মাতৃত্ব ও গর্ভদান, এই দুই বিষয় নিয়ে জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক কোনও স্তরেই আলোচনা বিরল নয়। এরই মধ্যে গর্ভদানের পুরনো আইনে বাধা পেয়ে গর্ভদানের মাধ্যমে মা হওয়ার পথ থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছিলেন দেশের বহু মহিলা।
সেই বাধার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার বদল আনল সারোগেসি বা গর্ভদানের ক্ষেত্রে। বিবাহিত দম্পতির মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী কারও শারীরিক সমস্যা থাকলে, যে কোনও এক জনের সুস্থ জননকোষ ব্যবহার করেই এ বার থেকে গর্ভদানের পদ্ধতি নিয়ে সন্তান পেতে পারবেন তাঁরা।
সে ক্ষেত্রে সংশোধিত ‘গর্ভদান আইন, ২০২২’ অনুযায়ী জেলা মেডিক্যাল বোর্ডের শংসাপত্র লাগবে, যাতে উল্লেখ থাকবে, স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনও এক জনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে এবং জননকোষদাতার প্রয়োজন রয়েছে।
তবে দু’জনেরই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে চলবে না। সিঙ্গল মাদার বা একা-মহিলারা (বিধবা বা বিবাহবিচ্ছিন্না) নিজেদের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুদাতার সাহায্যে গর্ভদান প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রেও মহিলাকে নিজের ডিম্বাণু ব্যবহার করতে হবে। ডিম্বাণুদাতার সাহায্য নেওয়া যাবে না।
পুরনো গর্ভদান আইনে দম্পতির দু’জনেরই জননকোষ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক ছিল। নির্দিষ্ট করে এই বিষয়টি বদল করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রক।
সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহিলাদের থেকে জননকোষ দান নিয়ে আবেদন পায়।
তাঁরা জানান, কোনও বিরল যৌন-সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। সেই কারণেই তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারছেন না।
কিন্তু ডিম্বাণু-দানে অনুমতি না থাকায় গর্ভদান প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েও মা হতে পারছেন না তাঁরা। এর পরেই আইন সংশোধনের কথা ভাবা শুরু হয়।
গত বছর মার্চ মাসে গর্ভদান প্রক্রিয়ায় জননকোষ দানে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এর পরেই শীর্ষ আদালতের কাছে একের পর এক আবেদন আসতে শুরু করে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট পুরনো আইনটির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শীর্ষ আদালত জানায়, ‘‘গর্ভদানের যে আসল লক্ষ্য, তা এই আইনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।’’
গর্ভদান আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন ১৪টিরও বেশি দম্পতিকে ডিম্বাণু-দাতার সাহায্য নেওয়ায় অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এ বছর জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের কাছে প্রশ্ন করে, এত মহিলা ক্ষোভ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কেন সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না?
জবাবে তখনই কেন্দ্রের প্রতিনিধি অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি জানিয়েছিলেন, গর্ভদান আইনে সংশোধন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র।