সেই দর্শনকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছি। আদার আমার ভাল বন্ধু। এই বন্ধন আগামী দিনে অজস্র নতুন সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে তুলবে।”
তবে বলিউডের অন্দরে ধর্মাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছর ধরেই কর্ণের প্রযোজনা সংস্থা লোকসানে চলছে। তাই সংস্থাকে বাঁচাতে নতুন বিনিয়োগকারীর সন্ধানে ছিলেন কর্ণ।
২০২২ সালে প্রযোজনা সংস্থার বড় বাজেটের ছবি ‘লাইগার’ সফল হয়নি। ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ লাভের মুখ দেখলেও তার পর থেকে ‘গোবিন্দ নাম মেরা’, ‘সেল্ফি’র মতো ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
গত বছর কর্ণ পরিচালিত ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’র মাধ্যমে দীর্ঘ বিরতির পর প্রযোজনায় ফিরেছিলেন কর্ণ। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে সফল হলেও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। আগামী দিনে ধর্মা কী চমক হাজির করে সেটাই দেখার।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে, প্রযোজনা সংস্থার একটি অংশ নাকি সাময়িক বিক্রি করতে চান কর্ণধার কর্ণ জোহর। এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছিল ধনকুবের সঞ্জীব গোয়েন্কার নামও।
অন্দরমহলের জনশ্রুতি, কর্ণের প্রযোজনা সংস্থা নিয়ে নাকি আগ্রহী ছিলেন মুকেশ অম্বানীও। সংস্থা কেনার ক্ষেত্রে তাঁর দিকেই নাকি পাল্লা ভারী ছিল।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, কর্ণ সংস্থার শেয়ার বিক্রির ব্যাপারে প্রথম কথা বলেছিলেন গৌতম আদানির সঙ্গে। তাঁর কাছে ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির আলোচনা করেছিলেন।
আদানির সঙ্গে আলোচনার পর আচমকাই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। বেশ কিছু দিন পরে শোনা যায় গোয়েন্কা সংস্থার নাম। গোয়েন্কা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন সারেগামা ইন্ডিয়া, প্রযোজক কর্ণের প্রযোজনা সংস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদারি পেতে চলেছে, এই খবর ছড়িয়ে যায় বলিউডের অন্দরমহলে। সেই গুঞ্জন থিতিয়ে যেতে না যেতেই নতুন চর্চা শুরু হয়।
বলিউডের গুঞ্জন, প্রযোজনা সংস্থার অংশীদারি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল মুকেশ অম্বানীর। এক দিকে যেমন কর্ণের সঙ্গে মুকেশের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অন্য দিকে রিল, জিয়ো স্টুডিয়ো, ভায়াকম ১৮ স্টুডিয়ো, একতা কপূরের বালাজি টেলিফিল্ম-সহ একাধিক প্রযোজনা সংস্থা এবং চ্যানেলের অংশীদার মুকেশ। সেই জায়গা থেকেই বলিউডের ধারণা হয়েছিল, মুকেশ-কর্ণ হাত মেলালে মায়ানগরী আখেরে লাভবান হতে পারে। তবে সকলকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলেন আদার পুনাওয়ালা।