আশি এবং নব্বইয়ের দশকে প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। বাংলা এবং হিন্দি ছবির পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্মজগতেও নিজের পরিচিতি গড়়ে তুলেছিলেন ‘ডিস্কো ডান্সার’। কিন্তু তাঁর কেরিয়ার প্রথম দিক সহজ ছিল না।
কেরিয়ার গ়ড়তে মুম্বইয়ে চলে যান মিঠুন। খুব কষ্ট করে দিনযাপন করতেন তিনি। একসময় সঞ্চয়ের সমস্ত টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল মিঠুনের। হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এক বলি অভিনেতার পিতা।
মুম্বইয়ে ‘প্লেবয়’ নামের একটি দর্জির দোকানে ছিল যেখানে বলিপাড়ার খ্যাতনামী তারকারা তাঁদের জামাকাপ়ড় তৈরি করতে দিতেন। সেই দোকানের খোঁজ পেয়েছিলেন মিঠুন।
সেই দর্জির দোকানে রোজ যেতেন মিঠুন। বলিপাড়ার কোনও তারকার সঙ্গে কথা বলে যদি কাজের সুযোগ পান সেই আশায় থাকতেন তিনি। এক দিন হঠাৎ বলি অভিনেতা সলমন খানের বাবা সেলিম খানের সঙ্গে দেখা হয় মিঠুনের।
দর্জির দোকানে মিঠুনকে অনেক ক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন সেলিম। মিঠুনকে দেখে সেলিম বলেন, ‘‘তোমার চোখমুখ দেখলেই মনে হয় অভিনয়ের খিদে রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চাও তুমি।’’
সেলিমের কথার জবাবে মিঠুন বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি অভিনয় করতে চাই। পুণের এফটিটিআই থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু এখানে কোনও কাজ পাচ্ছি না।’’
মিঠুনের কথা শুনে সেলিম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁকে যশ চোপড়ার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন।
সেলিম জানতেন, যশ তখন ‘ত্রিশূল’ ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন। তিনি ভাবেন মিঠুন যদি অডিশন দিয়ে কাজের সুযোগ পান তা হলে বলিউডে অন্তত হাতেখড়িটুকু হয়ে যাবে মিঠুনের।
একটি কাগজে যশের ঠিকানা লিখে তা মিঠুনের হাতে ধরিয়ে দেন সেলিম। তার পর বলেন, ‘‘যশের কাছে গিয়ে বলবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি।’’
সেলিমের নির্দেশ মতো যশের সঙ্গে দেখা করতে যান মিঠুন। সেই সময় যশের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ কারও মিলত না। কিন্তু সেলিমের দৌলতে কেরিয়ার শুরুর মুখেই সে সুযোগ পেয়েছিলেন মিঠুন।
‘ত্রিশূল’ ছবির মুখ্যচরিত্রের জন্য অমিতাভ বচ্চনকে পছন্দ করেছিলেন যশ। কিন্তু দ্বিতীয় এক জন অভিনেতার প্রয়োজন ছিল তাঁর। সেই সন্ধানেই ছিলেন যশ।
মিঠুনকে ‘ত্রিশূল’ ছবির জন্য অডিশন দিতে বলেন যশ। তাঁর অভিনয় পছন্দও হয়েছিল যশের। কিন্তু অডিশন দেওয়ার পরেও সুযোগ পেলেন না মিঠুন।
কাজের সুযোগ না পেলেও সেলিমের মতো বড় মাপের তারকা যে মিঠুনকে সাহায্য করেছিলেন তা কখনও ভুলতে পারেননি অভিনেতা। এক সাক্ষাৎকারে মিঠুন জানিয়েছিলেন, সেলিমের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ তাঁর মনোবল বৃদ্ধি করেছিল।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ছবি ‘মৃগয়া’র মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রেখেছিলেন মিঠুন। প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।