জলখাবারের টেবিল থেকে যে টুকটাক আলাপচারিতা শুরু হয়েছিল তা যেন পূর্ণতা পেল। নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু বল তাঁদের। সারা জীবন একসঙ্গে পথচলা শুরু করলেন বলি অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া এবং আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চড্ডা। সোমবার সমাজমাধ্যমে নিজেদের বিয়ের ছবি পোস্ট করে নতুন জীবন শুরুর কথা ঘোষণা করলেন তাঁরা।
রবিবার রাজস্থানের উদয়পুরে লেক পিচোলার ধারে চারহাত এক হল পরিণীতি এবং রাঘবের। জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনার পথে অভিনেত্রী, কিন্তু সমাজমাধ্যমে কোনও ছবি নেই। নবদম্পতিকে বিয়ের সাজে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন অনুরাগীরা। অবশেষে বিয়ের পরের দিন সমাজমাধ্যমে নিজেই বিয়ের ছবি পোস্ট করলেন পরিণীতি।
পরিণীতির বিয়ের পোশাক তৈরি করেছিলেন জনপ্রিয় পোশাকশিল্পী মণীশ মলহোত্র। তাঁর পরনে সোনালি-আইভরি রঙের লেহঙ্গা। লেহঙ্গা জুড়ে সিরোস্কি স্টোনের কারুকাজ। গলায় হিরে, পান্না এবং অন্যান্য পোলকি পাথরের কারুকাজ করা চওড়া নেকপিস। মাথায় স্টোনের টিকলি। কানে কানপাশা।
তবে পরিণীতির বিয়ের সাজে বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে সোনালি ভেইলের পিছনে দেবনাগরী হরফে লেখা ‘রাঘব’-এর নাম। মণীশ জানিয়েছেন, এই ওড়নার কারুকাজ পুরোটাই হাতে করা। ‘বদলা’ কারুকাজ দিয়ে বোনা হয়েছে রাঘবের নাম।
পরিণীতির দিদি প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার অনুপ্রেরণা থেকেই জীবনসঙ্গীর নাম বোনা ভেলের অবতারণা বলে বলিপাড়ার একাংশের অনুমান। নিজের ‘হোয়াইট ওয়েডিং’-এর জন্য নিক জোনাসের নাম লেখা ভেল পরেছিলেন প্রিয়ঙ্কা।
রাঘব সেজেছেন পোশাকশিল্পী পবন সচদেবের পোশাকে। তাঁর পরনে সাদা শেরওয়ানি। মাথায় সোনালি পাগড়ি, কাঁধে ওড়না এবং গলায় মোতির মালা। রাঘবের বিয়ের সাজ ছিমছাম হলেও তার মধ্যে ধরা দিয়েছে আভিজাত্য।
বিয়ে উপলক্ষে গত সপ্তাহের প্রথম দিকে মুম্বই থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন পরিণীতি। দিল্লিতে রাঘবের বাড়িতে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল একটি ক্রিকেট ম্যাচও। ক্রিকেটের মাঠে মুখোমুখি হয়েছিলেন চোপড়া ও চড্ডা পরিবারের সদস্যেরা।
দিল্লিতে রাঘবের বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছিল সুফি গানের অনুষ্ঠানও। পরিণীতি এবং রাঘবের বাগ্দানের মতো বিয়ের অনুষ্ঠানের আগেও দুই পরিবারের তরফে আরদাস ও কীর্তনের আয়োজন করা হয়েছিল।
শুক্রবার সকালে রাজস্থানের উদয়পুরে যান পরিণীতি এবং রাঘব। শনিবার দুপুরে সেখানকার এক বিলাসবহুল হোটেলে ‘ওয়েলকাম লাঞ্চ’-এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল পরিণীতি এবং রাঘবের বিয়ের অনুষ্ঠান।
‘ওয়েলকাম লাঞ্চ’-এর পর গায়েহলুদ, সঙ্গীত ও মেহেন্দির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাঘব এবং পরিণীতির সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন গায়ক নবরাজ হংস। সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের জন্য নব্বইয়ের দশকের নস্টালজিয়া জড়ানো থিম পার্টির আয়োজন করেছিলেন হবু দম্পতি।
পরিণীতি এবং রাঘবের সঙ্গীতের পার্টিতে ছিল ম্যাগি ও ক্যান্ডি ফ্লসের কাউন্টার। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য উপহারে ছিল গানের ক্যাসেট। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই ক্যাসেটের ‘প্লেলিস্ট’ বা গানের তালিকা তৈরি করেছিলেন অভিনেত্রী নিজেই।
উদয়পুরের তাজ লীলা প্যালেসে আয়োজন হয়েছিল পরিণীতি এবং রাঘবের বিয়ের। লেক প্যালেস থেকে নৌকোয় চড়ে পরিণীতিকে বিয়ে করতে যান রাঘব।
রাঘবের তরফে বরযাত্রীর দলে উপস্থিত ছিলেন নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল,পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মানের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অতিথিদের তালিকায় ছিলেন শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরেও।
রাজনীতিকদের পাশাপাশি পরিণীতি এবং রাঘবের বিয়েতে বলিউডের তরফে উপস্থিত ছিলেন পোশাকশিল্পী মণীশ মলহোত্র। প্রিয় বন্ধু পরিণীতির বিয়েতে হাজির ছিলেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জ়া।
তবে পরিণীতির বিয়েতে দেখা গেল না তাঁর দিদি প্রিয়ঙ্কাকে। উপস্থিত ছিলেন না প্রিয়ঙ্কার স্বামী নিক জোনাস অথবা জোনাস পরিবারের কোনও সদস্য। তবে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়ঙ্কার মা মধু চোপড়া।
বোন পরিণীতির বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রিয়ঙ্কা কেন হাজির থাকতে পারেননি তার নেপথ্যকারণ জানান মধু। মধু জানান, প্রিয়ঙ্কা বর্তমানে তাঁর কাজকর্ম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে পরিণীতির বিয়েতে আসার জন্য সময় বার করতে পারেননি। যদিও সমাজমাধ্যমে বোনকে নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি প্রিয়ঙ্কা।
মধু আরও জানান, পরিণীতি এবং রাঘব তাঁদের বিয়ে উপলক্ষে কোনও উপহার গ্রহণ করেননি। তাই নবদম্পতিকে বুকভরা ভালবাসা এবং আশীর্বাদ দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কার মা।
গোধূলিবেলায় ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র ‘কবীরা’ গানে বিদায় হল নববধূ পরিণীতির। বিয়ের পর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাজ লীলা প্যালেসে নবদম্পতির রিসেপশন পার্টি হয়। সেই পার্টিতে নববধূর পরনে ছিল গোলাপি শাড়ি, রাঘব পরেছিলেন কালো টাক্সিডো।
চলতি বছরের ১৩ মে নয়াদিল্লির কপূরথলা হাউসে রাঘবের সঙ্গে বাগ্দান সেরেছিলেন পরিণীতি। চার মাস পর নতুন জীবনের সূচনা করলেন নবদম্পতি।