সাধারণত শীতকালে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে এবং শরীর গরম রাখতে মানুষ কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকে। তবে কোনও জিনিস ঠান্ডা রাখতে কম্বলের ব্যবহার! অদ্ভুত মনে হলেও এমনই উপায় বার করেছেন চিনের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। কম্বল দিয়ে হিমবাহ ঢেকে তাক লাগাচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু হঠাৎ চিনের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কম্বল দিয়ে হিমবাহ ঢেকে রাখার প্রয়োজন পড়ল কেন?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উষ্ণায়নের কারণে চিনের শীতপ্রধান এলাকাগুলির হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর সেই গলনের হার কমাতেই প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি হিসেবে চিনের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই কম্বল ব্যবহার করছেন।
তবে বাড়িতে যে কম্বল ব্যবহার হয়, তার থেকে এই কম্বলগুলি আলাদা। এই বিশেষ ‘জিওটেক্সটাইল’ কম্বলগুলি পরিবেশ বান্ধব। তৈরি করতে খরচও বিস্তর।
চিনের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বিশেষ কম্বল হিমবাহপৃষ্ঠ এবং সূর্যের মধ্যে ঢাল হিসাবে কাজ করবে। যার ফলে সূর্যরশ্মি সরাসরি হিমবাহে পড়ে না।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পদ্ধতিতে হিমবাহপৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির বিকিরণ এবং তাপ বিনিময়কে খুব সহজে আটকিয়ে বরফের দ্রুত গলে যাওয়া রোধ করা যেতে পারে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, কয়েক বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার পর তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশে রয়েছে দাগু হিমবাহ। সেই হিমবাহের দ্রুত গলে যাওয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
বিগত কয়েক দশক ধরে, দাগুর আশপাশে বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষের জীবন এই হিমবাহকে কেন্দ্র করেই। হিমবাহের বরফগলা জল ওই এলাকায় বসবাসকারীদের কাছে পানীয় জল হিসাবে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি ওই জল থেকে বিদ্যুৎও উৎপন্ন করা হয়।
প্রতি বছর এই হিমবাহ এলাকায় দু’লক্ষেরও বেশি পর্যটকের ভিড় হয়। যা দু’হাজার জনেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জোগায়।
আর সেই কারণেই দাগু হিমবাহ বাঁচাতে হিমবাহটির প্রায় ৫০০ বর্গমিটার এলাকা বিশেষ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
২০২০ সালের অগস্টে ‘নর্থওয়েস্ট ইন্সটিটিউট অফ ইকো-এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস’ সংস্থার বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। আর সেই পরীক্ষা করতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার মিটার উপরে দাগু হিমবাহকেই বেছে নেওয়া হয়।
চিনের অন্যান্য হিমবাহের তুলনায় দাগু হিমবাহ দ্রুত গলছিল। আর সেই কারণেই এই হিমবাহকেই পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
দাগু হিমবাহকে একটি নাতিশীতোষ্ণ হিমবাহ হিসাবে বিবেচিত হয়। আর সেই কারণেই সেটি সাধারণ হিমবাহের চেয়ে দ্রুত গলে যায়।
‘নর্থওয়েস্ট ইন্সটিটিউট অফ ইকো-এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস’-এর বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, এই কম্বলের ব্যবহারে দাগু হিমবাহের বরফ গলার গতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ কমেছে।
দাগু হিমবাহের পর চিনের বাকি হিমবাহগুলিতেও এই বিশেষ কম্বল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
চিনে অনেক ছোট হিমবাহ রয়েছে যেগুলোর আয়তন এক বর্গকিলোমিটারের কম। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হিমবাহগুলির বরফ গলে যাওয়ার গতি বেড়েছে।
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, উষ্ণায়নের কারণে ১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ শতাংশ হিমবাহ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরাও এক দশকের বেশি সময় ধরে হিমবাহ রক্ষার জন্য একই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন।