১৯৮১ সালে মনোজ কুমারের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তারকাখচিত ছবি ‘ক্রান্তি’। এই ছবিতে দিলীপ কুমার, শত্রুঘ্ন সিন্হা, শশী কপূর, হেমা মালিনী, পরভিন ববি, প্রেম চোপড়ার মতো বলি তারকারা পর্দা ভাগ করে নেন। ৩ কোটি টাকা বাজেটের এই ছবিটি বক্স অফিস থেকে ১৬ কোটি টাকা উপার্জন করে। বক্স অফিস হিট এই ছবিটিকে ঘিরে রয়েছে প্রচুর গল্প।
‘ক্রান্তি’ ছবির শুটিংয়ের সেটে হেমা অভিনয় করতে চাইছিলেন না। সেই কারণে মনোজ শাস্তিও দিয়েছিলেন অভিনেত্রীকে।
‘ক্রান্তি’ ছবি নির্মাণের জন্য সর্বস্ব খরচ করে ফেলেছিলেন মনোজ। তিনি চাইছিলেন তাড়াতাড়ি এবং নিপুণ ভাবে শুটিং শেষ করতে। কিন্তু তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলিপাড়ার ‘ড্রিমগার্ল’ হেমা।
১৯৮০ সালে বলি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন হেমা। বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, হেমার যে দিন বিয়ে হয়, তার ঠিক পরের দিন ‘ক্রান্তি’ ছবির শুটিংয়ের জন্য সেটে যেতে হত অভিনেত্রীকে।
কিন্তু ‘ক্রান্তি’ ছবির সেটে অনুপস্থিত ছিলেন হেমা। এমন ‘অপেশাদার’ আচরণের কারণে অভিনেত্রীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান মনোজ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সে দিন অন্য ছবির শুটিংয়ের কাজে চলে গিয়েছিলেন হেমা।
আসলে ‘ক্রান্তি’ এবং ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবির শুটিং একসঙ্গে করছিলেন হেমা। বিয়ের পরের দিন ‘ক্রান্তি’র সেটে না গিয়ে তিনি পৌঁছে যান ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবির সেটে। এই কথা জানতে পারেন মনোজ।
পরে অবশ্য হেমাকে সরাসরি শুটিংয়ে না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন মনোজ। পরিচালকের প্রশ্নে হেমা জানান, স্বামীর জন্যই তিনি সেটে যাননি।
আসলে ধর্মেন্দ্রকে বিয়ের পরের দিন ‘ক্রান্তি’ ছবির শুটিং ছিল। হেমা জানতে পারেন তাঁকে পরের দিন সাদা রঙের শাড়ি পরে বিধবার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।
বিয়ের পরের দিন বিধবার চরিত্রে অভিনয় করতে চাইছিলেন না হেমা। তাই ‘ক্রান্তি’ ছবির সেটের পরিবর্তে কমল আমরোহি পরিচালিত ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবির শুটিং করতে চলে যান হেমা।
বিধবার চরিত্রে অভিনয় করা ছাড়াও অন্য একটি কারণও ছিল হেমার। ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবিতে হেমার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। বিয়ের পরের দিন ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে সময় কাটাতেও চেয়েছিলেন হেমা।
কিন্তু বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, হেমা যে ‘ক্রান্তি’ ছবির পাশাপাশি অন্য একটি ছবির শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তা মনোজকে জানাননি। ‘ক্রান্তি’ ছবির সেটে আগে পৌঁছে সেখানে তাড়া দিতেন অভিনেত্রী।
বার বার হেমা তাড়া দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে পড়ছিলেন মনোজ। হেমাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন পরিচালক। তাই এক দিন হেমাকে স্রেফ বসিয়ে রেখে দিয়েছিলেন মনোজ।
রাগের বশে ‘ক্রান্তি’ ছবির সেট ছেড়ে বেরিয়ে যান হেমা। সেট থেকে সোজা বাড়ি চলে যান তিনি। পরে অবশ্য মনোজের এমন ব্যবহারের কথা শুনে মনোজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কমল।
কমল জানান, হেমা আসলে ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবির শুটিংও করছেন। কমলের কাছ থেকে সত্য জানতে পেরে হেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মনোজ। মনোজ জানান, পেশাদার হিসাবে হেমার এই কথাটি জানানোর প্রয়োজন ছিল।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, হেমার ধারণা ছিল যে ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবিটি বক্স অফিসে বেশি ব্যবসা করতে পারবে। তাই সেই ছবির জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে চেয়েছিলেন হেমা। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর ‘রাজিয়া সুলতান’ বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি। বদলে ‘ক্রান্তি’ ছবিটিই বক্স অফিসে হিট করে।