বলিউডের তারকাদের পাশাপাশি তাঁদের জীবনসঙ্গীরাও আলোর রোশনাইয়ে ধরা পড়েন। তাঁদের জীবনসঙ্গীদের কেউ কেউ অভিনয়জগৎ থেকে শতহস্ত দূরে, তো কেউ আবার বলিজগতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, করিনা কপূর খান এবং বিপাশা বসুর মতো বলিপাড়ার এমন বহু অভিনেত্রী রয়েছেন যাঁরা তাঁদের সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন।
অভিনেত্রীদের তালিকায় প্রথমেই আসে হেমা মালিনীর নাম। এক দিকে বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’, অন্য দিকে বলিউডের ‘হিম্যান’ ধর্মেন্দ্র। ‘তুম হসীন মে জওয়ান’ ছবির সেটে আলাপের পর একে অপরকে মন দিয়ে বসেন দুই তারকা।
হেমার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন বিবাহিত ছিলেন ধর্মেন্দ্র। দুই পুত্রসন্তানও ছিল অভিনেতার। তবে স্ত্রী প্রকাশ কউরকে বিচ্ছেদ দেননি তিনি। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে হেমাকে বিয়ে করেন ধর্মেন্দ্র।
১৯৭৯ সালে ২১ অগস্ট হেমার সঙ্গে বিয়ে হয় ধর্মেন্দ্রের। বিয়ের পর দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন হেমা।
১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জেহরিলা ইনসান’ ছবির সেটে প্রথম আলাপ হয় ঋষি কপূর এবং নীতু সিংহের। ১৪ বছর বয়সেই ঋষির প্রেমে পড়েন নীতু। ঋষি সেই সময় বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেতা এবং নীতু নবাগতা অভিনেত্রী।
ঋষি এবং নীতুর বয়সের পার্থক্যের জন্য কটাক্ষের শিকার হন দুই তারকা। এমনকি নীতুর মা-ও তাঁদের বিয়েতে আপত্তি জানান। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ১৯৮০ সালে ঋষির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন নীতু।
বলিপাড়ায় অমিতাভ বচ্চন এবং জয়া বচ্চনের প্রেমকাহিনিও কোনও ছবির গল্পের চেয়ে কম নয়। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জঞ্জীর’ ছবির সেটে প্রেমের কাহিনি বুনট বাঁধতে থাকে অমিতাভ এবং জয়ার। দুই তারকা ভেবেছিলেন, তাঁদের ছবি বক্স অফিসে হিট করলে তাঁরা একসঙ্গে লন্ডন বেড়াতে যাবেন ছবির সাফল্য এবং তাঁদের সম্পর্ক উদ্যাপনের জন্য।
মুক্তির পর ‘জঞ্জীর’ বক্স অফিস থেকে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। ছবির সাফল্য দেখে অমিতাভ এবং জয়া দু’জনেই লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু এই ঘটনা জানতে পেরে যান অমিতাভের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। অমিতাভ এবং জয়ার লন্ডন যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান হরিবংশ।
হরিবংশ জানান, অমিতাভ এবং জয়া লন্ডন যেতে পারবেন একটাই শর্তে। যদি তাঁরা বিয়ে করেন তবেই তাঁরা লন্ডন ভ্রমণে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। হরিবংশের কথায় রাজি হয়ে যান দুই তারকা।
১৯৭৩ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন অমিতাভ এবং জয়া। বিয়ের পর আর দেরি করেননি দু’জনের কেউই। সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন পাড়ি দেন নবদম্পতি।
অমিতাভের পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের আলাপ হয় ছবির সেটেই। ‘ঢাই অক্ষর প্রেম কে’, ‘কুছ না কহো’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন ঐশ্বর্যা এবং অভিষেক। কিন্তু সেই সময় তাঁদের মধ্যে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে নয়া মোড় আসে।
২০০৬ সালে ‘গুরু’, ‘উমরাও জান’ এবং ‘ধুম ২’— এই তিনটি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান ঐশ্বর্যা এবং অভিষেক। বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে কাটানোর ফলে তাঁদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়। একে অপরকে ভালবেসে ফেলেন তাঁরা। ২০০৭ সালে সহ-অভিনেতা অভিষেকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ঐশ্বর্যা।
অজয় দেবগন এবং কাজলের জুটি নব্বইয়ের দশকে যেমন দর্শকের মন কেড়েছিল ঠিক তেমন বড় পর্দার পিছনেও তাঁদের জুটি সকলের প্রিয়। ১৯৯৫ সালে ‘হলচল’ ছবির সেটে দেখা হয় অজয় এবং কাজলের।
‘হলচল’ ছবির সেটের পরিচয় প্রেমে গড়াতে বেশি সময় নেয়নি অজয় এবং কাজলের। টানা চার বছর সম্পর্কেও ছিলেন তাঁরা। ১৯৯৯ সালে কাজলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কাজল।
২০০৩ সালে ‘তুঝে মেরি কসম’ ছবির ‘টেস্ট শুট’-এর সময় জেনেলিয়া দেশমুখের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় রীতেশ দেশমুখের। মহারাষ্ট্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের পুত্র রীতেশ।
প্রথম আলাপে রীতেশকে পছন্দ হয়নি জেনেলিয়ার। কিন্তু রীতেশের সঙ্গে সময় কাটানোর পর ভুল ভাঙে অভিনেত্রীর। সহ-অভিনেতা রীতেশের প্রেমে পড়ে যান জেনেলিয়া।
২০১২ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন জেনেলিয়া এবং রীতেশ। একই বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘তেরে নাল লভ হো গয়া’ ছবিটি। বড় পর্দায় তাঁদের জুটি পছন্দ করেন দর্শক।
করিনা কপূর খান এবং শাহিদ কপূরের প্রেম-বিচ্ছেদ সম্পর্কে বলিপাড়ায় কে না জানে! শাহিদের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার পর ‘টশন’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এই ছবির নায়ক ছিলেন অক্ষয় কুমার এবং সইফ আলি খান।
অন্য দিকে, বিবাহবিচ্ছেদের পর ‘টশন’ ছবির শুটিং করতে যান সইফ। কেরল, লাদাখ, রাজস্থান এবং গ্রিসের মতো একাধিক জায়গায় শুটিং হয়েছিল এই ছবির। সইফ এবং করিনা শুটিংয়ের ফাঁকে অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটাতেন বলে কানাঘুষো শোনা যায়। সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন দুই তারকা।
টানা চার বছর সম্পর্কে থাকার পর সইফের সঙ্গে ২০১২ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন করিনা। বিয়ের পর দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন করিনা।
বলিউডের ‘মাঙ্কি কাপল’ হিসাবে পরিচিত বিপাশা বসু এবং কর্ণ সিংহ গ্রোভার। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অ্যালোন’ ছবির সেটে কর্ণের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় বিপাশার। প্রথম আলাপেই কর্ণকে ভাল লেগে যায় বিপাশার।
সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন বিপাশা এবং কর্ণ। ২০১৬ সালে নিজের সহ-অভিনেতা কর্ণকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী। এমনকি তাঁদের বিয়েও বলিপাড়ায় ‘মাঙ্কি ওয়েডিং’ নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিয়ের ছ’বছর পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন বিপাশা।