গত বছরে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে চিনে থাকা সাতটি আমেরিকান সংস্থায় হানা দিয়েছিল শি জিনপিং সরকার! এমনটাই দাবি করলেন বেজিংয়ে থাকা আমেরিকার রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস।
রবিরার সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে নিকোলাস এই দাবি করেছেন। নিকোলাস এ-ও জানিয়েছেন, আমেরিকার যে সব ব্যবসায়ী চিনে ব্যবসা করতে চান তাঁদের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের।
নিকোলাস বলেন, ‘‘এক দিকে চিন বলছে যে তাদের দরজা ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত। তারা আমেরিকা এবং জাপানের ব্যবসায়ীদের চায়। অন্য দিকে, তারাই আবার গত মার্চ থেকে আমেরিকার ছ’-সাতটি সংস্থায় অভিযান চালিয়েছে।’’
নিকোলাস যোগ করেছেন, ‘‘চিনের গোয়েন্দারা আমেরিকার সংস্থায় ঢুকেছে এবং ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে। তারা যে কারণ দেখিয়ে এমনটা করছে, তা খুব অযৌক্তিক বলে আমি মনে করি।’’
উল্লেখ্য, জিনপিং সরকার যে চিনে থাকা আমেরিকার সংস্থাগুলিতে অভিযান চালিয়েছে, তা প্রকাশ্যে এসেছিল আগেই। তবে নিকোলাসের উদ্ধৃতির পর মোট সংখ্যা প্রকাশ্যে এসেছে।
নিকোলাস দাবি করেছেন, গত বছর আমেরিকার পরামর্শদাতা সংস্থাগুলির উপর নজরদারি শুরু করেছিল চিন। হানাও দিয়েছিল সেই সংস্থাগুলিতে। কয়েক জন কর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়।
চিনে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সে দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ হারাচ্ছেন বলেও দাবি নিকোলাসের।
মার্চ মাসে, বেজিংয়ে থাকা আমেরিকার পরামর্শদাতা সংস্থা ‘মিন্টজ’ গোষ্ঠীর অফিসে হানা দেন চিনা গোয়েন্দারা। জরিমানা করা হয়। সংস্থার পাঁচ চিনা কর্মীকে আটকও করা হয়। এর পরেই চিন থেকে নিজেদের ব্যবসা গোটানোর কথা ঘোষণা করে ওই সংস্থা।
চিনের পুলিশ গত বছরের এপ্রিলে আমেরিকার ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘বেইন অ্যান্ড কো’-র সাংহাই অফিসেও হানা দিয়েছিল।
মে মাসেও আমেরিকার এক সংস্থার অফিসে হানা দেয় চিনের পুলিশ। যদিও সে বিষয়ে বিশদে কিছু জানায়নি ওই সংস্থা।
চিন গত বছরের জুলাই মাস থেকে গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে আইনে রদবদল করেছে। সেই আইনে গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞাও বদলেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা।
নিকোলাস সেই আইন সম্পর্কে বলেন, ‘‘নতুন আইন এমন এক উপায়ে লেখা হয়েছে যাতে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ আইনি এবং গ্রহণযোগ্য কাজ করলেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন।’’
সংস্থার আর্থিক সমস্যা সংক্রান্ত কোনও সাধারণ বিষয়ও গুপ্তচরবৃত্তি বলে চিহ্নিত হতে পারে বলে জোর দিয়েছেন নিকোলাস।
নিকোলাস আরও বলেন, ‘‘আমি মনে করি চিনের জনগণ এবং চিনের বিভিন্ন সংস্থার সম্পর্কে সে দেশের সরকার তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’’ আমেরিকার সংস্থাগুলির সঙ্গে সমস্যার মূলেও সেই চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন নিকোলাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ নিয়ে কড়াকড়ির কারণে চিনে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। যা সে দেশের জন্য উদ্বেগের বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনা আবহে লকডাউনের কারণে চিনের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চিনে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার।
চিনের ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ ফরেন এক্সচেঞ্জ’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চিনের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২০২৩ সালে ৮২ শতাংশ কমেছে।
উল্লেখযোগ্য, গত বছর চিনের নিরাপত্তা মন্ত্রক তার নাগরিকদের পাল্টা গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। সন্দেহজনক কার্যকলাপের খবর সরকারের কাছে পৌঁছে দিলে পুরস্কৃত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল সে দেশের সরকার।
জিনপিং সরকারের নিরাপত্তা মন্ত্রক গত বছর এ-ও দাবি করেছিল, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার দুই গুপ্তচরকে ধরে ফেলেছে তারা।