নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উৎসাহ কম ছিল না। রবিবার সন্ধ্যায় মোদী-সহ ৭২ জন সাংসদ রাষ্ট্রপতি ভবনে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী। বাকিরা কেউ প্রতিমন্ত্রী, কেউ আবার স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি হলেন নতুন মন্ত্রিসভার ধনীতম সদস্য!
এ বারের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। এনডিএ ২৭২ জাদুসংখ্যা পার করলেও বিজেপি আটকে গিয়েছে ২৪০-এ। তাই নতুন সরকার গড়তে মোদী, শাহদের নির্ভর করতে হয়েছে এনডিএ-র শরিকদের উপর। মন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে।
এনডিএ-র অন্যতম শরিক দল অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ১৬টি আসন পেয়েছে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল। টিডিপি সাংসদদের মধ্যে কারা মোদীর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন, তা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে।
দেখা গেল, রবিবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি-র দুই সাংসদ। এক জন পূর্ণমন্ত্রী এবং এক জন প্রতিমন্ত্রী। টিডিপি নেতা কে রামমোহন নায়ডু মন্ত্রী হয়েছেন তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায়। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি।
কে রামমোহন ছাড়াও মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন তিনি। তার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। চন্দ্রশেখরই মোদীর নতুন মন্ত্রিসভার ধনীতম সদস্য।
অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টু লোকসভা কেন্দ্র থেকে এ বার টিডিপি-র টিকিটে লড়েছিলেন চন্দ্রশেখর। তিনি প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটে হারিয়েছেন জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআরসিপি-র প্রার্থী কিলারি ভেঙ্কটা রোয়াইয়াকে।
গুন্টুরের বাসিন্দা চন্দ্রশেখর। সেখানকার বুরিপালেম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৪৮ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ পেশায় চিকিৎসক। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাশ করেন চন্দ্রশেখর। তার পর বিদেশে পাড়ি দেন তিনি।
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং লিনাইল হাসপাতালে পাঁচ বছর প্র্যাকটিস করেছেন চন্দ্রশেখর। এ ছাড়াও ডাক্তারি পড়ুয়াদের পড়াতেন তিনি। পাশাপাশি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছিলেন চন্দ্রশেখর। নাম ‘ইউ ওয়ার্ল্ড’। বর্তমানে সেই সংস্থার সিইও তিনি।
আমেরিকাতে থাকতেই সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন চন্দ্রশেখর। তাঁর পরিবার বরাবরই চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের সমর্থক। টিডিপি এনআরআই সেলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। আমেরিকায় বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন চন্দ্রশেখর।
২০২০ সালে আমেরিকায় থাকাকালীন তরুণ উদ্যোক্তা হিসাবে পুরস্কার জেতেন। ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’ অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। এ ছাড়াও পেন্নাসানি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চন্দ্রশেখর। বিভিন্ন স্বাস্থ্যশিবির আয়োজন করে এই ফাউন্ডেশন। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করে তারা।
২০১৪ সাল থেকে গুন্টুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন জয় গাল্লা। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আচমকাই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন। তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে টিডিপি প্রার্থী করে চন্দ্রশেখরকে।
সেই চন্দ্রশেখরের সম্পত্তির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ভোটাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআর-এর দেওয়া দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চন্দ্রশেখরই দেশের ধনীতম মন্ত্রী।
এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আট হাজার ৩৬০ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে চন্দ্রশেখরেরই।
নিজের সম্পত্তির পাশাপাশি পারিবারিক সম্পত্তিও রয়েছে চন্দ্রশেখরের। সেই কারণেই অন্য সাংসদদের তুলনায় আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে চন্দ্রশেখর।
এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই কোটিপতি। যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের থেকেও বেশি। সে বার কোটিপতি সাংসদদের হার ছিল ৪৪ শতাংশ।