হাতে-মুখে চোটের দাগ। নিজের এক্স হ্যান্ডল (পূর্বতন টুইটার)-এ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন টেলি অভিনেত্রী। আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি দাবি করেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে শারীরিক হেনস্থা করেছেন। শুধুমাত্র নিজের পরিবার নয়, স্বামীর কাছেও গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি করেন বৈষ্ণবী ভোয়ার।
বৈষ্ণবী ভিডিয়োয় নিজের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমি বৈষ্ণবী ধনরাজ। আমার এই মুহূর্তে আপনাদের সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। আমি এখন কাশিমিরা থানায় রয়েছি। আমার পরিবারের কাছেই আমি হেনস্থার শিকার হয়েছি। আমাকে খুব মারধরও করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির সকলের কাছেই আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। দয়া করে আমায় কেউ সাহায্য করুন।’’
বৈষ্ণবীর ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁকে নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই প্রথম বার নয়, এর আগে নাকি স্বামীর কাছেও গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি।
১৯৮৮ সালের ২৫ অগস্ট মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্ম বৈষ্ণবীর। সেখানে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করার পর মহারাষ্ট্রের কল্যাণে পরিবার-সহ চলে যান তিনি।
কন্যা যে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চান তা জানতে পেরে তাঁর বাবা-মা বৈষ্ণবীকে উৎসাহ দেন এবং বিভিন্ন জায়গায় অডিশনে নিয়ে যেতে শুরু করেন। ২০০৮ সালে ছোট পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ নামের জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে পা রাখেন বৈষ্ণবী। এই ধারাবাহিকে বৈষ্ণবীর অভিনয় দেখার পর ওই ধারাবাহিকের প্রযোজনা সংস্থার তরফে অভিনেত্রীকে অন্য একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
‘কর্ম আপনা আপনা’ নামের ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান বৈষ্ণবী। দু’টি ধারাবাহিকে অভিনয় করে নিজের পদবি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী বৈষ্ণবী তাঁর নামের পর তাঁর বাবা ধনরাজের নাম ব্যবহার করতে শুরু করেন। টেলি ইন্ডাস্ট্রিতে বৈষ্ণবী ধনরাজ নামে পরিচিত হন তিনি।
এক বছর পর ২০০৯ সালে ‘সিআইডি’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান বৈষ্ণবী। এই ধারাবাহিকে ইনস্পেক্টর তাশার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, তাশার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বৈষ্ণবীকে প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে হত। কিন্তু কোনও ‘স্টান্ট ডবল’-এর সাহায্য নিতেন না অভিনেত্রী। নিজেই সমস্ত দৃশ্যে অভিনয় করতেন তিনি।
‘সিআইডি’তে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বৈষ্ণবী। তার পর ‘না আনা ইস দেশ লাডো’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, নিজের চরিত্র নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না বলে ‘না আনা ইস দেশ লাডো’ ধারাবাহিকে নাকি অভিনয় করতে চাননি তিনি। পরে অবশ্য সেই সমস্যার সমাধান হয়।
২০১২ সালে একটি পত্রিকার মুখ্য সম্পাদক এবং অভিনেতা নিতিন সাহরাওয়াতের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বৈষ্ণবী। ‘কিতনি মহব্বত হ্যায়’ শোয়ের দ্বিতীয় পর্বে বৈষ্ণবীর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় নিতিনের। সেই আলাপই পরে প্রেমে গড়ায়।
হরিদ্বারে বিয়ে করার পর মুম্বইয়ে তারকা-বন্ধুদের রিসেপশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বৈষ্ণবী এবং নিতিন। টেলি তারকাজুটি হিসাবে তাঁরা দু’জন সে সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
‘পরওয়ারিশ— কুছ খট্টি কুছ মিঠি’, ‘মধুবালা— এক ইশক এক জুনুন’, ‘মহাভারত’, ‘সসুরাল সিমর কা’, ‘বেগুসরাই’, ‘ইয়ে ওয়াদা রহা’, ‘বেহদ’, ‘বেপহনা’, ‘আপকি নজরো নে সমঝা’, ‘তেরে ইশক মে ঘায়েল’-র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন বৈষ্ণবী।
২০১১ সালে রান্নার একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন বৈষ্ণবী। সেই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পান তিনি।
বিয়ের চার বছর পর ২০১৬ সালে বৈষ্ণবীর সঙ্গে নিতিনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। অন্দরমহলে কানাঘুষো শোনা যায়, অভিনেত্রী নাকি মাঝেমধ্যেই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতেন। সেই কারণেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বৈষ্ণবী জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজের বিবাহিত সম্পর্ক বাঁচাতে চেয়েছিলেন। এমনকি পেশাগত দিক থেকে সাহায্যও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিতিনের পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
২০১৮ সালে ‘ভোদকা ডায়েরিজ়’ এবং ‘পিকে লেলে এ সেলসম্যান’ নামের দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান বৈষ্ণবী।
ভারতনাট্যম নাচে পারদর্শী বৈষ্ণবী। দু’হাতে দু’ধরনের ট্যাটু রয়েছে তাঁর। ডান হাতে ট্যাটু করে লেখা রয়েছে ‘কর্ম’ শব্দটি এবং বাঁ হাতে ট্যাটু করে ‘ধর্ম’ শব্দটি লিখিয়েছেন অভিনেত্রী।
সমাজমাধ্যমে অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর বৈষ্ণবীর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা আড়াই লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।