মুম্বইয়ের একটি প্রসিদ্ধ মন্দির। সেখানে পুজো দিয়ে বেরোনোর সময় দিনের ভরা আলোয় পর পর চলল ১৬টি গুলি। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন গুলশন কুমার। হিন্দি মিউজ়িকজগৎ হারিয়ে ফেলল এক নক্ষত্রকে।
অন্ধকারজগৎ থেকে বার বার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল গুলশনকে। ১৯৯৭ সালে মুম্বইয়ের বুকে গুলশনহত্যার ঘটনা বলিপাড়ার স্মৃতিতে বহু বছর তাজা ছিল। এর কয়েক বছরের মধ্যে অন্ধকারজগতের লক্ষ্য হয়ে পড়েন বলি পরিচালক রাকেশ রোশন।
২০০০ সালে ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ। তাঁর পুত্র হৃতিক রোশনও এই ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন।
মুক্তি পাওয়ার পর রাকেশের ছবি বক্স অফিস থেকে দারুণ ব্যবসা করে। তার পরেই রাকেশের কাছে অন্ধকারজগৎ থেকে হুমকি আসতে শুরু করে। রাকেশ তাঁর ছবি থেকে যা লাভ করেছেন তার সিংহভাগ দাবি করে অপরাধজগৎ।
টাকা না দিলে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয় রাকেশকে। রাকেশ টাকা দিতে রাজি ছিলেন না। হুমকি পেয়েও তেমন গুরুত্ব দেননি তিনি। কিন্তু তার অভিঘাত যে এত মারাত্মক হবে তা কল্পনা করতে পারেননি রাকেশ।
সিনেমা মুক্তির সপ্তাহখানেক পর মুম্বইয়ের সান্তা ক্রুজ়ের দফতর থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠছিলেন রাকেশ। ঠিক সেই মুহূর্তে দু’টি গুলি এসে লাগে রাকেশের শরীরে। একটি গুলি বাঁ হাতে এবং দ্বিতীয় গুলিটি বুকে লাগে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাকেশ। যে দু’জন রাকেশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন, তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বলে মুম্বই পুলিশের দাবি।
সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রাকেশকে। পরিচালকের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁর চিকিৎসার দায়ভার নেন এক বলি অভিনেতার পিতা।
রাকেশের চিকিৎসা করেন শরদ পাণ্ডে। পেশায় হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন শরদ। কিন্তু তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও ছিল। বলি অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডের পিতা তিনি।
চিকিৎসার মাধ্যমে রাকেশকে সারিয়ে তোলেন শরদ। মুম্বই পুলিশ সূত্রে দাবি, ৫২ বছর বয়সি সুনীল ভিথল গায়কোয়াড় এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি খুনের অভিযোগ এবং সাতটি খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।
খুনের দায়ে নাসিক সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন সুনীল। ২৮ দিনের প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পর আর জেলে ফিরে যাননি। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ছ’বার গুলি চালিয়েছিলেন সুনীল। তার মধ্যে দু’টি গুলি লাগে রাকেশের শরীরে। তিন মাস পলাতক থাকার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সুনীল। সুনীলের সঙ্গে ছিলেন সচিন কাম্বলে। তাঁকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
২০২১ সালে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে হৃতিক স্মৃতিচারণ করে জানান, তাঁর পরিবার সেই সময় খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তারকাভরা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতিও প্রকাশ করেন অভিনেতা।
হৃতিক বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।’’
তার পর রাকেশকে উদ্দেশ করে হৃতিক বলেন, ‘‘সে দিন হাসপাতালে যখন তোমার দিকে তাকালাম, তখন মনে বল ফিরে পেলাম। সব কিছু যেন মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল। তোমায় দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি একা নই। আমি কোনও দিন একা হব না।’’