নব্বইয়ের দশক থেকে হিন্দি ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। বলিপাড়ার সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের তালিকায় এক সময় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই হিন্দি ফিল্মজগৎ থেকে লম্বা বিরতি নেন রবিনা টন্ডন। বলি অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিচ্ছেদ নিয়ে তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়েছে নানা বিতর্কও।
নব্বইয়ের দশকে বড় পর্দায় অক্ষয় কুমারের সঙ্গে রবিনার জু়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পর্দার পিছনেও তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯৪ সালে ‘মোহরা’ ছবিটি মুক্তির পরেই নাকি অক্ষয় এবং রবিনা সম্পর্কে আসেন।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, অক্ষয় এবং রবিনা নাকি গোপনে আংটিবদলও করে ফেলেন। অভিনেতাকে বিয়ে করে সংসার সামলাবেন বলে নাকি নতুন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন রবিনা। কিন্তু সাত পাকে বাঁধা পড়েননি দুই তারকা।
২০০১ সালে বলি অভিনেত্রী টুইঙ্কল খন্নাকে বিয়ে করেন অক্ষয়। অন্য দিকে অক্ষয়ের বিয়ের তিন বছর পর গাঁটছড়া বাঁধেন রবিনা।
২০০৪ সালে অনিল থাডানিকে বিয়ে করেন রবিনা। পেশায় চিত্র পরিবেশক অনিল। বিয়ের পর দুই সন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২১ বছর বয়সে দুই সন্তানকে দত্তক নেন রবিনা। তবে অভিনেত্রীর প্রাক্তন সম্পর্ককে ঘিরে বিতর্কের প্রভাব আছড়ে পড়ে তাঁর দুই দত্তক সন্তানের উপর। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন রবিনা।
সাক্ষাৎকারে রবিনা জানান, অক্ষয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাঁকে নিয়ে নানা গুজব ছড়ায়। এমনকি তাঁর দুই দত্তক কন্যাকে নিয়েও অসত্য কথা রটানো হয়েছে। বলি অভিনেতার সঙ্গে প্রাক্তন সম্পর্ক নিয়েও মুখ খোলেন তিনি।
রবিনা বলেন, ‘‘অক্ষয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নাকি আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বিচ্ছেদের পরেই নাকি আমি দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এই কথাগুলো স্রেফ মিথ্যা।’’
রবিনার কথায়, ‘‘আমার মনে হয়েছিল পূজা এবং ছায়াকে (রবিনার দত্তক নেওয়া দুই কন্যাসন্তান) আমি ভাল ভাবে বাঁচার সুযোগ দিতে পারব। ওদের যত্নে বড় করতে পারব। তাই ২১ বছর বয়সে ওদের দত্তক নিই আমি।’’
রবিনার পাশাপাশি তাঁর দুই দত্তক কন্যাকে সামলানোর দায়িত্ব পালন করেছেন অভিনেত্রীর বাবা-মাও। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তিনি।
প্রাক্তন সম্পর্ক নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘‘দু’জন মানুষ ভাল জীবনসঙ্গী না হতে পারলে কি ভাল বন্ধুও হতে পারে না? বিচ্ছেদের পর প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখাই যায়। আমাকে নিয়ে কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব আমায় নিয়ে কী ভাবছে আমি শুধুমাত্র তা নিয়েই চিন্তা করি।’’
রবিনার দাবি, অক্ষয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাঁকে নিয়ে এমন গুজব রটেছিল, যা দেখে তিনি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘তখন পত্রিকায় তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে লেখা হত। তার মধ্যে কতখানি অসত্য মেশানো রয়েছে তা কেউ জানতে পারতেন না। পত্রিকার পাঠকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নানা রকম চর্চা করা হত।’’
ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে সন্তানদের থেকে কিছুই গোপন করেননি রবিনা। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে নিয়ে নানা রকম কথা লেখা হত। কিন্তু আমি আমার সন্তানদের নিজের ব্যাপারে সব সত্যি কথা বলেছি। কোনও কথা গোপন করিনি।’’
রবিনা জানান, পূজা এবং ছায়াকে দত্তক নেওয়ার আগে তারা রবিনার বাড়ির কাছেই থাকত। কিন্তু দু’জনের সঙ্গে ভাল আচরণ করা হত না। রবিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বয়স হলে তাদের দু’জনকে ওই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন। তাই দু’জনকে দত্তক নেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় পা রাখেন রবিনা। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পত্থর কে ফুল’ ছবির হাত ধরে অভিনয় শুরু তাঁর। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে সলমন খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তিনি।
‘মোহরা’, ‘দিলওয়ালে’, ‘লাডলা’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’, ‘দুলহে রাজা’র মতো একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ার সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের তালিকায়ও নাম লিখিয়ে ফেলেন তিনি।
বছর দুয়েক আগে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশ করেছেন রবিনা। ২০২১ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আরণ্যক’ ওয়েব সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে ওটিটির পর্দায় পা রাখেন অভিনেত্রী।
২০২২ সালে ‘কেজিএফ’ ছবির দ্বিতীয় পর্বে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন রবিনা। চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কর্মা কলিং’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘পটনা শুক্ল’ নামের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এই ছবিতেও মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছেন রবিনা।