নামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি। মাস পার হলে বেতনও পেয়ে যেতেন সময় মতো। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা ধরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার চাকরি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন জয়গুরু আচার হিন্দর।
তাই চাকরি ছেড়ে দুধ, ঘি, গোবর বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন জয়গুরু। বর্তমানে মাসপিছু ১০ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি।
কর্ণাটকের মুন্দ্রু গ্রামের বাসিন্দা জয়গুরু। সেই গ্রামেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর। জয়গুরুর বাবা নিজের হাতে খামার তৈরি করেছিলেন। সেখান থেকেই সংসারের খরচ চলত তাঁদের।
গৃহপালিত পশুদের কী ভাবে যত্ন নিতে হয়, খামারের কাজকর্ম কী করে সামলাতে হয় তা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে শিখেছিলেন জয়গুরু।
স্কুলের গণ্ডি পার করে একটি বেসরকারি কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন জয়গুরু। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও শুরু করেন তিনি।
প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা বেতন পেতেন জয়গুরু। কিন্তু এক বছর চাকরি করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঘড়ি ধরে কাজ করায় যেন বিতৃষ্ণা জন্মে যায় জয়গুরুর। তাই ২০১৯ সালে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যান তিনি।
গ্রামের বাড়ি ফিরে গিয়ে খামারের কাজে মন দেন জয়গুরু। পড়াশোনা চলাকালীনও তিনি খামারের উন্নতির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতেন। সেই ভাবনাগুলি এ বার বাস্তব রূপ পেতে শুরু করে তাঁর হাত ধরে।
মাত্র দশটি গরু দিয়ে নিজের খামার শুরু করেছিলেন জয়গুরুর বাবা। বর্তমানে তাঁর খামারে রয়েছে ১৩০টির বেশি গৃহপালিত পশু।
প্রতি দিন প্রায় হাজার ব্যাগভর্তি গোবর বিক্রি করেন জয়গুরু। তা ছাড়া গোমূত্রও বিক্রি করেন তিনি। জয়গুরু তাঁর খামারের গরুগুলিকে যে জল দিয়ে স্নান করান, তা-ও বিক্রি করেন তিনি।
‘গোনন্দজল’ নামে একটি প্রক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন জয়গুরু। খামারের কোনও গরু মারা গেলে তার দেহ একটি ট্যাঙ্কের মধ্যে রাখা হয়। কিছু রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে কয়েক মাস ট্যাঙ্কের ভিতর রাখা হয়ে থাকে মৃত গরুর দেহ।
গরুর মৃতদেহের সম্পূর্ণ ক্ষয় হলে তা অবশিষ্ট তরলের সঙ্গে মিশে একটি মিশ্রণ তৈরি করে যা সার হিসাবে ব্যবহার করা খুব উপযোগী। এই সারও বিক্রি করেন জয়গুরু।
জয়গুরু প্রতি দিন ৩০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের ঘি বিক্রি করেন। তাঁর খামার থেকে প্রতি দিন ৭৫০ লিটার দুধও বিক্রি করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করে প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা উপার্জন করা জয়গুরু বর্তমানে খামারের মালিক হয়ে প্রতি বছর কোটি টাকা উপার্জন করছেন। ভবিষ্যতে এই ব্যবসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়গুরু।