শাহরুখ খান, সলমন খান এবং আমির খান— বলিপাড়ার এই তিন খানের সঙ্গে টক্কর দিতে হিন্দি ফিল্মজগতে চতুর্থ খানের আবির্ভাব হয়। কিন্তু তারকা-পুত্র হয়েও যেন তাঁর কেরিয়ারের রেখচিত্র নীচের দিকেই থেকেছে। আবার কেরিয়ার শুরু করার ১১ বছর পর সাফল্যের স্বাদ পেলেও নিন্দার শিকার হন অভিনেতা।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনসুর আলি খান এবং বলি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের পুত্র সইফ আলি খান ধীরে ধীরে বলিউডে শাহরুখ, সলমন এবং আমিরের পাশাপাশি চতুর্থ খান হিসাবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছিলেন।
কেরিয়ারের গোড়ার দিকে একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও একক ভাবে কোনও হিট ছবি দর্শককে উপহার দিতে পারেননি সইফ।
যশ চোপড়ার পরিচালনায় ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরম্পরা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় সইফের। সুনীল দত্ত, বিনোদ খন্না, আমির খানের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সইফ।
বলিপাড়ার একাংশ অনুমান করেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে সইফ নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে সফল হবেন। শর্মিলার পুত্র হিসাবে যদিও আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু তারকাসন্তান হওয়ার সুবিধা নিয়ে যে গতিতে সফল হওয়ার কথা ছিল, সইফের কেরিয়ার তার বিপরীত দিকে ঝুঁকল।
কেরিয়ার শুরু করার প্রথম ১১ বছর হিন্দি ছবিতে টানা অভিনয় করেন সইফ। কিন্তু একটি ছবিতেও একক ভাবে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। অধিকাংশ ছবিই তারকা সমন্বিত অথবা দ্বিতীয় অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেন তিনি।
‘হম সাথ সাথ হ্যায়’, ‘কাচ্চে ধাগে’, ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’, ‘ইয়ে দিললাগি’, ‘কয়া কহেনা’র মতো বহু ছবিতে অভিনয় করেন সইফ। ছবি জনপ্রিয় হলেও একক অভিনেতা হিসাবে নাম করতে পারেননি তিনি।
২০০৪ সালের পর সইফের কেরিয়ার অন্য দিকে মোড় নেয়। যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় মুক্তি পায় রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি ‘হম তুম’। এই ছবিতে রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন সইফ।
‘হম তুম’ ছবিতে অভিনয় করে অভিনেতা হিসাবে জাতীয় পুরস্কারও পান সইফ। বক্স অফিসে সইফের একক হিট হিসাবে সফল হয় এই ছবি।
১১ বছর পর পুরস্কার প্রাপ্তি হলেও নিন্দার শিকার হতে হয় সইফকে।সইফ যে সময় ‘হম তুম’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, সে সময় নাকি ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিনেতার মা শর্মিলা।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সইফের পুরস্কার প্রাপ্তির নেপথ্যে ছিলেন শর্মিলা। তিনি নাকি সইফকে এই পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু বলিপাড়ার অধিকাংশের অনুমান, সইফের পুরস্কার প্রাপ্তির সঙ্গে শর্মিলার কোনও যোগ নেই। সইফ নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই পুরস্কার অর্জন করেছেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, কেরিয়ারের প্রথম ১১ বছরে যে ২৯টি ছবিতে সইফ অভিনয় করেছিলেন তার মধ্যে ছ’টি ছবি বক্স অফিসে সফল হয়েছিল। কিন্তু সেই ছবিগুলিকে সইফের কেরিয়ারে একক হিট হিসাবে ধরা যায় না।
২০০৪ সালের পর ‘সালাম নমস্তে’, ‘রেস’, ‘লভ আজ কাল’ এবং ‘ককটেল’ ছবিতে অভিনয় করেন সইফ। এই ছবিগুলিতে সইফের অভিনয় প্রশংসা পায়।
২০১০ সালের পর আবার সইফের কেরিয়ারের রেখচিত্র নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ‘হমশকলস’, ‘রঙ্গুন’, ‘ফ্যান্টম’ এবং ‘বাজ়ার’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সইফকে। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি।
২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাল কপ্তান’ এবং ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তনহাজি’ ছবিতেও সইফের অভিনয় প্রশংসা পায়। কিন্তু চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আদিপুরুষ’-এ অভিনয় করে তাঁর কেরিয়ার আবার যেন কিছুটা নীচের দিকে গড়িয়ে গিয়েছে।