চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৪৩ বছরে পা দিতে চলেছেন বলিউড অভিনেত্রী করিনা কপূর খান। চল্লিশের গণ্ডি পার করে গেলেও তাঁর মেদহীন চেহারা এবং জেল্লাদার ত্বক নিয়ে বলিপাড়ায় প্রশংসার ছড়াছড়ি। কিন্তু কেরিয়ারের শুরুতেই শরীরী গঠন নিয়ে বলিপাড়ার অন্যতম ছবি নির্মাতার কাছে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন কপূর-কন্যা।
২০০০ সালে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন করিনা। বর্ষীয়ান অভিনেতা বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ‘রিফিউজি’ ছবির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন অভিনেত্রী।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে জানা যায়, করিনার কেরিয়ারের প্রথম ছবি হওয়ার কথা ছিল ‘কহো না... প্যার হ্যায়’। বলিউডের প্রথম সারির ছবি নির্মাতা রাকেশ রোশনের পুত্র হৃতিক রোশনের সঙ্গে হিন্দি ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শুটিং শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই ছবি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন করিনা।
‘কহো না...প্যার হ্যায়’ ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সিনেমায় নায়িকার চরিত্রায়ণের চেয়ে নায়কের চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করেছিলেন করিনা। তাই এই ছবিতে অভিনয় করতে আর রাজি হননি তিনি।
দু’দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত করিনা। অভিনয়ের পাশাপাশি ‘জ়িরো ফিগার’-এর জন্যও বারংবার প্রচারে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ারের শুরুর দিকে করিনার ওজন এতটা কম ছিল না। বলিপাড়ার অন্যতম ছবি নির্মাতা আদিত্য চোপড়া অভিনেত্রীর ওজন নিয়ে কটাক্ষও করেছিলেন বলে কানাঘুষো শোনা যায়।
কেরিয়ারের শুরুর দিকে একটি ছবিতে চিত্রনাট্যের প্রয়োজন অনুযায়ী বিকিনি পরা দৃশ্যে অভিনয় করার কথা ছিল করিনার। কথামতো শুটিংও শেষ করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ছবিটি প্রকাশ পেতেই বক্রোক্তি ভেসে আসতে শুরু করে করিনার কানে।
বিকিনি পরা দৃশ্যে করিনাকে একেবারেই বেমানান লাগছে— এমন মন্তব্য করেন আদিত্য। পোশাকের কারণে নয়, বরং বেমানান লাগার নেপথ্যে অভিনেত্রীর ওজনের আধিক্যকে দায়ী করেন আদিত্য।
আদিত্য একাই নন, যশ-পুত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিলেন বলিপাড়ার এক অভিনেতাও। অভিনেতা সইফ আলি খান এবং আদিত্য মন্তব্য করেন, ‘‘করিনা খুব স্বাস্থ্যবতী মহিলা। ওজনও বেশি। ওকে বিকিনি পরে একদম মানাচ্ছে না।’’
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, আদিত্য এবং সইফের মন্তব্য শুনেই নিজের ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন করিনা। ২০০৮ সালে যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘টশন’ ছবিটি। এই ছবিতে সইফ এবং অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল করিনাকে।
‘টশন’ ছবিতে করিনার অন্য রূপ ধরা পড়ে। মেদহীন চেহারায় সাহসী পোশাকে পর্দায় ধরা দিয়েছিলেন তিনি। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর প্রক্রিয়া খুব কঠিন ছিল বলেও জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে করিনা জানান, ওজন কমানোর জন্য তাঁকে কঠিন ডায়েট মেনে চলতে হয়েছিল। শরীরচর্চার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার এমন অভ্যাস রাখা ঠিক নয় বলেও জানান করিনা।
কঠিন ডায়েট ছেড়ে বেরোনোর পর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল বলে পুরনো সাক্ষাৎকারে দাবি করেন অভিনেত্রী। মাথার চুলও পড়তে শুরু করেছিল তাঁর। করিনা জানান, এক বার এই কঠিন ডায়েট ছেড়ে দিলে আবার এক ধাক্কায় ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ‘জ়িরো ফিগার’ তৈরির জন্য যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন তার পর আর অন্য কাউকে একই রাস্তায় হাঁটার পরামর্শ দেন না করিনা।
হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে ধরা হয় কপূর পরিবারকে। ত্রিশের দশক থেকে হিন্দি ছবিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তার পর চল্লিশের দশকে পৃথ্বীরাজের হাত ধরে ‘পৃথ্বী থিয়েটারস’-এর নির্মাণ। একে একে রাজ কপূর, শশী কপূর, শম্মি কপূর, ঋষি কপূর, রণধীর কপূর— সকলেই বংশপরম্পরায় কপূর পরিবারের নাম আলোকিত করেছেন। এই কপূর পরিবারের কন্যা করিনা। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, যদি তারকা কন্যাকেও শরীরী গঠন এবং ওজন নিয়ে কটাক্ষের শিকার হতে হয় তা হলে বহিরাগত অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনাই বেশি।
শুধুমাত্র ওজন নিয়ে নয়, অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কটাক্ষের শিকার হয়েছেন করিনা। বলি অভিনেত্রী টুইঙ্কল খন্নাকে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সেই সম্পর্কে জানান করিনা নিজেই।
করিনা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সব সময় আলোচনা চলত। আমি কেন সইফকে বিয়ে করেছি, আমি কেন একাধিক ছবির প্রস্তাব খারিজ করেছি, আমার পুত্র তৈমুর কবে স্কুলে ভর্তি হবে, বড় হয়ে ও আদৌ অভিনয় করবে কি না তা নিয়ে হাজার হাজার প্রশ্ন।’’
হিন্দি ফিল্মজগতে যখন রানি মুখোপাধ্যায় এবং প্রীতি জ়িন্টা একের পর এক ছবিতে অভিনয় করছিলেন সেই সময় করিনা কেন যশরাজ ফিল্মস এবং ধর্ম প্রোডাকশনসের সঙ্গে কাজ করছিলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল করিনাকে।
করিনা বলেন, ‘‘আমি কেন সইফকে বিয়ে করেছি তা আমি জানি। আমার কেরিয়ারে কখন কী হচ্ছে সমস্তটাই স্পষ্ট আমার কাছে। তাই কেউ যখন আমার ব্যাপারে কোনও ভুলভাল মন্তব্য করতেন, আমার রাগ হত। প্রথম প্রথম আমি লোকজনের ভুল ভাঙাতাম। স্পষ্টবক্তা ছিলাম। এখন নিজেকে শান্ত করতে শিখেছি। নিজেকে বুঝিয়েছি বলিপাড়ায় থাকতে হলে এ সব কিছু নিয়েই থাকতে হবে।’’