নব্বইয়ের দশকের আগে থেকেই বলিপাড়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অনিল কপূর, শাহরুখ খান, সলমন খানের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু এই অভিনয়ের কারণেই বলিজগত থেকে সরে যান আনন্দ বলরাজ।
আনন্দের বাবা পঞ্জাবের বাসিন্দা। অভিনয়ে নামবেন বলে পঞ্জাব ছেড়ে পরিবার-সহ মুম্বইয়ে চলে যান তিনি। মুম্বইয়েই বেড়ে ওঠেন আনন্দ।
অভিনয়ে নামার বিশেষ ইচ্ছা ছিল না আনন্দের। পড়াশোনা নিয়েই কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অন্য পথে হাঁটা শুরু করলেন আনন্দ।
স্বাস্থ্যবান হওয়ায় আনন্দের সহপাঠীরা তাঁকে মডেলিংয়ে নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বন্ধুদের কথায় মডেলিংয়ে নেমেও যান তিনি। সেখান থেকেই তাঁর কেরিয়ারের মাইলফলক তৈরি হয়।
আনন্দের বাবা হিন্দি ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত। আনন্দের ভাই দীপক বলরাজ পরিচালনার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীপকের পরিচালনায় ১৯৯২ সালে ‘জান তেরে নাম’ ছবিটি মুক্তি পায়। বাবা এবং ভাইয়ের দৌলতে বলিপাড়ায় সামান্য পরিচিতি তৈরি হয় আনন্দের।
মডেলিং থেকে আনন্দের জীবনে এক নতুন সুযোগ আসে। একটি র্যাম্প শোয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন আনন্দ। সেই শোয়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বলি পরিচালক সুভাষ ঘাই।
আনন্দকে দেখে একনজরে পছন্দ হয়ে যায় সুভাষের। নিজের ছবিতে অভিনয়ের জন্য সুভাষ প্রস্তাব দেন আনন্দকে। মডেলিং পেশায় থাকার সময়ও বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু কখনওই তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি।
১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাম লক্ষ্মণ’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় আনন্দকে। সুভাষ ঘাই পরিচালিত এই ছবিতে অনিল কপূর, জ্যাকি শ্রফ, রাখি, মাধুরী দীক্ষিত, ডিম্পল কাপাডিয়া এবং অমরীশ পুরীর মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় আনন্দকে।
তার পর ‘পরদেশ’, ‘খলনায়ক’, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যয়া’ ছবিতে অভিনয় করেন আনন্দ। নেতিবাচক চরিত্রেই বেশি অভিনয় করতেন তিনি। সেই হিসাবেই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে ফেলেছিলেন আনন্দ।
কিন্তু বার বার খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আনন্দ। নিজের কাজকে একঘেয়ে লাগতে শুরু করে তাঁর। তাই অন্য ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তবে ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না আনন্দের। ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতে চাইলেও সে সুযোগ পেতেন না তিনি। খলনায়কের চরিত্র পর্দায় ভাল ফুটিয়ে তুলতেন বলে পরিচালকরা তাঁকে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়েরই প্রস্তাব দিতেন।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে আনন্দ জানান যে, কেরিয়ারে মোট ৭০টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে ১৯টি ছবিতেই ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নেতিবাচক চরিত্রে আর কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আনন্দ। এর ফলে কাজের প্রস্তাব আসাও ধীরে ধীরে কমে আসে তাঁর কাছে।
অভিনয় ছেড়ে পরিচালনার কাজ শুরু করেন আনন্দ। ২০১২ সালে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ ছবির পরিচালনা করেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আনন্দ নিজেই। এ ছাড়া বীণা মালিক, ববি ডার্লিং, লিলিপুট, শক্তি কপূরকে অভিনয় করতে দেখা যায় ওই ছবিতে।
নিজের কাছে যা সঞ্চয় ছিল তার সমস্ত ছবি নির্মাণের জন্য খরচ করে ফেলেন আনন্দ। এমনকি, ছবির জন্য ঋণও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে। দেনার ভারে ডুবে যান আনন্দ। ছবি ফ্লপ হওয়ার দু’বছর পর পথদুর্ঘটনার শিকার হন আনন্দ। ২০১৪ সালে মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় তাঁর গাড়ির পিছনে একটি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় হাঁটুতে চোট পান তিনি। আনন্দকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
আনন্দের হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা। কিন্তু আনন্দের কাছে চিকিৎসার জন্য অর্থ ছিল না। আনন্দের খোঁজখবর নিতে সেই মুহূর্তে তাঁকে ফোন করেছিলেন বলি অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলি।
আনন্দের পরিস্থিতির কথা সলমন খানকে জানান আদিত্য। সব জানার পর আনন্দের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন সলমন। সলমনের অর্থে চিকিৎসা হয় আনন্দের।
সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আনন্দ। মাসের পর মাস শয্যাশায়ী থাকার পর সুস্থ ভাবে হাঁটাচলা করতে পারছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সলমনের প্রতি কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই তাঁর।
আনন্দ জানান, ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও সলমনের মতো মানুষ রয়েছেন ভেবেই আনন্দ হয় তাঁর। আনন্দের মতে, সলমনের জন্যই নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। অভিনয়জগৎ থেকে দূরে সরে গেলেও তিনি যে সুস্থ রয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট আনন্দ।