প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির অর্থনীতি গত কয়েক মাস ধরেই টালমাটাল। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) পাকিস্তানকে ঋণ দিতে অস্বীকার করলে আরও সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সঙ্গে দোসর রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সঙ্কটদীর্ণ পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার প্রায় শূন্য। অর্থনীতির এতই দুরবস্থা যে, এ বছর হজের কোটা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। দেশে মূল্যবৃদ্ধির হারও এক ধাক্কায় বেড়েছে কয়েক গুণ।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক মহলে চর্চা চলছে, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ চিন। চিনের কাছ থেকে গত মাসে ১০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮১৯২ কোটি) অর্থসাহায্য পেয়েছে ইসলামাবাদ।
চিন এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি অন্য একটি ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে। চিনা ধনকুবের তথা আলিবাবা গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা সম্প্রতি ঘুরে গেলেন পাকিস্তান।
জ্যাকের পাকিস্তানযাত্রা ছিল গোপনীয়তায় মোড়া। তিনি লাহোরে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত বিমানে আবার ফিরেও এসেছেন। কিন্তু এই ঝটিতি সফরের কথা আগে টের পায়নি কাকপক্ষীতেও।
জ্যাক যে পাকিস্তানে গিয়েছেন, সে কথা পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন সে দেশের বোর্ড অফ ইনভেস্টমেন্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহম্মদ আজ়ফার আহসান।
ওই সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২৯ জুন লাহোরে পৌঁছন চিনা ধনকুবের। তাঁর সঙ্গে সাত জন চিনা শিল্পপতি ছিলেন। কিন্তু কী উদ্দেশ্যে হঠাৎ পাকিস্তানে তাঁদের আগমন, তা স্পষ্ট নয়।
লাহোরে মোট ২৩ ঘণ্টা ছিলেন জ্যাক। হংকংয়ের একটি চার্টার্ড বিমানে চড়ে নেপাল হয়ে লাহোরে পৌঁছেছিলেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা। জ্যাক ফিরে যান ব্যক্তিগত বিমানে।
লাহোরে একটি গোপন আস্তানায় গিয়ে উঠেছিলেন জ্যাক। কোথায় ছিলেন, তা প্রকাশ করা হয়নি। কাজ সেরে ৩০ তারিখেই পাকিস্তান ছেড়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের কোনও সরকারি আধিকারিকের সঙ্গেও জ্যাক সাক্ষাৎ করেননি। সংবাদমাধ্যমের সামনেও আসেননি। কেন এত গোপনীয়তা অবলম্বন করেছেন চিনা শিল্পপতি, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
জ্যাকের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে ছিলেন পাঁচ জন চিনা শিল্পপতি। এ ছাড়া, ডেনমার্কের এক জন এবং আমেরিকার এক জনও ছিলেন জ্যাকের পাক সফরের সঙ্গী হিসাবে।
জ্যাকের পাকিস্তান সফরকে ঘিরে পাকিস্তানের অন্দরে এবং বাহিরে নানা ধরনের চর্চা চলছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে আজ়ফার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বাণিজ্যিক দুনিয়ায় ইতিবাচক ইঙ্গিত বয়ে আনতে পারে এই গোপন সফর।
অনেকের মতে, পাকিস্তানে বাণিজ্য শুরু করার কথা ভাবছেন জ্যাক। সেই কারণে তিনি লাহোর গিয়েছিলেন। পাক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাবার্তা, অনেক কাজ করে ফেলেছেন ২৩ ঘণ্টার সফরে।
তবে পাকিস্তানের কোনও ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে জ্যাকের বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি বা বৈঠকের আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টি ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এ দিকে আজ়ফার একটি টুইটে জানিয়েছেন, জ্যাকের পাকিস্তান সফর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে। এ সম্পর্কে পাকিস্তানে অবস্থিত চিনা দূতাবাসও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেনি।
জ্যাকের পাক সফর থেকে ইতিবাচক নির্যাস খুঁজছে পাকিস্তান। অনেকে একে পাক পর্যটনের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতে চাইছেন।
অর্থনৈতিক সঙ্কটে দীর্ণ পাকিস্তানে চিনা ধনকুবের জ্যাকের নজর পড়লে তা আগামী দিনে দেশটিতে ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। জ্যাকের বাণিজ্যের প্রসার পাকিস্তানকে সঙ্কটমুক্ত করতে পারে।
চিন সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পর প্রায় এক বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন জ্যাক। তিনি কী করছেন, কোথায় আছেন, এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। শোনা যায়, দীর্ঘ দিন বিদেশে ছিলেন তিনি। শেষমেশ গত বছরের মার্চ মাসে দেশে ফেরেন।
জাপানেও দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন জ্যাক। গত ১ মে টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সে কথা জানানো হয়েছিল।
জ্যাক একসময় শিক্ষকতা করতেন। মনে করা হয়েছিল, তিনি আবার পুরনো পেশায় ফিরছেন। পাকিস্তানে জ্যাকের সফর ঘিরে তাঁর বাণিজ্যিক কেরিয়ার নিয়েও নতুন করে চর্চা শুরু হল।