কখনও অভিনয় করেছেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের সঙ্গে, কখনও বা অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খানের সঙ্গে। নব্বইয়ের দশকে একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন টিকু তালসানিয়া। কিন্তু বলিপাড়া থেকে হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলেন তিনি?
১৯৫৪ সালের ৯ জুন মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম টিকুর। জন্মের সময় তাঁর নামকরণের নেপথ্যকাহিনি বেশ মজাদার। টিকুর দাদুর দেশবিদেশের নানা জায়গার কলম সংগ্রহের নেশা ছিল। তাঁর কাছে জার্মানিরও একটি কলম ছিল যার নাম ছিল টিকু। কলমটি তাঁর খুব পছন্দের হওয়ায় নাতির নাম টিকু রাখেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, নিজের নাম পরিবর্তনের জন্য বহু চেষ্টা করেছিলেন টিকু। কিন্তু মহারাষ্ট্রে নাম পরিবর্তনের জন্য এত জটিলতার সম্মুখীন হতে হত যে সেই চেষ্টা পরে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল টিকুর। কলেজে পড়াকালীন থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। গুজরাতি এবং হিন্দি ভাষায় থিয়েটারে অভিনয় করতেন তিনি।
থিয়েটারজগতেই নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন টিকু। দূরদর্শনের তরফে তাঁকে ছোট পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। আশির দশকে ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে তাঁর ছোট পর্দায় কেরিয়ারের শুরু।
একের পর এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন টিকু। নব্বইয়ের দশকে ছোট পর্দা থেকেই বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। বলিপাড়ার অন্যতম পরিচালক রবিকান্ত নাগাইচ খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন টিকুকে।
ছোট পর্দায় কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন টিকু। খলনায়কের চরিত্র পর্দায় কী ভাবে ফুটিয়ে তুলবেন তা নিয়ে রবিকান্তের কাছে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, টিকুকে একটি তেলুগু ছবির ক্যাসেট দিয়েছিলেন রবিকান্ত। তাঁকে সম্পূর্ণ ছবিটি দেখার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। ছবিটি দেখার পর টিকু লক্ষ করেন যে খলনায়কের চরিত্রটি অনেকটা তাঁর মতোই। তা দেখেই রবিকান্তের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হন তিনি।
রবিকান্তের পরিচালনায় ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডিউটি’ ছবিতে গোবিন্দের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় টিকুকে। ‘প্যার কে দো পল’, ‘দিল হ্যায় কে মানতা নহি’, ‘উমর ৫৫ কি দিল বচপন কা’, ‘বোল রাধা বোল’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘মিস্টার বেচারা’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে নব্বইয়ের দশকে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘ইশক’, ‘জোড়ি নম্বর ওয়ান’, ‘পার্টনার’, ‘দেবদাস’-এর মতো ছবিতেও অভিনয় করেন টিকু। তার পর ধীরে ধীরে বলিপাড়া থেকে উধাও হয়ে যেতে থাকেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, হঠাৎ করে কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় টিকুর। বহু জায়গায় অডিশন দিলেও তাঁকে ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন বলিপাড়ার অধিকাংশ প্রযোজক-পরিচালকেরা।
হাতে কোনও কাজ না থাকায় ছোটখাটো যে কোনও চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলে তাতে রাজি হয়ে যেতেন টিকু। ‘ধামাল’, ‘স্পেশাল ২৬’-এর মতো হিন্দি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন টিকু।
স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকেন টিকু। তাঁর কন্যা শিখা তালসানিয়াও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। ‘বীরি দি ওয়েডিং’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’, ‘আই হেট লভ স্টোরি’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন শিখা।
২০১৭ সাল থেকে সম্প্রচারিত ‘সজন রে ফির ঝুট না বোলো’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল টিকুকে। এখনও অভিনয় থেকে অবসর নেননি তিনি। কোনও ছবি বা ধারাবাহিকে আবার অভিনয়ের সুযোগ পাবেন বলে অডিশন দিয়ে চলেছেন টিকু।