পর্দার যিনি ভিলেন, বাস্তবে তিনি হিরো— বলিউডে এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। আবার পর্দার সাদাসিধে ভালমানুষ সাজা আলোকনাথকে পর্দার বাইরে খলনায়ক হিসেবেও দেখেছে ‘মিটু’ আন্দোলনে ভাসা ভারতীয় সিনেমা জগৎ। তবে অভিনেতা শক্তি কপূরকে এই দু’টি ভাগের একটিতেও ফেলা যাবে না। বলিউডের এই ‘ঠান্ডা রক্তের’ খলনায়ক পর্দায় যেমন খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বাস্তবেও নাকি কখনও সখনও সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
কন্যা শ্রদ্ধা কপূর বলিউডের নামী অভিনেত্রী। শক্তির অভিনয় প্রতিভা নিয়েও কোনও দিন প্রশ্ন ছিল না সমালোচক মহলে। তবে শক্তি তাঁর অভিনয় প্রতিভার থেকে অনেক বেশি খবরে থেকেছেন ব্যক্তিগত আচরণ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে।
ব্যক্তি শক্তির সমালোচকরা অবশ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট না বলে ‘চারিত্রিক দোষ’ বলতেই বিশেষ আগ্রহী। কেন না পর্দার ‘ব্যাড বয়’ শক্তির বিরুদ্ধে বাস্তবে কাস্টিং কাউচ এবং অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।
২০০৫ সালে একটি বেসরকারি টিভি সংস্থার স্টিং অপারেশনে হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন শক্তি।
ঘটনাটির অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে সিনেমা এবং টিভির প্রযোজক সংস্থা ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসারস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া’ বাধ্য হয় শক্তিকে বলিউডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে।
শক্তিকে কেন বলিউডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়? অভিনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রকাশ্যে এবং সরাসরি কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন এক মহিলা সাংবাদিককে।
শক্তি নাকি কোনও রাখঢাক না করে ওই মহিলা সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘‘আমি তেমার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে আগ্রহী।’’ সেই কথার রেকর্ডিংও ছিল।
তবে ওই সাংবাদিক শক্তির সঙ্গে তাঁর আসল পরিচয়ে সাক্ষাৎ করেননি। এক জন অভিনেত্রী হতে চাওয়া তরুণী সেজে শক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সাহায্য চেয়েছিলেন তাঁর।
শক্তি তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি যদি এই লাইনে (ফিল্ম জগৎ) আসতে চাও, তবে আমি যা বলব, তোমাকে তা-ই করতে হবে।’’
গোটা ঘটনাটিই রেকর্ড করছিলেন ওই সাংবাদিক। শক্তিকে এর পর বলতে শোনা যায়, ফিল্ম জগতের এটাই দস্তুর। বড় বড় অভিনেত্রীরা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়েই ফিল্ম জগতে নিজেদের জায়গা বানিয়েছেন।
নিজের দাবির সমর্থনে, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, রানি মুখোপাধ্যায়, প্রীতি জিন্টার নাম করেন শক্তি।
শক্তি বলেছিলেন, ‘‘ঐশ্বর্যকে যেতে হয়েছিল সুভাষ ঘাইয়ের কাছে। যশ জোহরের শরণ নিয়েছিলেন রানি। এমনকি প্রীতিকেও এই নিয়ম মানতে হয়েছে।’’
পুরো বিষয়টিই রেকর্ড হয়ে যায় ক্যামেরায়। এই ক্লিপিং প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় বলিউডে। অনেকেই বলেছিলেন, এ সব বলে শক্তি নিজের ক্ষতি করলেও অজান্তে বলিউডের আসল রূপ প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন।
যদিও খলনায়ক পরে গোটা বিষয়টিই অস্বীকার করেন। দাবি করেন, ওই সাংবাদিকই তাঁকে এ সব বলার জন্য জোর করেছেন। এমনকি আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন ওই মহিলা সংবাদিক।
প্রমাণের অভাবে এর পর শক্তির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় গিল্ড। তবে তাতে শক্তির খলনায়ক ভাবমূর্তি টাল খায়নি একটুও।