আর ঠিক ২৯ দিন বাকি। আগামী ১৩ জানুয়ারি ভোট তাইওয়ানে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষ। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তাইওয়ানে তত বাড়ছে উত্তাপ।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপর তাইওয়ান নামক দ্বীপরাষ্ট্রটিকে চিনের বিতর্কিত পড়শি হিসাবে চেনেন সকলে। স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে তাইওয়ানের অস্তিত্বই স্বীকার করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে।
তাইওয়ানের ভূখণ্ডের উপর দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের দাবি জানিয়ে এসেছে চিন। তারা তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে। আলাদা করে রাষ্ট্র হিসাবে তাইওয়ানের অস্তিত্ব তারা স্বীকার করে না।
ভূখণ্ডের অধিকার নিয়ে চিন এবং তাইওয়ানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। প্রায়ই চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে তাইওয়ানে হামলা, সংঘর্ষ এবং সীমান্তের কাছে সামরিক মহড়ার অভিযোগ ওঠে।
তাইওয়ানে ভোটকে কেন্দ্র করে চিন-তাইওয়ান সেই দ্বন্দ্বের উত্তাপে নতুন করে আঁচ লেগেছে। চিনের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছে তাইওয়ান সরকার।
তাইওয়ানের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের ভূখণ্ডের সংবেদনশীল অঞ্চলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে চিনা সেনাবাহিনী। তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই।
শি জিনপিংয়ের নির্দেশেই চিনা ফৌজ এই কাজ করছে বলে অভিযোগ তাইওয়ানের। এর জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেছে তাইওয়ান সরকার। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সতর্কও করা হয়েছে।
ভোটারদের কী ভাবে প্রভাবিত করার পরিকল্পনা রয়েছে চিনের? তাইওয়ানের দাবি, তারা সীমান্তের কাছে সামরিক মহড়া করে, সেনা পাঠিয়ে ওই এলাকার ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
তাইওয়ানের ভোটারদের প্রভাবিত করে কী লাভ চিনের? বস্তুত, তাইওয়ানে যে প্রার্থীরা চিনপন্থী, যাঁরা চিনের সঙ্গে তাইওয়ানের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির পক্ষে কথা বলেন, তাঁদের জয় চান জিনপিং।
চিনপন্থী প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতেই চিনা ফৌজ মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ। যদিও তাইওয়ানের অভিযোগের জবাবে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি বেজিং।
চিনের কৌশল প্রকাশ্যে এনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের উদ্দেশে তাইওয়ান আধিকারিকদের বার্তা, তাঁদের শান্তি এবং যুদ্ধের মধ্যে থেকে যে কোনও একটি পথ বেছে নিতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাইওয়ানবাসীকে।
তাইওয়ানের নির্বাচনের জন্য সংবেদনশীল এলাকা সমুদ্রসৈকত থেকে অন্তত ৪৪ কিলোমিটার ভিতরে। চিনা ফৌজ আকাশ এবং জলপথে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে বলে দাবি।
শুধু নভেম্বর মাসেই চিনের তরফে অন্তত চার বার এই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। চার বারই তাইওয়ানের তরফে চিনের সৈনিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
নির্বাচনের মুখে চিনের মতলব বুঝে সীমান্তে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করেছে তাইওয়ান। বাড়তি সেনা পাঠানো হয়েছে ওই এলাকাগুলিতে। বার বার বাধা দেওয়া হয়েছে চিনকে।
শুধু নৌসেনা এবং বিমানবাহিনী দিয়ে ভয় দেখানোই নয়, তাইওয়ানে চিনের দিক থেকে সাম্প্রতিক অতীতে উড়ে এসেছে একাধিক বেলুনও। বেলুন পাঠিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
তাইওয়ানের মসনদে চিনপন্থী শাসক বসলে জিনপিংয়ের অনেক সুবিধা হবে। তাঁকে দিয়ে চিনের অনুকূল একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়ে নিতে পারবেন জিনপিং। তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।