আশি এবং নব্বইয়ের দশকে অধিকাংশ বলি অভিনেত্রীদের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। জনি লিভার এবং কাদের খানের মতো বড় মাপের কৌতুকাভিনেতাদের টক্কর দিতেন। আবার তিনিই কেরিয়ারের মধ্যগগনে হঠাৎই অভিনেয় ছেড়ে দান। তিনি গুড্ডি মারুতি।
বলিউ়ডের যে তারকারা হাস্যরস পরিপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতেন তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক উপার্জনকারীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন গুড্ডি। কিন্তু কেরিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন অভিনয়জগৎ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কেন?
১৯৬১ সালের ৪ এপ্রিল মুম্বইয়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গুড্ডির। তাঁর আসল নাম তাহিরা পরব। বাবা-মা, এক ভাই এবং দুই বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
তাহিরার বাবা মারুতিরাও পরব ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাহিরার মা কানিজ ফতিমাও বলিপাড়ার অভিনেত্রী ছিলেন। কমল নামে বলিজগতে পরিচিত ছিলেন কানিজ।
বাবা-মা দু’জনেই বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাহিরারও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জাগতে শুরু করে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার। তবে তাহিরার ওজন সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বেশি ওজন নিয়ে কোনও ভাবেই বিমানসেবিকা হওয়া যাবে না তা বুঝতে পেরেছিলেন তাহিরা। ওজন কমানোর হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
তাহিরার যখন ১০ বছর বয়স তখন বাবার কাছে অভিনয়ের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি। মেয়ের ইচ্ছাপূরণও হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন ‘জান হাজির হ্যায়’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।
প্রথম ছবিতে অভিনয়ের পাঁচ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘শ দিন সাস কে’ ছবিটি। এই ছবিতে নায়িকার বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করে সকলের মন জয় করে নেন তাহিরা।
কমিক টাইমিংয়ের পাশাপাশি তাঁর ওজনও যেন চরিত্রটিকে আরও কৌতুকময় করে তুলত। কিন্তু দু’টি ছবিতে অভিনয়ের পরে তাহিরার জীবনে দুঃখের বাঁধ ভেঙে পড়ে।
১৯৮১ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তাহিরার বাবা। এত দিন যে তাহিরা নিজের শখপূরণের জন্য অভিনয় করতেন, বাবার মৃত্যুর পর সংসার খরচ চালানোর জন্য অভিনয় করতে শুরু করেন তাহিরা।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তাহিরা জানান যে, বলি পরিচালক এবং প্রযোজক মনমোহন দেসাইয়ের পরামর্শে নিজের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন তাহিরা। মনমোহন তাঁকে জানিয়েছিলেন, কমেডিজগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে হলে একটি মজাদার নাম রাখা প্রয়োজন।
তাহিরাকে বাড়িতে সকলে গুড্ডি নামে ডাকতেন। তাঁর বাবার নামের প্রথম অংশ নিয়ে তাহিরা নিজের নতুন নাম রাখেন গুড্ডি মারুতি। ‘খিলাড়ি’, ‘দুলহে রাজা’, ‘বিবি নম্বর ১’, ‘শোলা অওর শবনম’, ‘চমৎকার’-এর মতো ৯৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন গুড্ডি। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি।
অভিনয় করে গুড্ডি যখন তাঁর কেরিয়ারের শীর্ষে, তখনই অভিনয়জগৎ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আসলে বিয়ে করার পর সংসারে মন দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
১০ বছরের বিরতির পর ২০১৫ সালে আবার অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করেন গুড্ডি। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বর্তমানে ৬১ বছর বয়সে পা ফেলেছেন তিনি। নিজের ওজনও অনেকটাই কমিয়ে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু অভিনয়জগৎ থেকে এখনও দূরেই রয়েছেন।