নব্বইয়ের দশকের বলিপাড়ার জনপ্রিয় নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী এবং কাওয়ালি সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কম সময়ের মধ্যেই নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন আলতাফ রাজা। একটি গান গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। আবার বলিউডের সঙ্গীতজগৎ থেকে নিমেষের মধ্যে ‘উধাও’ও হয়ে যান।
১৯৬৭ সালের ১৫ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্ম আলতাফের। আলতাফের বাবা-মা দু’জনেই কাওয়ালি গাইতেন। সেই সূত্রেই বন্ধুত্ব হয় দু’জনের। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে গড়ানোর পর তাঁদের সম্পর্ক পরিণতি পায়। বিয়ে করার পর নাগপুরে চলে যান তাঁরা।
আলতাফের বাবা-মা চেয়েছিলেন যে তাঁদের পুত্র পড়াশোনা করে ভাল চাকরি করুক। তাই নাগপুর থেকে মুম্বইয়ে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেন পুত্রকে। কিন্তু সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আবার বাড়ি ফিরে যান আলতাফ।
পরে মুম্বইয়ের অ্যান্টনিয়ো ডি’সুজা স্কুলে আলতাফকে ভর্তি করানো হয়। আলতাফের বাবা-মা শুনেছিলেন যে এই স্কুলে রাজ কপূরের মতো তারকা পড়াশোনা করেছিলেটন। তাই আলতাফের উচ্চশিক্ষার জন্যও সেই প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু সেখানেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি আলতাফ।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বাড়ি ফিরে যান আলতাফ। পড়াশোনার প্রতি আলতাফের আগ্রহ না থাকায় তাঁকে জামাকাপড় সেলাই শেখানোর ক্লাসে ভর্তি করেন তাঁর বাবা-মা। সেখানেও মন লাগছিল না আলতাফের। হঠাৎ আলতাফ তাঁর মাকে গিয়ে জানান যে তিনি গান শিখতে চান।
হারমোনিয়াম বাজানো শিখতে শুরু করেন আলতাফ। নিয়মিত গানের রেওয়াজও করতেন তিনি। মায়ের সঙ্গে কাওয়ালি সঙ্গীতের মঞ্চে সমবেত কণ্ঠশিল্পী হিসাবে গান গাইতে শুরু করেন আলতাফ। আলতাফের মা তাঁকে পরামর্শ দেন যে তিনি যেন গানবাজনা নিয়েই কেরিয়ারে এগিয়ে যান।
বাবা-মায়ের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গানের অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন আলতাফ। তাঁর কণ্ঠের কাওয়ালি শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। বেশ কয়েকটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে তাঁর গানের অ্যালবাম মুক্তি পায়।
আলতাফের কণ্ঠে ‘তুম তো ঠেহরে পরদেসি’ গানটি শ্রোতাদের মনে ধরে। এই গানের জন্যই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান তিনি। এক রাতে ৭০ লক্ষ ক্যাসেট বিক্রি হয় বলে বলিপাড়া সূত্রে খবর।
এর পর হিন্দি ছবিতেও গান গাওয়ার সুযোগ পান আলতাফ। মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘শপথ’ ছবিতে প্রথম গান গাইতে দেখা যায় আলতাফকে।
তার পর ‘তিরছি টোপিওয়ালে’, ‘চন্ডাল’, ‘মর্দ’, ‘যমরাজ’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন আলতাফ। শুধু তাই নয়, গানের দৃশ্যে অভিনয়ও করতে দেখা যায় তাঁকে।
আলতাফ যে হিন্দি ছবিতে গান গাইতেন, সেই ছবি হিট না হলেও আলতাফের গান জনপ্রিয় হত। বলিপাড়ার ছবি নির্মাতাদের ধারণা হয়ে যায় যে আলতাফ যদি তাঁদের ছবিতে গান করেন তবে সেই ছবি হিট না হলেও গান হিট হবে। এর ফলে ছবির অন্য ভাবে প্রচারও হবে।
গানের পাশাপাশি অভিনয়ের জন্যেও প্রস্তাব আসতে থাকে আলতাফের কাছে। কিন্তু আলতাফ সেই সময় বেঁকে বসেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন পরবর্তী ছবিগুলিতে গান গাইবেন কিন্তু অভিনয় করবেন না। আলতাফের প্রস্তাবে কোনও ছবি নির্মাতাই রাজি হলেন না।
২০০০ সালের পর হিন্দি সঙ্গীতজগৎ থেকে ধীরে ধীরে ‘উধাও’ হয়ে যান আলতাফ। অভিনয় করতে চাইতেন না বলে তাঁকে কোনও ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাবও দিতেন না ছবি নির্মাতারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছবিতে কাওয়ালি গানের ব্যবহারও কমে যায়।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মঞ্চে গান গেয়ে উপার্জন করেন আলতাফ। ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খুলেছেন তিনি। সেখানে নিজের গানের ভিডিয়ো পোস্ট করেন আলতাফ।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি করে ফেলেছেন আলতাফ। ইনস্টাগ্রামে আলতাফের অনুরাগী সংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।