ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার বন্ধু সার্বিয়াকে গোপনে এইচকিউ-২২ ‘ভূমি থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে চিন।
ক্ষেপণাস্ত্র বোঝাই ছ’টি চিনা ওয়াই-২০ বিমান গত শনিবার সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের বিমানবন্দরে নেমেছে বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে।
বেলগ্রেডের নিকোলা টেসলা বিমানবন্দরে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম-সহ ওই চিনা বিমানগুলির অবতরণের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে সেই খবরে।
শত্রুপক্ষ যদি আমেরিকার পেট্রিয়ট বা রাশিয়ার এস-৩০০-র মতো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে, তা হলে ১৭০ কিলোমিটার পাল্লার চিনা এইচকিউ-২২ তার মোকাবিলা করতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের একটি মডেল বিমান হানা ঠেকাতেও ব্যবহার করা যায়।
সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিক চিনা ওই ক্ষেপণাস্ত্র আমদানির কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ২০১৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী চিন থেকে মাঝারি পাল্লার ওই ক্ষেপণাস্ত্র আনা হয়েছে।
চিন থেকে এইচকিউ-২২ ক্ষেপণাস্ত্র না কেনার জন্য ২০২০ সালে সার্বিয়াকে ‘বার্তা’ দিয়েছিল আমেরিকা।
কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পথেই হাঁটল বেলগ্রেড। ইউরোপে প্রথম চিনা অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসাবে সরকারি ভাবে বেলগ্রেডের নামে সিলমোহর পড়ল।
চিনের সাহায্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘প্রভাব বলয়ে’ থাকা বলকান রাষ্ট্রগুলির সামরিক শক্তিবৃদ্ধি ইউরোপে শান্তি বিঘ্নিত করবে বলে আমেরিকা-সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়ার আশঙ্কা।
বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, ম্যাসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং স্লোভেনিয়া— এগুলি বলকান অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
তিন দশক আগে যুগশ্লাভিয়া ভেঙে সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং স্লোভেনিয়া তৈরি হয়।
গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও চিনের সাহায্যে সার্বিয়া অস্ত্র মজুত করছে। কসোভোয় নতুন করে সেনা অভিযানের উদ্দেশ্যেই এমন পদক্ষেপ বলে আশঙ্কা পশ্চিম ইউরোপের।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সার্বিয়ার পাশাপাশি রাশিয়া এবং চিনও স্বাধীন দেশ হিসেবে কসোভোকে স্বীকৃতি দেয় না। ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে বেরিয়ে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল কসোভো। সেখান থেকেই সামরিক সঙ্ঘাতের সূত্রপাত।
আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট (নেটো)-এর দুই সদস্য দেশ— তুরস্ক এবং বুলগেরিয়াতেও সম্প্রতি চিনা অস্ত্র সরবরাহের খবর সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে, দ্রুত বিশ্বের সর্বোত্তম শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক অনলাইন পত্রিকা ‘দ্য ওয়ারজোন’ সার্বিয়ার বিমানবন্দরে অস্ত্রবোঝাই চিনা বিমানের অবতরণকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছে। এর ফলে ইউরোপে নতুন সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
সার্বিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার রাডিক বলেছেন, ‘‘চিনারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে।’’
আলেকজান্ডার এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পড়শি দেশগুলি সার্বিয়াকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। সার্বিয়ার ওই পড়শি দেশগুলি নেটো জোটের সদস্য বলেও জানান তিনি।
যদিও ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা করে মস্কোর বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সার্বিয়া। সরাসরি ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীর সমালোচনা করেনি বেলগ্রেড।
চিনা ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি নিয়ে বেলগ্রেডের যুক্তি, সার্বিয়া যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য পশ্চিমী সামরিক জোটে যোগ দিতে চায়, তবে তাদের সামরিক সরঞ্জামগুলিকেও পশ্চিমী মানদণ্ডের সমকক্ষ করে তুলতে হবে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে ইইউ সদস্যপদ চাওয়া সার্বিয়া ইতিমধ্যেই রাশিয়া ও চিনের ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে।
নজরদারির পাশাপাশি ‘উইং লুং’ সিরিজের ড্রোনগুলি বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে মাটিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
মস্কো এবং বেজিংয়ের মতো বেলগ্রেডও বেশ কিছু দিন ধরেই মায়ানমারের সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে সাহায্য করেছে।