বড় পর্দায় যে তারকাদের অভিনয় দেখে দর্শক মুগ্ধ হন, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি তাঁদের সমাজমাধ্যমের পাতায় ফুটে ওঠে। সেখানে তিরতির করে বেড়ে চলে তারকাদের অনুগামীর সংখ্যা। কিন্তু সমাজমাধ্যম থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন বলিপাড়ার একাধিক তারকা। এই তালিকায় রয়েছেন আমির খান থেকে শুরু করে রণবীর কপূর।
বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খান। সমাজমাধ্যম ব্যবহার করলেও ২০২১ সালে মার্চ মাসে অভিনেতার ৫৬তম জন্মদিনে সমাজমাধ্যম থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে আমির জানিয়েছিলেন, ‘‘জন্মদিনে আমাকে এত শুভেচ্ছা এবং ভালবাসা জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আমার মন ভরে গিয়েছে। এটাই আমার শেষ পোস্ট। এত দিন ধরে আমি সমাজমাধ্যমে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু আর থাকতে চাই না।’’
আমির লিখেছিলেন, ‘‘তবে আমার বিষয়ে, আমার ছবির প্রসঙ্গে আপনারা সকলেই জানতে পাবেন। আগে যেমন আমাদের যোগাযোগ ছিল, তেমনই থাকবে। আমার প্রযোজনা সংস্থার নিজস্ব একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমার ছবি নিয়ে, আমাকে নিয়ে যাবতীয় তথ্য সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই জানতে পারবেন।’’
অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনীর মতো বর্ষীয়ান তারকারাও সমাজমাধ্যমে রয়েছেন। জ়ীনত আমন কয়েক মাস আগে ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন। তাঁর পোস্ট দেখে বলিপাড়ার একাধিক তারকা প্রশংসাও করেন।
কিন্তু এখনও সমাজমাধ্যম থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রেখা।
অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চনও সমাজমাধ্যমে নেই। তাঁর নাতনি নব্যা নভেলি নন্দার পডকাস্ট শোয়ে জয়া জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে নিয়ে যে মজা করা হয়, তিনি যে বার বার ‘ট্রোলিং’-এর শিকার হন, তা পছন্দ নয় জয়ার। সে কারণেই নাকি সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে নেই বাঙালি অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলিপাড়ার খ্যাতনামী ছবিনির্মাতা যশ চোপড়ার পূত্রবধূ, আদিত্য চোপড়ার স্ত্রী। শুধু ইনস্টাগ্রামই নয়, হোয়াট্সঅ্যাপও নাকি ব্যবহার করেন না তিনি। সমাজমাধ্যমে নেই আদিত্যও।
২০১৯ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রানি জানিয়েছিলেন, তিনি সমাজমাধ্যমে নেই বলে তাঁর কাছের মানুষেরাই কখনও কখনও তাঁর উপর বিরক্ত হয়ে যান। রানি বলেছিলেন, ‘‘আমি ডাইনোসর যুগে থাকতে পছন্দ করি। আমার ফোনে সমাজমাধ্যমের কোনও অ্যাপ নেই। কাছের মানুষেরা আমায় একটি মেসেজ পাঠাতে গেলে তাঁদের টাকা খরচ হয়। কখনও কখনও আমার উপর বিরক্ত হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু আমি এ ভাবে থাকতেই ভালবাসি।’’
২০২০ সালে ইনস্টাগ্রামকে নিজের জীবনে স্বাগত জানিয়েছিলেন বলি অভিনেত্রী করিনা কপূর খান। নিজস্বী থেকে শুরু করে পারিবারিক অনুষ্ঠানের ঝলক— প্রায় সব কিছুই সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করেন করিনা। কিন্তু অভিনেত্রীর স্বামী তথা বলি অভিনেতা সইফ আলি খান সমাজমাধ্যম থেকে রয়েছেন শতহস্ত দূরে।
কেন সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেন না সইফ? এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তার কারণও জানিয়েছিলেন তিনি। সইফ বলেছিলেন, ‘‘আমি সব জিনিস রেকর্ড করতে পছন্দ করি। আমি সব কিছু পোস্ট করতেই পারি। কিন্তু তাতে প্রতি পদে পদে আমায় লোকজন বিচার করবেন। আমি কী পোস্ট করব, কী করব না, তা নিয়েও ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু এ তো ঠিক নয়।’’
সইফ আরও বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি সব পোস্ট করতে না পারি, তা হলে অসৎ থাকা হয়। এ ভাবে থাকার তো কোনও অর্থ নেই। তার পর এক কোটি লোক আমায় বলবেন, ‘এটা কেন পোস্ট করলেন? এমন আপনি করতে পারেন না।’ আমি এর মধ্যে পড়তেই চাই না।’’
বলি অভিনেত্রী আলিয়া ভট্ট সমাজমাধ্যমে সক্রিয়। কিন্তু তাঁর জীবনসঙ্গী তথা বলি অভিনেতা রণবীর কপূরকে সমাজমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ তাঁর একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে ইনস্টাগ্রামে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ আলিয়া।
আলিয়া নিজের ইনস্টাগ্রামের পাতায় একটি ছবি পোস্ট করে লিখে জানিয়েছিলেন, রণবীর নাকি গোপন অ্যাকাউন্ট থেকে সব নজর রাখেন। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রণবীর নিজেই জানিয়েছিলেন যে, আশপাশে কী চলছে সে বিষয়ে নিজেকে অবগত রাখার জন্যই গোপন একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর।
২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কর’ ছবির প্রচারের জন্য একটি রিয়্যালিটি শোয়ে গিয়েছিলেন রণবীর। সেখানে তিনি সমাজমাধ্যম ব্যবহার না করার কারণ জানিয়েছিলেন।
রণবীর বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় সমাজমাধ্যমে সকলে নিজেকে আলাদা ভাবে দেখাতে ব্যস্ত। এর ফলে অভিনেতাদের নিয়ে দর্শকের মধ্যে যে রহস্য রয়েছে তা নষ্ট হয়ে যায়। আর আমি এমনিও খুব বোরিং। আমার মনে হয় আমি সমাজমাধ্যমে না থাকার কারণে দর্শক বড় পর্দায় আমার চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের যোগ করতে পারবেন।’’