এমন প্রাণী যে চিবিয়ে খেতে পারে মানুষের ‘মাথা’। আসল নাম ‘নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি’। তবে চিকিৎসক মহল একে চেনে ‘ঘিলুখেকো অ্যামিবা’ বলে। দিন কয়েক আগে এই অ্যামিবার সংক্রমণে মারাও গিয়েছেন এক মধ্যবয়সি।
রোগীর বয়স ৫০। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে। সম্প্রতি তাইল্যান্ডে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়।
রোগ নেই। তেমন উপসর্গও নেই। কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করানো হয়েছিল। কোরিয়ার ‘ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সি’ জানিয়েছে, ওই মধ্যবয়সি ‘নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি’র শিকার।
এর আগে এই রোগের কথা জানা গেলেও সাম্প্রতিক অতীতে এর কারণে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। হতে পারে মৃত্যুও।
তবে মানবদেহ থেকে এই সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা তুলনামূলক ভাবে কম। বরং যে এলাকায় এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেখানকার জলে সাঁতার কাটতে বা জলে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘিলুখেকো অ্যামিবা সাধারণত থাকে তাজা জলের পুকুর, হ্রদ, নদী অথবা খাল-বিলে। কোনও বিশেষ দেশ নয়। পৃথিবী জুড়ে যে কোনও দেশে, যে কোনও স্বচ্ছ জলের জলাশয়ে এই অ্যামিবার দেখা মিলতে পারে।
সাঁতার কাটার সময় বা জলে নামলে জল নাকে-মুখে-কানে ঢোকে। জলে এই অ্যামিবা থাকলে সেই সময়েই জলবাহিত হয়ে নাক দিয়ে প্রবেশ করতে পারে শরীরের ভিতরে। সাধারণত নদী, পুকুর বা হ্রদে ডুব সাঁতার দিলে এমন হতে পারে।
জলবাহিত অ্যামিবা তখন নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। মস্তিষ্কের ধমনীগুলিকে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে ঘিলুখেকো অ্যামিবা। শুরু হয় মস্তিষ্কে মারাত্মক সংক্রমণ। যার নাম প্রাইমারি অ্যামেবিক মেনিঙ্গোএনসেফেলাইটিস (প্যাম)। মস্তিষ্কে এই সংক্রমণ হলে তা থেকে মৃত্যু এক রকম অবশ্যম্ভাবী।
তবে শুধু জলে নামলেই এই সংক্রমণ হবে, এমন নয়। অ্যামিবা রয়েছে এমন কলের জলে নাক পরিষ্কার করা হয় কিংবা নাক দিয়ে সেই জল টানা হয়, তা হলেও সেই জলবাহিত হয়ে এই অ্যামিবার শরীরে প্রবেশের আশঙ্কা থাকে।
প্যাম সংক্রমণের প্রথম উপসর্গ সাধারণত দেখা যায় সংক্রমণ ছড়ানোর ৫ দিন পরে। তবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। সংক্রমণ ছড়ানোর ১ থেকে বারো দিনের মধ্যে যে কোনও সময়েই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কী দেখে বুঝবেন সংক্রমণ শুরু হয়েছে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্যামের সংক্রমণে প্রবল মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, গা গোলানো এবং বমি হতে পারে। তবে এই সমস্ত উপসর্গ অনেক রোগের সঙ্গেই মিলতে পারে।
এর পাশাপাশি প্যামে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘাড়ে যন্ত্রণা, ঘাড় ঘোরাতে না পারা, চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাওয়া, মনসংযোগের অভাব, খিঁচুনি, ঘোর লাগা এমনকি, কোমাও হতে পারে।
উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকে এবং সাধারণত ৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় রোগীর। তবে এ ব্যাপারেও বাঁধাধরা নিয়ম নেই কোনও। সংক্রমণ ছড়ানোর ১ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে যে কোনও সময়েই মৃত্যু হতে পারে রোগীর।
১৯৩৭ সালে আমেরিকায় প্রথম সন্ধান মেলে এই রোগের।
আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, এই রোগে ১৯৬২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫৪ জনের মধ্যে শুধুমাত্র ৪ জনই বেঁচেছেন।
তথ্য বলছে এই রোগে মৃত্যুর হার ৯৭ শতাংশ।
এখনও পর্যন্ত এ রোগের তেমন কোনও চিকিৎসা নেই।
তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত মানবদেহ থেকে মানবদেহে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও প্রমাণ পাননি তাঁরা।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ‘নিগ্লোরিয়া ফাউলেরি’তে মৃত্যু হয়েছে ৩৮১ জনের। সমস্ত মৃত্যু হয়েছে মূলত আমেরিকা, ভারত এবং তাইল্যান্ডে।