ঘূর্ণিঝড়ের গতিতে বইছে হাওয়া। আর তাতে গতি পাচ্ছে তুষার-তাণ্ডব! জায়গায় জায়গায় বরফের স্তূপ। যে দিকে চোখ যায় শুধু সাদা রং। সঙ্গে মত্ত ঠান্ডা হাওয়া। এটাই এখন আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের ছবি।
‘বম্ব সাইক্লোন’- এ বিধ্বস্ত আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশ। হাজার হাজার বাড়ি বিদ্যুৎহীন।
‘বম্ব সাইক্লোন’— প্রাকৃতিক বিপর্যয়টিকে এই নামেই অভিহিত করছেন আবহবিদেরা। যার সাক্ষী থাকলেন আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলির কমপক্ষে সাত কোটি বাসিন্দা।
আমেরিকার হাওয়া অফিস ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’ (এনডব্লিউএস) জানাচ্ছে, প্রায় দু’ ফুটের উপর বরফ জমে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তা ছাড়া শীতল থেকে শীতলতর হাওয়ার পূর্বাভাস বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস, নিউ ইয়র্ক ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায়।
গাছপালা, রাস্তা, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো গাড়ি— সবই সাদা বরফে ঢাকা। পাল্লা দিয়ে চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। কাঁপছেন মানুষ।
বহু এলাকার সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাতিল হচ্ছে একের পর এক উড়ান।
রবিবার প্রবল ঠান্ডা হাওয়া আর তুষার ঝড়ে শুধু ম্যাসাচুসেটসেই হাজার হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে।
ম্যাসাচুসেটস, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক থেকে পেনসিলভানিয়া— সর্বত্র এ বার রেকর্ড তুষারপাত হয়েছে।
বস্টন থেকে নিউ ইয়র্ক সর্বত্রই— প্রায় একই ছবি। আমেরিকার হাওয়া অফিস এনডব্লিউএস জানিয়েছে, ‘বম্ব সাইক্লোন’- এ খারাপ হচ্ছে আবহাওয়া, আশঙ্কা আরও বড় তুষার ঝড়ের।
এ বার ‘বম্ব সাইক্লোন’-এ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশ। হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়েছে তাপমাত্রা। তার উপর প্রবল শীতল হাওয়ার দাপাদাপি।
হাওয়া অফিসের সতর্কতা, তাপমাত্রা আরও নীচে নামবে। ঠান্ডায় তীব্র সমস্যায় পড়েছেন মানুষজন। তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এই পরিস্থিতিতে ‘ওয়ার্মিং সেন্টার’- এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবির।
ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ক্যারিন পলিটো জানান, এই মারাত্মক ঠান্ডায় যে বাসিন্দাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই, তাঁদের জন্য আশ্রয় শিবির তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, রাস্তায় বরফ সরানোর কাজে ইতিমধ্যে নেমে পড়েছেন কর্মীরা। পরিবহণ দফতর চেষ্টা করছে কী ভাবে অন্তত ন্যূনতম যাতায়াতের পথ বের করা যায়।
কেন ‘বম্ব সাইক্লোন’ নাম? ঠান্ডা হাওয়া, শৈত্যপ্রবাহ আর তীব্র তুষারপাত, প্রাকৃতির এই ত্রিমুখী আগ্রাসন যেন বোমা পড়ার মতো আছড়ে পড়ে। যে কারণে বিপর্যয়কে এ নামেই অভিহিত করছেন আবহবিদেরা।
আবহাওয়া পরিস্থিতির তাৎপর্য বিবেচনা করে নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এ সময়ে বিপর্যস্ত এলাকার বাসিন্দাদের খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা না-রাখার আবেদন জানিয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসন জানাচ্ছে, গত কয়েক বছরে এমন তুষার ঝড় হয়নি। শুধু শনিবারই প্রায় সাড়ে তিন হাজার উড়ান বাতিল করা হয়। রবিবার আরও এক হাজার উড়ান বাতিল করা হয়েছে। সোমবার আরও এক হাজার। তিন দিনে মোট পাঁচ হাজার বিমান বাতিল করা হয়েছে।
অন্য দিকে, লং আইল্যান্ডে গাড়ির ভিতরে বরফজমা অবস্থায় এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছে প্রশাসন। টাইমস স্কোয়ারের অবস্থাও একই রকম।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘‘বিপর্যয় এখনও কাটেনি। শনিবারের পর অতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে ঝড়।’’ শহরবাসীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘দয়া করে বাড়িতেই থাকুন। খুব প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরবেন না। আমাদের কর্মীরা এখন রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন।’’
আমেরিকার আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কোথাও ১০ কোথাও ৩০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝড় বইছে। তার সঙ্গে তুষারপাত। ফলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
খুব দ্রুত পরিস্থিতির বদল হবে বলে মনে করছে না আমেরিকার হওয়া অফিস।