রেখা থেকে শ্রীদেবী, শাহিদ কপূর থেকে আলিয়া ভট্ট— বলিপাড়ার এই তারকারা তাঁদের অভিনয়গুণে সর্বদাই মুগ্ধ করেছেন দর্শককে। তবে সকল তারকাই যে বড় হওয়ার পর অভিনয়জগতে আত্মপ্রকাশ করেছেন তা নয়, শিশু বয়স থেকেই বড় পর্দার সঙ্গে পরিচিত একাধিক তারকা। বলি তারকাদের এই তালিকায় আর কে কে রয়েছেন জানেন কি?
বলিউডের খ্যাতনামী কপূর পরিবারে জন্ম শশী কপূরের। বাবা পৃথ্বীরাজ কপূর এবং দুই দাদা রাজ কপূর এবং শম্মি কপূর— তিন জনেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। বাবা এবং দাদাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে নামেন শশী।
ছোটবেলা থেকেই বাবার হাত ধরে থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন শশী। চল্লিশের দশকের শেষের দিকে বড় পর্দায় শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
১৯৪৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগ’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন শশী। তবে নিজের নামে নয়, শশীরাজ নাম ব্যবহার করে অভিনয় শুরু করেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, সে সময় শশী নামে এক জন শিশু অভিনেতা ছিলেন যিনি সাধারণত পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি গড়ে তোলেন।
‘আগ’-এর পর ‘আওয়ারা’, ‘সংগ্রাম’ এবং ‘দাওয়া পানি’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেন শশী। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত মোট চারটি হিন্দি ছবিতে শিশু অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায় শশীকে।
কপূর পরিবারের পুত্র ঋষি কপূরও শিশু অভিনেতা হিসাবে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা রাজ কপূরের ছবি ‘শ্রী ৪২০’-এ শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম অভিনয় করেন ঋষি। ১৯৫৫ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সেই ছবি। ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ঋষিকে।
১৯৭০ সালে রাজ কপূরের পরিচালনা এবং প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘মেরা নাম জোকার’। মুক্তির পর এই ছবি বিশ্বজোড়া প্রশংসাও পায়। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন রাজ নিজেই। রাজের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন রাজেন্দ্র কুমার, মনোজ কুমার, ধর্মেন্দ্র, পদ্মিনী, সিমি গারেওয়াল প্রমুখ।
‘মেরা নাম জোকার’ ছবিতে রাজু চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রাজকে। রাজু চরিত্রের ছেলেবেলার মুহূর্তগুলি বড় পর্দায় শিশু অভিনেতা হিসাবে নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেন ঋষি। এই ছবিতে অভিনয় করে বহুল প্রশংসা কুড়োন তিনি।
সত্তরের দশক থেকে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন রেখা। তবে মাত্র এক বছর বয়সেই তাঁকে বড় পর্দায় দেখা যায় তা জানেন কি?
১৯৫৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইন্টি গুট্টু’ নামের একটি তেলুগু ভাষার ছবিতে মাত্র এক বছর বয়সে ছোট্ট একটি চরিত্রে দেখা যায় রেখাকে।
কম বয়সেই অভিনয়ে পা রাখেন রেখা। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারণে নাকি ১৩-১৪ বছর বয়সেই পড়াশোনায় ইতি টানেন তিনি। তার পর বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন।
১৯৬৬ সালে শিশু অভিনেতা হিসাবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন ঋষি কপূরের স্ত্রী নীতু কপূর। ১৯৬৬ সালে ‘সূরজ’ নামের ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন নীতু। তার পর ‘দশ লাখ’, ‘ওয়ারিস’ এবং ‘দো কলিয়া’র মতো একাধিক ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করতে দেখা যায় নীতুকে।
চার বছর বয়স থেকে দক্ষিণী ফিল্মজগতে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন শ্রীদেবী। ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কন্ধন কারুনাই’ নামের তামিল ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ‘পুমপাত্তা’ নামের মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করে সেরা শিশু অভিনেতার পুরস্কারও পান তিনি।
‘জানে তু... ইয়া জানে না’, ‘লাক’, ‘আই হেট লভ স্টোরিজ়’, ‘কিডন্যাপ’, ‘ব্রেক কে বাদ’, ‘দিল্লি বেলি’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ইমরান খান। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাট্টি বাট্টি’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
যদিও বর্তমানে অভিনয়জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন ইমরান। শিশু অভিনেতা হিসাবে বলিউডে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনিও।
সম্পর্কে বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খানের বোনপো হন ইমরান। ছোট থেকেই আমিরের অভিনয়ের ভক্ত ছিলেন তিনি। আমিরের ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয়ও করেন তিনি।
বড় পর্দায় আমিরের শৈশবের চরিত্রগুলিকে নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলেন ইমরান। ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ এবং ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবিতে শিশু অভিনেতার ভূমিকায় দেখা যায় ইমরানকে।
সাম্প্রতিক কালে উপার্জনের নিরিখে বলিপাড়ার অভিনেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন শাহিদ কপূর। শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনিও।
১৫ বছর বয়স থেকে নৃত্যে পারদর্শী হয়ে ওঠেন শাহিদ। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ এবং ‘তাল’ ছবিতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার’ হিসাবে দেখা যায় তাঁকে।
বলিপাড়ার খ্যাতনামী ছবিনির্মাতা রাকেশ রোশনের পুত্র হৃতিক রোশন। ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করলেও শিশু অভিনেতা হিসাবেও অভিনয় করেন তিনি।
মাত্র ছয় বছর বয়সে ‘আশা’ নামের ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করেন হৃতিক। তা ছাড়া রাকেশের একাধিক ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
বলিপাড়ার অভিনেত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছেন বলিউডের ছবি নির্মাতার কন্যা আলিয়া ভট্ট। ‘হার্ট অফ স্টোন’ ছবির মাধ্যমে হলিউডেও পা রেখেছেন তিনি।
শিশু অভিনেতা হিসাবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন আলিয়া। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ‘সংঘর্ষ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
বলিপাড়ার কৌতুকাভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম কুণাল খেমু। ‘গুল গুলশন গুলফাম’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকে শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তা ছাড়া ‘স্যর’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘জখ্ম’, ‘ভাই’, ‘হম হ্যায় রাহি প্যার কে’ এবং ‘দুশমন’ ছবিতেও শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয়ের সুযোগ পান কুণাল।
১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিআর চোপড়ার পরিচালনায় ‘কর্ম’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন উর্মিলা মাতন্ডকর। ‘কালযুগ’, ‘মাসুম’, ‘ভাবনা’, ‘সুর সঙ্গম’, ‘ডাকাইত’ ছবিতেও শিশু অভিনেতা হিসাবে দেখা যায় উর্মিলাকে।
বলিপাড়ায় কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আফতাব শিবদাসানি। শিশু অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন তিনিও। টেলিভিশনের একাধিক বিজ্ঞাপনে শৈশবে অভিনয় করেন আফতাব।
১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে প্রথম অভিনয় আফতাবের। তার পর ‘চালবাজ’, ‘ইনসানিয়ত’ এবং ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।