শাহরুখ খান, আমির খান, সলমন খান— বলিউডের তিন খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয়ের সুযোগ সাধারণত হারাতে চান না কেউ। তবে বলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, দুই খানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি আন্তর্জাতিক একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও খারিজ করেছিলেন বাঙালি অভিনেত্রী।
১৯৯৮ সালে মণি রত্নমের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘দিল সে..’। শাহরুখ খান, মনীষা কৈরালা এবং প্রীতি জ়িন্টা অভিনীত ছবিটি দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়োয়। তবে এই ছবিতে প্রীতি নায়ারের চরিত্রের জন্য ছবিনির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন না প্রীতি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, প্রীতির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে বলি অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়কে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি রানি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘দিল সে..’ ছবিতে প্রীতির চরিত্রের বুনন মনে ধরেনি রানির। তিনি মনে করেছিলেন এই চরিত্রটি আরও জীবন্ত করে তোলা যেতে পারত। সে কারণেই শাহরুখের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেন অভিনেত্রী।
‘দিল সে..’ ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করতে না পারলেও পরে বলিউডের ‘বাদশা’র সঙ্গে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘পহেলি’, ‘চলতে চলতে’, ‘কভি অলবিদা না কহে না’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রানি।
১৯৯৪ সালে হামিদ আলি খানের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘আ গলে লগ যা’ ছবিটি। রোশনি চরিত্রের জন্য রানিকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে অভিনয় করতে রাজি হননি অভিনেত্রী।
‘আ গলে লগ যা’ ছবিতে অভিনয় করতে রানি রাজি না হলে উর্মিলা মাতন্ডকরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি হলে যুগল হংসরাজের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় উর্মিলাকে।
২০০৩ সালে রাজকুমার হিরানির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। ছবি মুক্তির পর স়ঞ্জয় দত্ত এবং আরশাদ ওয়ারসি অভিনীত মুন্নাভাই-সার্কিটের জু়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রানিকে। কিন্তু চিত্রনাট্যের খসড়া শোনার পর এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন অভিনেত্রী।
‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করলে বলি অভিনেত্রী গ্রেসি সিংহের কাছে গিয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা। রানির ছেড়ে দেওয়া চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান গ্রেসি। রানির ফিরিয়ে দেওয়া আরও একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন গ্রেসি।
২০০১ সালে আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘লগান’। আমির খান অভিনীত এই ছবিটি শুধুমাত্র ভারতে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশংসা পায়। বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, এই ছবিতে আমিরের সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রানি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘লগান’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে আমিরের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রানিকে। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয় করতে চাননি তিনি। আমিরের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও হারিয়েছিলেন অভিনেত্রী। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন গ্রেসি।
২০০৫ সালে বিপুল অম্রুতলাল শাহের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ওয়াক্ত: দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’। এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, শেফালি শাহ, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, বোমান ইরানি এবং রাজপাল যাদবের মতো বলি তারকাকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ওয়াক্ত: দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’ ছবিতে অক্ষয়ের বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রথমে দেওয়া হয়েছিল রানিকে। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয় করতে চাননি রানি।
রানি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে মুখ্যচরিত্রে ‘ওয়াক্ত: দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। তার পর অক্ষয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যায় প্রিয়ঙ্কাকে।
অক্ষয়ের সঙ্গে আরও দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রানি। ২০০৭ সালে সাজিদ খানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় কমেডি ঘরানার ছবি ‘হে বেবি’। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয় কুমার, বিদ্যা বালন, রীতেশ দেশমুখ এবং ফারদিন খানের মতো তারকা।
শোনা যায়, ‘হে বেবি’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য রানিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাজিদ। কিন্তু রানি এই ছবিতে অভিনয় করতে চাননি।
‘হে বেবি’ ছবিতে রানি অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে বিদ্যা বালনকে পছন্দ করেন ছবিনির্মাতারা। তাঁদের প্রস্তাব গ্রহণ করে এই ছবিতে অক্ষয়ের সঙ্গে জু়্টি বেঁধে অভিনয় করেন বিদ্যা। রানির ফিরিয়ে দেওয়া অন্য একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা।
২০০৭ সালে প্রিয়দর্শন পরিচালিত কমেডি হরর ঘরানার ছবি ‘ভুল ভুলভুলাইয়া’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। অক্ষয় এবং বিদ্যার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন শাইনি আহুজা, পরেশ রাওয়াল, অমিশা পটেল এবং রাজপাল যাদবের মতো তারকা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ভুল ভুলাইয়া’ ছবিতে মঞ্জুলিকা চরিত্রের জন্য রানিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা। কিন্তু এই চরিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ ছিল না রানির। তিনি প্রস্তাব খারিজ করলে বিদ্যা এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন।
শুধুমাত্র ‘ওয়াক্ত: দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’ নয়, আরও একটি হিন্দি ছবিতে রানি অভিনয় করতে না চাইলে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন প্রিয়ঙ্কা। এমনকি সেই চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশংসা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী।
২০১৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় প্রিয়ঙ্কা অভিনীত ‘মেরি কম’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রানিকে।
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পাশাপাশি ‘মেরি কম’ ছবিটির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন ভিকি ভাটিয়া। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবিতে রানিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সঞ্জয়।
‘মেরি কম’ ছবিতে প্রযোজকের আসনে থেকে তিনি ভেবেছিলেন, বড় পর্দায় মেরি কমের চরিত্রটি নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন রানি। কিন্তু প্রযোজকের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। রানির পরিবর্তে এই ছবিতে শেষ পর্যন্ত অভিনয় করেন প্রিয়ঙ্কা। এই ছবিটি প্রিয়ঙ্কার কেরিয়ারে একটি মাইলফলকও গড়ে তোলে।
শুধু হিন্দি ছবিই নয়, রানি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও। ২০০৭ সালে আমেরিকা এবং ভারতে মুক্তি পায় মীরা নায়ার পরিচালিত ‘দ্য নেমসেক’। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল রানির। কিন্তু সময়ের অভাবের কারণে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন রানি। ইরফান খানের সঙ্গে পরে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তব্বুকে।