মাত্র দু’টি বাক্য। তাতেও সাত-পাঁচ কিছু বলা নেই। নেহাতই সাধারণ কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন যুবক। কিন্তু তাতেই ফল হল মারাত্মক। যুবকের সংস্থা বড়সড় বিপদের মুখে পড়ল।
চিনের বিখ্যাত কৌতুক সংস্থা শাংহাই শিয়াওগুয়ো কালচার মিডিয়া কোম্পানি। সে দেশের সরকার এই সংস্থাকে সম্প্রতি মোটা টাকা জরিমানা করেছে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির রোষের মুখে পড়েছে সংস্থাটি।
কৌতুক সংস্থার কাজই রসিকতা করা। লোক হাসিয়েই তাদের রোজগার। কিন্তু সম্প্রতি ওই সংস্থার এক কর্মীর রসিকতা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে মত চিন সরকারের। তারা ওই রসিকতা একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি।
অভিযোগ, রসিকতা করতে গিয়ে চিনের সেনাবাহিনী এবং স্বয়ং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অপমান করেছেন যুবক। তাই সংস্থাটিকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।
শাংহাই শিয়াওগুয়ো কালচার মিডিয়ার উপর চিন সরকার মোট ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ইউয়ান (চিনা মুদ্রা) জরিমানা আরোপ করেছে। ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে টাকার অঙ্ক প্রায় ১৭ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা।
এখানেই শেষ নয়, সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংস্থার কাছ থেকে অবৈধ রোজগারের অভিযোগে আরও সাড়ে ১৩ লক্ষ ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় কোটি টাকা) বাজেয়াপ্ত করবে চিনের কমিউনিস্ট সরকার।
বিতর্কের সূত্রপাত কিছু দিন আগে কৌতুক সংস্থার একটি শো-তে। ওই শো-এর সঞ্চালক ছিলেন সংস্থার কর্মী লি হাওশি। ঘটনার পর তাঁকেও শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
শো চলাকালীন অনেক কথার মাঝে লি-এর বলা দু’টি বাক্য নিয়ে যত বিতর্ক। তিনি নিজের বাড়ির পোষ্যদের নিয়ে মজার ছলে একটি গল্প শোনাচ্ছিলেন জনগণকে।
লি জানান, দু’টি পথকুকুরকে তিনি পোষ্য হিসাবে নিজের কাছে রেখেছিলেন। তারা এক বার একটি কাঠবেড়ালিকে তাড়া করেছিল। কাঠবেড়ালির সঙ্গে এই দ্বন্দ্বে তাদেরই জয় হয়।
কুকুরগুলির গল্প শোনাতে গিয়ে লি তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘‘ওদের কাজের ধরন খুব সুন্দর। ওরা লড়াই করে এবং যুদ্ধে জিতে আসে।’’
আপাত ভাবে এই বাক্যগুলিতে কোনও ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া না গেলেও চিনের রাজনীতিতে বাক্য দু’টি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। এর আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
বাক্য দু’টির তাৎপর্য খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে ১০ বছর পিছনে। ২০১৩ সালে এই বাক্যগুলি ব্যবহার করেছিলেন স্বয়ং চিনা প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকে বাক্য দু’টি চিনের রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে।
চিনের সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে গিয়ে ১০ বছর আগে জিনপিং এই বাক্য ব্যবহার করেছিলেন। তার পর থেকে দেশে এটি জনপ্রিয় সংলাপের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
কুকুরের প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্টের সেই বাণী ব্যবহার করে লি সরকার এবং সেনাবাহিনীর অপমান করেছেন বলে অভিযোগ। তাই এই ঘটনার পরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়েছে।
লি-এর ওই শোয়ের ভিডিয়ো চিনা সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এক নেটাগরিক তা পোস্ট করে অভিযোগ করেন, এতে সরকার এবং দেশের অসম্মান করা হয়েছে।
চিন সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে বলেছে, ‘‘কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে আমরা কখনওই পিপল্স লিবারেশন আর্মির অসম্মান করতে দেব না। এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।’’
শাংহাইতে ২০১৫ সাল থেকে ক্রিয়াশীল চিনের এই কৌতুক সংস্থা। তাদের তরফে গোটা ঘটনাকে ‘ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।