থাবা বসিয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। চড়া তাপমাত্রায় পুড়ছে দেশ, শহর, গ্রাম। তাপপ্রবাহে নাকাল বাংলাদেশও। নাকাল কংক্রিটের শহর ঢাকাও। সেই ঢাকাকে কী ভাবে চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করা যায়? সেই দায়িত্বই পেলেন বুশরা আফরিন। ঢাকার ‘চিফ হিট অফিসার’ তিনি। বাংলায় শীর্ষ তাপনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।
এলেনি মিরিভিলিকে প্রথম ‘গ্লোবাল চিফ হিট অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর পর একে একে আমেরিকার মায়ামিতে জেন গিলবার্ট, চিলিতে ক্রিস্টিনা হুইডোব্রো টর্নভাল, সিয়েরা লিওনেতে ইউজেনিয়া কার্গবো, গ্রিসের আথেন্সে এলিসাভেট বার্জিয়ান্নি, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ক্রিস্টা মিলনে এবং টিফানি ক্রফোর্ড এই পদে এসেছেন। এই তালিকার শেষতম সংযোজন ঢাকায় বুশরা আফরিন। বাংলাদেশে এই প্রথম।
বুশরার বাবা ঢাকার উত্তর পুরসভার মেয়র। নাম আতিকুল ইসলাম। পোশাকেরও ব্যবসা রয়েছে তাঁর। বাবাকে দেখেই সম্ভবত সরকারি কাজের দিকে ঝুঁকেছেন বুশরা।
বুশরা ঢাকাতেই বড় হয়েছেন। পড়াশোনা কানাডার গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ়ে। দেশে ফিরে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি। এ বার নতুন পদ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়। এঁরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন।
মানুষকে সচতেন করার পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পও গ্রহণ করেন ‘চিফ হিট অফিসার’। যেমন বৃক্ষরোপণ, ছায়া রয়েছে এমন স্থানের ব্যবস্থা করা। তাপের কারণে যে সব রোগ হয়, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও ‘চিফ হিট অফিসারের’ কাজ। এই নিয়ে সব সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন এই আধিকারিক।
শহরে সব এলাকায় তাপমাত্রা সমান হয় না। যেখানে কলকারখানা, অনেক দফতর, শপিং মল রয়েছে, সেখানে বাতানুকূল যন্ত্রের কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। এ সব এলাকায় গাছপালাও কম থাকে। এগুলিকে বলে আরবান হিট আইল্যান্ড বা উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট অঞ্চল। শহরে এগুলির সংখ্যা কমানোরও চেষ্টা করেন ‘চিফ হিট অফিসার’।
তাঁকে ঠিক কী কী কাজ করতে হবে, তা বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে নিজেই জানিয়েছিলেন বুশরা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা হিট মেসেজিং নিয়ে কাজ করব, সচেতন করব। কারণ সচেতনতা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাঁরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ, তাঁরা যেন নিরাপদে থাকেন। এগুলো আমাদের এখানে মানুষ জানে না।’’
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমেরিকার একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে ঢাকা উত্তর পুরসভা। অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের সঙ্গে ইতিমধ্যে চুক্তিও সই করেছে তারা।
আমেরিকার এই সংস্থা বিভিন্ন দেশের প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে। তার পর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য চুক্তি করে। নিয়োগ করে ‘চিফ হিট অফিসার’। বুধবার ঢাকা উত্তর পুরসভার সঙ্গে চুক্তি সই হয় সংস্থার।
চুক্তি সইয়ের পরেই বুশরাকে ‘চিফ হিট অফিসার’ পদে বসানোর কথা ঘোষণা করে প্রশাসন। যদিও বুশরার বেতন-সহ যাবতীয় ভাতা দেবে আমেরিকার ওই সংস্থা।
এই চুক্তির অধীনে দু’বছরে ঢাকায় দু’লক্ষ গাছ বসানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। সেই নিয়ে ঘোষণাও করে দিয়েছে।
চলতি বছর এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ঢাকায় তাপপ্রবাহ হয়েছে। সে দেশের মৌসম ভবন জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের থেকে ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। ১৬ এপ্রিল ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর পরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বুশরা এই তাপপ্রবাহ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিডি নিউজ় ২৪-কে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘তীব্র তাপপ্রবাহের একটা অদৃশ্য ঝুঁকি। এই বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ মানুষকে এ বিষয়ে আগে থেকেই সাবধান করেছে। তাপপ্রবাহের মধ্যে বাইরে গেলে কী করতে হবে, সে পরামর্শ দিয়েছে তারা। তবে বাংলাদেশে এখনও তা হয়নি।’’
বুশরা এ-ও মনে করেন, এই তাপপ্রবাহের ফল সব থেকে বেশি ভুগতে হচ্ছে মহিলাদের। তাই তিনি এগিয়ে এসে মানুষকে সচেতন করতে চান।
কী পরিকল্পনা নেবেন তিনি? বুশরার কথায়, ‘‘আমাদের এখানে জায়গা কম। তাই ছোট ছোট বন কী ভাবে তৈরি করা যাবে, তা ভাবতে হবে। তাপপ্রবাহের সমস্যার বহু সমাধান রয়েছে। সেগুলিও খুঁজে বার করতে হবে। কী করব, কী ভাবে করব, তার জন্য গঠন করা হবে টাস্ক ফোর্স।’’