টিনসেল নগরীর আলোর রোশনাইয়ের সামনে বলিউড তারকাদের যশ-খ্যাতি-বিলাসবহুল জীবন দেখে পর্দার এ পার থেকে ভাল লাগলেও বলিজগতেরও অন্ধকার দিক রয়েছে। বলিউডের বিভিন্ন নামী অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাঝেমধ্যেই এই অন্ধকার দিক নিয়ে সরব হয়েছেন। কখনও কোনও সাক্ষাৎকারে অথবা কখনও নিজের ছবির প্রচারে এসে বলিউডের কপটতা নিয়ে জনসমক্ষে মুখ খুলেছেন।
বিদ্যা বালন বলিউডের নায়িকাদের মধ্যে উপার্জনের তালিকায় এগিয়ে থাকলেও বলি ইন্ডাস্ট্রি থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল নয়। বলিউডের অধিকাংশই অভিনেত্রীর ওজন নিয়ে খারাপ মন্তব্য করতেন। ওজন বেশি হওয়ার কারণে তাঁকে দেখতে খারাপ লাগে বলতেন অনেকেই।
অভিনেত্রী জানান, তিনি এক সময়ে এই মন্তব্যগুলি শুনে শুনে মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিলেন। বলিপাড়া তাঁকে ‘ফ্যাট শেমিং’ করত বলেও দাবি করেন বিদ্যা।
এই প্রসঙ্গে সরব হন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাসও। তিনি জানান, ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর তিনি রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। বলিপাড়ায় অভিনয় করার সুযোগ পেতে হলে মেয়েদের সুন্দর চুল থাকা চাই, গায়ের রং ফর্সা হওয়া চাই, এমন সব কথাই বলা হত তাঁকে। তিনি নাকি নিজের গায়ের রং নিয়ে জনসমক্ষে আসতে দ্বিধাবোধ করতেন।
প্রিয়ঙ্কার মতে, তিনি কোনও রকম ‘সাইজ জিরো’তে বিশ্বাসী নন। রোগা হওয়ার জন্য খাওয়াদাওয়া বন্ধ করাতেও বিশ্বাসী নন তিনি। সব মহিলারই উচিত নিজের শরীরের গড়ন মেনে নেওয়া, নিজের শরীরকে ভালবাসা।
অনুষ্কা শর্মা এক সাক্ষাৎকারে জানান, বয়স বাড়ার পরেও বলিউডজগতে অভিনেতারা ঠিক কাজের সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু অভিনেত্রীদের বয়স বাড়লেই তাঁদের কাজ কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে তাঁদের রূপের জেল্লা কমে যায় বলেই এই প্রচলন চলে আসছে বলে জানান তিনি।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এক সাক্ষাৎকারে জানান, বলিউডে স্বজনপোষনের থেকেও গায়ের রং নিয়ে সমস্যা অনেক বেশি। উচ্চতায় বেশি লম্বা নন অভিনেতা। তার উপর তাঁর গায়ের রংও চাপা।
অভিনেতা জানান, এই দুই কারণের জন্য তিনি বলিউডে বহু বছর ধরে সংঘর্ষ করে এসেছেন। অনেকেই তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। গায়ের রং এবং কম উচ্চতার জন্য তাঁকে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একই প্রসঙ্গ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন সীমা পাহওয়া। তিনি বলেন, ‘‘দেখতে খারাপ হওয়ায় কোনও কাজ পেতাম না। কাজের লোক অথবা ছোটখাটো কোনও চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হত যেখানে আমি খালি চা-কফি পরিবেশন করে চলে আসতাম। এটুকুই পর্দার সামনে আমার অভিনয় ছিল।’’
পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেও বলিপাড়ায় ভেদাভেদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনম কপূর অহুজা। সোনম যখন এই নিয়ে প্রযোজকের কাছে প্রশ্ন তোলেন তখন তাঁকে বলা হয়,‘‘কম পারিশ্রমিকে তোমার কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তোমার পরিবারের সকলে তোমাকে আর্থিক দিক দিয়ে সাহায্য করবেনই।’’
সোনম এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে প্রযোজকেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সমান পারিশ্রমিক দেন না, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চান না তিনি।
তাপসী পান্নু এক সাক্ষাৎকারে জানান, অভিনেত্রীদের তালিকায় উপরের দিকে তাঁর নাম না থাকায় তাঁকে বেশি কাজ দেওয়া হয় না। কাজের কোনও সুযোগ এলেও কিছু দিন পর তিনি জানতে পারেন, অন্য কোনও অভিনেত্রীকে সেই ছবির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
রাধিকা মদন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সদ্য পা রেখেছেন। এর মধ্যে বলিপাড়ার অন্ধকার দিক সম্পর্কে অবগত হয়েছেন অভিনেত্রী। তিনি জানান, বলিউডে সাংঘাতিক পরিমাণে স্বজনপোষণ করা হয়। প্রথম দিকে তিনি যেমন কাজ পাচ্ছিলেন তাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
ছবির জন্য অডিশন দিতে গিয়ে রাধিকাকে এমনও শুনতে হয়েছে যে, ২০ বছর বয়স হলেও তিনি সুন্দরী নন। এই ধরনের কথা শোনার পর তাঁর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যেত বলেও জানান তিনি।
পারিশ্রমিকের ভেদাভেদ প্রসঙ্গে একমত দীপিকা পাড়ুকোনও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ছবিতে যে অভিনেতা কাজ করছিলেন, তাঁর থেকে দীপিকাকে কম বেতন দেওয়া হচ্ছিল শুনে তিনি সেই ছবিতে আর কাজই করেননি।
অভয় দেওল এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে বলেছেন, বলিউডে ‘লবি কালচার’ চলছে। বহু বছর ধরেই এই ‘প্রথা’ চলে আসছে ইন্ডাস্ট্রিতে। কেউ কোনও দিনও এর বিরোধিতা করেননি। এই প্রথা বলিউডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেও জানান অভিনেতা।