শুধু অভিনয়ের দায়িত্বটুকুই পেয়েছিলেন বলি অভিনেতা রণদীপ হুডা। কিন্তু পরিচালকের উপর নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বার বার চাপিয়ে দেওয়ার কারণে পরিচালনার দায়িত্ব থেকেই নিজেকে সরিয়ে ফেললেন মহেশ বামন মঞ্জরেকর।
চলতি বছরেই প্রকাশ্যে এসেছে ‘স্বতন্ত্র বীর সাভরকর’ ছবির প্রচার ঝলক। এই বছরেই মুক্তি পাওয়ার কথা আত্মজীবনীমূলক ছবিটির। বীর সাভরকরের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে রণদীপকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘স্বতন্ত্র বীর সাভরকর’ ছবির পরিচালনার দায়িত্ব প্রথমে ছিল মহেশের উপর। কিন্তু রণদীপ তাঁর কাজে বার বার বাধা দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে দায়িত্বপালন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন মহেশ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মহেশ জানান, ২০২১ সালের মে মাস থেকে রণদীপ অভিনীত ছবির পরিচালনা করছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পরিচালনার পাট গুটিয়ে চলে যান।
মহেশের দাবি, রণদীপ তাঁর চরিত্রের সম্পর্কে আরও ভাল করে জানার জন্য ভারতের রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রণদীপের সঙ্গে প্রথম দেখায় সেই আঁচ পেয়েছিলেন মহেশ।
রণদীপের কৌতূহল দেখে ভাল লেগেছিল মহেশের। চিত্রনাট্যের প্রথম খসড়া পাঠের সময় মহেশকে বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তনের পরামর্শও দেন রণদীপ।
রণদীপের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গায় বদল করলেও দ্বিতীয় বার চিত্রনাট্যের খসড়া পাঠের সময় একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন মহেশ। আবার কিছু জায়গায় বদলের নির্দেশ দেন রণদীপ।
সাক্ষাৎকারে মহেশ জানান, রণদীপ এত কিছু পড়ে ফেলেছিলেন যে, একসঙ্গে সব কিছু তাঁর ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন। দ্বিতীয় বার আবার পরিবর্তনের কথা পাড়লে মহেশ অভিনেতাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘বার বার গল্প বদলালে কিন্তু সমস্যা হবে। এ ভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে আর ছবি বানানো যাবে না।’’
মহেশের দাবি, আত্মজীবনীমূলক কোনও ছবির কেন্দ্রবিন্দু হল মুখ্যচরিত্রের জীবনের নানা রকম ঘটনার সমন্বয়। কিন্তু রণদীপ অন্য পথে হাঁটছিলেন বলে জানান মহেশ।
বীর সাভরকরের জীবনী শুধু নয়, রণদীপ তাঁর ছবির মধ্যে হিটলার থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রাজা, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে উল্লেখ করতে চেয়েছিলেন।
মহেশ বলেন, ‘‘১৮৫৭ সালে যাঁরা আন্দামান জেলে বন্দি ছিলেন, তাঁদের প্রসঙ্গও ছবিতে রাখতে চেয়েছিলেন রণদীপ।’’ কিন্তু এ যে প্রায় অসম্ভব ছিল, তা রণদীপকে সরাসরি জানান মহেশ।
তবে রণদীপ তাঁর সিদ্ধান্তে এতটাই অনড় ছিলেন যে, অভিনেতা বলেন, ‘‘সাভরকর যখন জেলবন্দি ছিলেন, তখন ১৮৫৭ সালের বন্দিদের বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি হবে। এ ভাবে দেখানোই যায়।’’
এমনকি, সাভরকরের আত্মজীবনীমূলক ছবিতে ভগৎ সিংহ থেকে শুরু করে বাল গঙ্গাধর তিলকের প্রসঙ্গও রাখতে চেয়েছিলেন রণদীপ।
রণদীপের এত নির্দেশ মানতে মানতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন মহেশ। তাই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরিচালনার দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি ছবির প্রযোজনা এবং পরিচালনার দায়িত্ব নেন রণদীপ। ‘স্বতন্ত্র বীর সাভরকর’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনার জগতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন রণদীপ।
বর্তমানে রণদীপের ছবি নিয়ে আইনি মামলা চলছে। প্রযোজক সন্দীপ সিংহ এবং রণদীপ দু’জনেই ‘স্বতন্ত্র বীর সাভরকর’ ছবির স্বত্ব দাবি করেছেন।
চলতি বছরে ‘স্বতন্ত্র বীর সাভরকর’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। রণদীপের উদ্দেশে মহেশ বলেন, ‘‘রণদীপের কাজের প্রতি কৌতূহলের জন্য আমি ওঁকে ১০০তে ১০০ দিতে রাজি। কিন্তু ওঁর প্রতিটি বিষয়ে মাথা ঘামানো আমার অপছন্দের ছিল। তবে আমি জানি উনি দুর্দান্ত ছবি বানিয়েছেন।’’