সলমন খান। বলিউডে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে থেকে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন সেলিম-পুত্র সলমন। ১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সলমন। তার পর নব্বইয়ের দশক জুড়ে তিনি একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন।
‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিতে ভাগ্যশ্রীর বিপরীতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে তিনি পরিচালক-প্রযোজকদের নজরে পড়েন। ছবির অফারও পাচ্ছিলেন প্রচুর। সেই সময় থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন ছড়াতে থাকে যে, শ্যুটিংয়ে সলমন নাকি অনেক দেরি করে পৌঁছন।
সহ-অভিনেতারা মেক আপ করার পরেও সলমনের জন্য অপেক্ষা করতেন। সলমন এলে তবেই শ্যুটিং শুরু হবে, না হলে শ্যুটিং শুরু করা যেত না। তাই সেটে সকলে এলেও কাজ বন্ধই থাকত।
১৯৯১ সালে সলমন খান এবং চাঁদনী অভিনীত ‘সনম বেওয়াফা’ ছবিটি মুক্তি পায়। সাওয়ান কুমার তাকের পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রাণ, ড্যানি ডেনজংপা, পুনীত ইসার এবং পঙ্কজ ধীর প্রমুখ অভিনেতারা।
পঙ্কজ এবং পুনীতের সঙ্গে সলমনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দু’জনেই সলমনের এই আচরণের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেটে প্রাণ এবং ড্যানি দু’জনেই ছিলেন সলমনের সিনিয়র।
নিজেরা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সলমনের জন্য অপেক্ষা করতে তাঁরা কেউই পছন্দ করতেন না। ছবির পরিচালক এই বিষয়ে সলমনকে প্রশ্ন করায় অভিনেতা পাল্টা জবাব দেন পরিচালককে। সাওয়ান কোনও প্রতিবাদ না করে ছবির কাজে মন দেন।
কিন্তু ড্যানি বেশি দিন চুপ করে থাকতে পারলেন না। সলমনের কাছে তিনি রোজ দেরি করে আসার জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেন। সলমন তাঁকেও পাল্টা জবাব দেন।
ড্যানিও দমবার পাত্র নন। সেটে সকলের সামনেই সলমনকে জানিয়ে দেন, তিনি যা করছেন তা ভুল। কিছু ক্ষণ পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও দুই অভিনেতাই মনে মনে ঠিক করে নেন, এই তাঁদের একসঙ্গে প্রথম এবং শেষ কাজ। আর কোনও দিনও ড্যানি এবং সলমন এক ছবিতে কাজ করবেন না।
‘সনম বেওয়াফা’ ছবির কাজ শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়। সলমনও তাঁর কেরিয়ারে প্রচুর হিট ছবিতে অভিনয় করেন। অন্য দিকে ড্যানিও ইন্ডাস্ট্রির ‘সেরা খলনায়ক’-এর তালিকার শীর্ষে নাম লিখিয়ে ফেলেন।
২৩ বছর পর আবার মুখোমুখি হন ড্যানি-সলমন। ২০১৪ সালে সোহেল খানের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘জয় হো’। ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচালক বেছে নেন তাঁর ভাই সলমনকে।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় খলনায়কের খোঁজ করতে গিয়ে। পরিচালক এমন এক অভিনেতার খোঁজ করছিলেন যিনি সলমনের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবেন।
অবশেষে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য পরিচালক প্রস্তাব দেন ড্যানিকে। সলমন এই ছবিতে রয়েছেন জেনে ড্যানি পত্রপাঠ প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
পরে সলমন এবং সোহেল দুই ভাই মিলে তাঁদের বাবার কাছে সাহায্য চান। সেলিম তাঁর দুই পুত্রকে নিয়ে হাজির হন ড্যানির বাড়ি। ছবিতে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন সেলিম।
সেলিমের অনুরোধ ফেলতে পারেননি ড্যানি। তবে তিনি একটি শর্তও রাখেন। বলেন, সলমন যদি সঠিক সময়ে শ্যুটিংয়ে আসেন, তবেই ড্যানি এই ছবিতে অভিনয় করবেন, নচেৎ নয়।
সলমনের জন্য অপেক্ষা করতে আর রাজি নন ড্যানি, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন সেলিমকে। শেষ পর্যন্ত সকলেই ড্যানির শর্তে রাজি হন। সলমনও ড্যানির শর্ত মেনে দেরি না করে সঠিক সময়ে সেটে হাজির হতেন। ২৩ বছর ধরে চলে আসা মনোমালিন্যের সমাপ্তি হয় এ ভাবেই।