তাঁর ঘড়ির সংগ্রহ চোখধাঁধানো। এক-একটির দাম কয়েক কোটি টাকা। ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সেই সম্ভারেই এ বার যোগ হল আরও এক দুর্মূল্য ঘড়ি। জেকব অ্যান্ড কোম্পানির একটি ঘড়ি হাতে এল তাঁর। ঘড়িটি তাঁর নতুন বাড়িতে গিয়ে উপহার দিয়ে এলেন খোদ সংস্থার কর্তা।
জেকব অ্যান্ড কোম্পানির যে ঘড়ি রোনাল্ডোকে উপহার দেওয়া হয়েছে, তার দাম প্রায় ১৩ লক্ষ আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১১ কোটি টাকা।
পেশার সূত্রে প্রায় এক বছর ধরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে থাকছেন রোনাল্ডো। নতুন বাড়িও কিনেছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ঘড়িটি উপহার দিয়েছেন সংস্থার কর্তা জেকব আরাবো।
এর পর সমাজমাধ্যমে উপহার দেওয়ার ভিডিয়ো পোস্ট করেন জেকব। লেখেন, ‘‘কাছেই ছিলাম। তাই ঠিক করলাম নিজে এসে ক্রিশ্চিয়ানোর হাতে এই ঘড়ি তুলে দেব।’’
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, রোনাল্ডোর হাতে ‘টুইন টার্বো ফিউরিয়াস’ ঘড়ি পরিয়ে দিচ্ছেন জেকব। তার পর করমর্দন করছেন। পর্তুগালের ফুটবলার রোনাল্ডো এবং তাঁর বান্ধবী জর্জিনা রডরিগের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন জেকব।
২০১৬ সালে প্রথম এই ‘টুইন টার্বো’ ঘড়ি তৈরি করে জেকব অ্যান্ড কোম্পানি। এই ঘড়িতে রয়েছে এক জোড়া তিন কাঁটা বিশিষ্ট টার্বুলিয়ন। সঙ্গে রয়েছে মিনিট রিপিটার, যা প্রতি ঘণ্টায়, এমনকি চাইলে প্রতি মিনিটে সময় বলবে গ্রাহককে।
২০১৮ সালে সেই ‘টুইন টার্বো’ ঘড়িকে আরও আধুনিক রূপ দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় ‘টুইন টার্বো ফিউরিয়াস’। দু’টি অঞ্চলের সময়ের ফারাকও বলে দিতে পারে এই ঘড়ি।
রোনাল্ডোকে যে ঘড়িটি উপহার দিয়েছেন জেকব, তার যন্ত্র সম্পূর্ণ ভাবে হাতে তৈরি। সাজানোও হয়েছে হাতে। ৮৩২টি উপাদান (কম্পোনেন্ট) রয়েছে ঘড়িতে। অথচ ওজন মাত্র ১.১৫ গ্রাম। এটাই এই ঘড়ির বিশেষত্ব।
ঘড়ির ৫৭ মিলিমিটারের কেসটি ১৮ ক্যারাট সাদা সোনায় তৈরি। তাতে বসানো রয়েছে ৩৪৪টি ঝকঝকে হিরে।
৫০ ঘণ্টা চালু থাকার মতো শক্তি সব সময়ই মজুত থাকবে ঘড়িতে। এই ঘড়ি তৈরি করা হয়েছে মাত্র ১৮টি। তার মধ্যে একটি উপহার দেওয়া হয়েছে পর্তুগাল ফুটবল তারকাকে।
আদতে হিরের গয়নার নকশাকার ছিলেন জেকব আরাবো। ১৯৮৬ সালে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে খোলেন প্রথম হিরের গয়নার দোকান। ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁর নকশা করা গয়না।
২০০২ সালে ঘড়ির নকশা করা শুরু করেন জেকব। ঘড়িতে ব্যবহার করতেন উজ্জ্বল রং। অন্তত পাঁচটি দেশের সময় দেখা যায় তাঁর তৈরি ঘড়িতে। সেগুলি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নাওমি ক্যাম্পবেল, বোনোর মতো খ্যাতনামীরা তাঁর নকশা করা ঘড়ি পরতে শুরু করেন।
এ বার সেই জেকবই রোনাল্ডোর হাতে পরিয়ে দিলেন নিজের সংস্থার তৈরি হিরেখচিত ঘড়ি। যাঁর হাতে পরিয়ে দিলেন, তাঁরও ঘড়ির শখ নেহাত কম নয়।
গোটা দুনিয়ায় ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আয়ের নিরিখে একেবারে উপরের দিকেই রয়েছেন ৩৮ বছরের রোনাল্ডো। পরিসংখ্যান বলছে, বছরে তিনি আয় করেন ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১,৭৮০ কোটি টাকা।
পাঁচ বার ফুটবলের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ব্যালন ডি’ওর জিতেছেন রোনাল্ডো। গত জানুয়ারিতেই সৌদি আরবের আল নাসার ক্লাবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানিয়েও একটি ঘড়ি উপহার দেওয়া হয়েছিল।
সেই ঘড়ির দাম ছিল ৬ লক্ষ ৩০ হাজার ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
সেই ঘড়িতে বসানো ছিল ৩৩৮টি দুর্মূল্য সবুজ পান্না। সৌদির পতাকার রঙে ঘড়ির রংও ছিল সবুজ। ঘড়ির উপর বসানো দামি নীল কেলাস। ঘড়ির স্ট্র্যাপের রং ঘড়িয়ালের মতো সবুজ।
শোনা যায়, এ রকম আরও অসংখ্য নামী সংস্থার দামি ঘড়ি রয়েছে রোনাল্ডোর সংগ্রহে। পৃথিবীর সব থেকে দামি ঘড়িও নাকি রয়েছে তাঁরই সংগ্রহে।