নব্বইয়ের দশকে ডাকসাইটে সুন্দরী অভিনেত্রীদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন মাধুরী দীক্ষিত। অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি নাচেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে বেশি সময় নিতে হয়নি মাধুরীকে।
মাঝেমধ্যে শ্রীদেবীর সঙ্গেও তুলনা করা হত মাধুরীকে। দর্শকের একাংশ মনে করতেন, নাচে এবং অভিনয়ে শ্রীদেবীকে টক্কর দিতে পারেন একমাত্র মাধুরী। কিন্তু রাতারাতি নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলতে পারেননি অভিনেত্রী।
আশির দশকে বলিপাড়ায় পা রাখেন মাধুরী। ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অবোধ’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে বাঙালি অভিনেতা তাপস পালের বিপরীতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
মাধুরীর অভিনয়ের প্রশংসা হলেও বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়। কেরিয়ারের প্রথম চার বছর একের পর এক ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় মাধুরীকে। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তাঁর কাছে আসে এক সুবর্ণ সুযোগ। বিনোদ খন্নার বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি। কেরিয়ার গড়তে ২০ বছরের বড় এক অভিনেতাকে চুমু খেতে হয় তাঁকে। করতে হয় অন্তরঙ্গ দৃশ্য।
ফিরোজ খানের পরিচালনায় এবং প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘দয়াবান’ ছবিটি। এই ছবির মুখ্য চরিত্রে দেখা যায় বিনোদ খন্না এবং মাধুরীকে। ফিরোজ নিজেও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, নায়িকার চরিত্রে ফিরোজের প্রথম পছন্দ ছিলেন না মাধুরী। বরং বিনোদের বিপরীতে শ্রীদেবীকেই পছন্দ করেছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর কাছে সেই প্রস্তাব নিয়েও যান তিনি।
শ্রীদেবী অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার পর মুশকিলে পড়েন ফিরোজ। তার পর মাধুরীকে প্রস্তাব দেন ফিরোজ। পরিচালকের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান তিনি।
শ্রীদেবীকে যে চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেই চরিত্রে এক নবাগতা অভিনেত্রী কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন শুনেই মাধুরীর সঙ্গে শ্রীদেবীর তুলনা হওয়া শুরু হয়ে যায়। তবে, এই ছবিতে অভিনয়ের খাতিরে নিজের চেয়ে বয়সে ২০ বছরের বড় নায়ককে চুমু খেয়েছিলেন মাধুরী।
বিনোদকেই চুমু খেয়েছিলেন মাধুরী। এমনকি, এই ঘটনার জন্য বহু বছর আক্ষেপও করেছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে মাধুরী জানিয়েছিলেন, এই ঘটনার পর পর্দায় কোনও অভিনেতার সঙ্গেই আর চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করেননি তিনি।
আসলে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে বিনোদের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে হয় মাধুরীকে। সেই দৃশ্যেই পর্দার সামনে দুই তারকা চুম্বন করেন। ছবিতে সেই দৃশ্যটি রাখাও হয়।
তবে ছবি মুক্তি পাওয়ার পর শুরু হয় ঝামেলা। মাধুরীকে নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক এবং সমালোচনা। আশির দশকে পর্দায় এমন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করা নায়িকাদের জন্য সহজ ছিল না। মাধুরীর অভিনয় ভাল লাগলেও এই দৃশ্যটি নিয়ে দর্শকমহলে আলোচনা চলতে থাকে।
মাধুরী এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার পরিবারের কেউ ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তাই আমি কিছুই জানতাম না। তখনকার দিনে এ গ্রেড ছবির নায়িকারা যে চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করতেন না, তা জানতাম না আমি।’’
মাধুরী জানান, এর পর বলিপাড়ায় চর্চা শুরু হয়ে যায় যে, নিজের থেকে ২০ বছরের বড় অভিনেতাকে পর্দায় চুমু খেয়েছেন এক নবাগতা নায়িকা। খবরের শিরোনামে এসে যান মাধুরী।
মাধুরী সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মুক্তির পর আমি ছবিটি দেখেছিলাম। চুম্বনের দৃশ্যটি যে ছবিতে বিরাট কোনও পরিবর্তন এনেছিল তা মনে হয়নি আমার। ওই দৃশ্য বাদ দিলেও চলত। এই কাজ করার জন্য এখনও আফসোস করি।’’
‘দয়াবান’ ছবি মুক্তির পর মাধুরী সিদ্ধান্ত নেন, এর পর থেকে পর্দায় কোনও অভিনেতাকে চুমু খাবেন না তিনি। এখনও পর্যম্ত মাধুরী নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে তার পর তিন দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন মাধুরী। ওই সিনেমার পর পর্দায় আর কোনও অভিনেতাকে সরাসরি চুমু খেতে দেখা যায়নি নায়িকাকে। বিনোদই প্রথম এবং শেষ অভিনেতা, যাঁর সঙ্গে চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন মাধুরী।
তবে, ‘দয়াবান’ মুক্তির পর মাধুরীকে নিয়ে হাজারো বিতর্ক এবং সমালোচনা হলেও অভিনয়ের কারণে প্রচারে চলে আসেন তিনি। তার পর মাধুরীকে আর কেরিয়ারে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘দয়াবান’ ছবিটিও ভাল ব্যবসা করে। আর তার পর থেকেই একের পর এক সফল ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান মাধুরী।
বলিপাড়ার একাংশ মনে করে, নিজের কেরিয়ার গড়তেই নাকি মাধুরী চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করে লাইমলাইটে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাধুরীর দাবি, না জেনেশুনে ভুল পদক্ষেপ করে ফেলেছিলেন তিনি এবং তা নিয়ে অভিনেত্রীর আফসোসের অন্ত নেই।